বার্তা ডেস্ক :: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোটগ্রহণ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে দেশটির কানাডা সীমান্তের শহর নিউ হ্যাম্পশায়ারের ছোট্ট শহর ডিক্সভিল নচের মাধ্যমে। এই শহরের একটি কেন্দ্রের মোট পাঁচটি ভোটের সবগুলোই পেয়েছেন ডেমোক্র্যাট দলীয় প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জো বাইডেন। দেশটির নির্বাচনী ফল এই রাজ্য থেকে এসেছে; যেখানে বাইডেনের কাছে হেরে গেছেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কিন্তু এবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শেষে কে বিজয়ী হতে যাচ্ছেন তা জানতে কয়েক দিন, এমনকি কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। এ বছর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দেশটির মোট ২৪ কোটি ভোটারের মধ্যে ভোট দেয়ার জন্য নিবন্ধন করেছেন ১৯ কোটি। করোনাভাইরাস মহামারির কারণে এই ভোটারদের মধ্যে ১০ কোটির বেশি ইতোমধ্যে আগাম ভোট দিয়েছেন। এই আগাম ভোটের ফল পেতে বিলম্ব হতে পারে।

কখন জানা যায় ফল?
সাধারণত ৩ নভেম্বরের (মঙ্গলবার) নির্বাচনের রাতেই প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফল জানা যায়। একেক রাজ্যে ভোট শেষ হওয়ার সময় একেক রকম। দেশটিতে প্রথম ভোটগ্রহণ শেষ হবে স্থানীয় সময় মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টায়। নির্বাচনের রাতেই সব ভোট গণনা শেষ করা সম্ভব না হলেও বিজয়ী ঘোষণার মতো সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট কে পেয়েছেন তা মোটামুটি জানা যায়। অধিকাংশ গণমাধ্যম হিসাব-নিকাশ করে কোন প্রার্থী এগিয়ে আছেন তা জানিয়ে দেয়। এ ফল চূড়ান্ত নয়, ধারণা মাত্র। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট সাধারণত জাতীয় ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হন না। তবে রাজ্যগুলোতে জয়ের মাধ্যমে কোনও প্রার্থী ইলেকটোরাল কলেজ প্রতিনিধি বেশি পেলে তিনিই প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। দেশটির প্রত্যেকটি রাজ্যে জনসংখ্যার ভিত্তিতে ইলেকটোরাল কলেজের সংখ্যা নির্ধারিত। মার্কিন সংসদের উচ্চকক্ষ সিনেটের ১০০ জন, প্রতিনিধি পরিষদের ৪৩৫ এবং সাংবিধানিক ক্ষমতাবলে ওয়াশিংটন ডিসির তিনজন প্রতিনিধিসহ দেশটিতে মোট ইলেকটোরাল কলেজ প্রতিনিধির সংখ্যা ৫৩৮। হোয়াইট হাউসে যাওয়ার জন্য একজন প্রার্থীর অন্তত ২৭০ ইলেকটোরাল ভোটের দরকার হয়।

এবারের নির্বাচন ভিন্ন কেন?
অন্যান্য নির্বাচনের তুলনায় এ বছর বেশিসংখ্যক মানুষ ভোট দেয়ার জন্য নিবন্ধন করেছেন। ডাকযোগে অথবা কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে তারা ভোটের আগ্রহ দেখিয়েছেন। সাধারণত ডাকযোগের ভোট গণনা করতে সময় বেশি লাগে। কারণ বিভিন্ন ধরনের ব্যবস্থার মাধ্যমে এসব ভোটের সত্যতা যাচাই করা হয়; বিশেষ করে স্বাক্ষর এবং ঠিকানা যাচাই না করা পর্যন্ত ভোট গণনা হয় না। ওহাইও এবং ফ্লোরিডার মতো কিছু অঙ্গরাজ্যে নির্বাচনের দিনের কয়েক সপ্তাহ আগে থেকেই আগাম ভোটের গণনার প্রক্রিয়া শুরু হয়। তবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা কেমন হচ্ছে সেটির ওপর নির্ভর করে ভোটের রাতেই বিজয়ী ঘোষণা করা সম্ভব হয়। কিন্তু পেনসিলভানিয়া এবং উইসকনসিনের মতো কয়েকটি রাজ্যে ভোটগ্রহণের দিন ছাড়া আগাম ভোট গণনার সুযোগ নেই। এসব রাজ্য নির্বাচনী ফলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। দেশটির নির্বাচনী কর্মকর্তারা বলছেন, ভোট গণনায় কয়েকদিন পর্যন্ত লাগতে পারে।

যেসব রাজ্যে আগাম ভোট প্রক্রিয়াকরণের জন্য নির্বাচনের দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়; সেসব রাজ্যে প্রাথমিক ফল প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পক্ষে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ রিপাবলিকানরা ভোটকেন্দ্রে স্বশরীরে হাজির হয়ে ভোট দেবেন বলে প্রত্যাশা করা হয় এবং এই ভোটগুলো দ্রুত গণনা করা হয়। অন্যদিকে, যে রাজ্যগুলোতে নির্বাচনের দিনের আগেই আগাম ভোট গণনার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যায়; সেই রাজ্যগুলোতে ডেমোক্র্যাট দলীয় প্রার্থী জো বাইডেনের সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। কারণ রিপাবলিকানদের চেয়ে নিবন্ধিত ডেমোক্র্যাটরা জো বাইডেনকে ভোট দেবেন বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। ওয়াশিংটন পোস্টের এক জরিপ বলছে, চলতি বছরের মার্চের মাঝের দিকে যুক্তরাষ্ট্রের ২৩টি রাজ্যে ভোট হয়েছে। এসব রাজ্যে ভোট গণনা শেষ করতে গড়ে প্রায় চারদিন পর্যন্ত সময় লেগেছে।

আর কী কারণে ভোট গণনায় বিলম্ব হতে পারে?
দেশটিতে এ বছর প্রায় অর্ধেক রাজ্যে ডাকযোগে দেয়া ভোটের ব্যালট পৌঁছাবে নির্বাচনের পরে। যে কারণে কিছু রাজ্যের সব ভোট গণনা শেষ করতে ৩ নভেম্বরের পরও আরও কয়েকদিন সময়ের দরকার হবে। তবে অস্থায়ী ব্যালটের সংখ্যাও বাড়তে পারে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। কারণ অনেক ভোটার ডাকযোগে ভোট দেয়ার জন্য ব্যালট চেয়েছিলেন; কিন্তু পরবর্তীতে তারা ভোটকেন্দ্রে হাজির হয়ে ভোট দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এসব ভোটও প্রাথমিক গণনার অন্তর্ভুক্ত হবে না। এই ভােটাররা দু’বার ভোট দিয়েছেন কিনা সেটি যাচাইয়ের জন্য সেগুলো প্রাথমিক গণনার বাইরে থাকবে।

ভোট কেন্দ্রের হালচাল :

নির্বাচনের দিন কোটি কোটি ভোট দেয়ার জন্য কেন্দ্রে যান। কিন্তু এবার করোনাভাইরাস মহামারির কারণে দেশটিতে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় ভোট কেন্দ্র আংশিকভাবে খুলে দেয়া হবে। কর্মী ঘাটতির কারণে এবারে ভোটকেন্দ্রে দীর্ঘ সারি তৈরি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এছাড়া ভোটগ্রহণের ত্রুটিপূর্ণ যন্ত্রের কারণেও গণনায় বিলম্ব হতে পারে।

যেভাবে ভোট গণনা হয় :
দেশটিতে অধিকাংশ ব্যালট তা ডিজিটাল অথবা কাগুজে হোক না কেন; সবই গণনা করা হয় যন্ত্রে। কিন্তু কোনও ব্যালট পেপার যন্ত্রে গণনা করতে সমস্যা হবে কিনা সেজন্য সব ব্যালটই পরীক্ষা করে দেখেন কর্মীরা। ভোটগ্রহণ শেষে সব তথ্য-উপাত্ত কেন্দ্রীয় নির্বাচনী সদর দফতরে পাঠিয়ে দেয়া হয়। অনেক সময় এটি অনলাইনের মাধ্যমে করা হয়। কিন্তু কিছু স্থানে ভোটের তথ্য নির্বাচনী কর্মকর্তারা কেন্দ্রে স্বশরীরে হাজির হয়ে অথবা টেলিফোন কলের মাধ্যমে জানিয়ে দেন। ভোটের চিত্র পাওয়ার পর সরকারি নির্বাচনী ওয়েবসাইটে তা প্রদর্শন করা হয়। অন্যদিকে, ভোটের এই ফল সাংবাদিকদের জানিয়ে দেন নির্বাচনী কর্মকর্তারা। তবে বেসরকারিভাবে প্রকাশিত নির্বাচনী এই ফল আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করা হয় কয়েক সপ্তাহ পর সব ভোট গণনা শেষে।

বিতর্কিত হলে নির্বাচনী ফলের কী হবে?
করোনাভাইরাস মহামারির কারণে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৪টি রাজ্যে ইতোমধ্যে ৩ শতাধিক নির্বাচনী আইন কার্যকর করা হয়েছে। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডাকযোগের ভোট শনাক্তকরণ থেকে শুরু করে করোনাভাইরাসের কারণে ভোট ব্যবস্থায় পরিবর্তন সম্পর্কিত বিষয়গুলো নিয়ে আইনি চ্যালেঞ্জ দেখা দিতে পারে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইতোমধ্যে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী ফল এবার সুপ্রিম কোর্টে নির্ধারিত হতে পারে।- জাগোনিউজ

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn