ধানমণ্ডির মেহেদী হাওলাদারের বড় মেয়ের বিয়ে ঠিক হয় করোনা শুরুর এক সপ্তাহ আগে। অনুষ্ঠানের জন্য বুকিং দেয়া হয় স্থানীয় একটি কনভেনশন সেন্টার। কিন্তু পরে তা বাতিল হয়ে যায়। সম্প্রতি রাজধানীর একটি পাঁচ তারকা হোটেলে দুই পরিবারের ৮০ জন সদস্যকে নিয়ে ছোট পরিসরে আয়োজন করা হয় বিয়ের অনুষ্ঠান। করোনার কারণে আটকে যাওয়া অথবা বাতিল হওয়া বিয়ের এমন অনুষ্ঠান ফের আয়োজন শুরু হয়েছে। পাঁচতারকা হোটেলগুলোতে সীমিত আকারে শুরু হয়েছে বিয়ের অনুষ্ঠান। খুলছে কমিউনিটি সেন্টারও। সীমিত আকারে হলেও স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে সবকিছু। হোটেল সোনারগাঁওয়ের ক্যাটারিং এসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার শোভন বলেন, আমরা এখন বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে শুরু করে সব ধরনের অনুষ্ঠান করছি। বিয়ে, আক্‌দ, গায়ে হলুদ, কর্পোরেট পার্টিসহ সব ধরনের অনুষ্ঠান। ৮ই  জুন থেকে আমাদের হোটেলের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এরপর থেকেই আমরা অনুষ্ঠান করছি। সমস্যা হচ্ছে না। সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের পাঁচ তারকা হোটেলগুলোর বিশেষ অনুমোদন নেয়া আছে। অনুষ্ঠান প্রতিদিন হচ্ছে না। সপ্তাহে দুই থেকে তিনটি বিয়ের অনুষ্ঠান হয়। সর্বোচ্চ ৫০ থেকে একশ’ অতিথির আয়োজন করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত প্রায় দুই থেকে আড়াইশ’ বিয়ের অনুষ্ঠান হয়েছে। অতিথিদের চাহিদা থাকলে নিয়মিত করবো। এখনো অনেকেই বুঝতে পারছে না অনুষ্ঠানের অনুমতি আছে কিনা। কারণ অন্যান্য কমিউনিটি সেন্টারগুলোতে অনুষ্ঠান হচ্ছেনা। আমরা সেফটি প্রটোকল, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে অনুষ্ঠান করি। এগুলো যদি পালন করতে পারি সেই শর্তে আমাদের অনুমতি দেয়া হয়েছে। সামাজিক দূরত্বের বিষয়টি অন্যান্য হোটেলের আগে আমরাই অনুসরণ করছি। অতিথি এবং হোটেল স্টাফ সকলের শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা করে প্রবেশ করতে দেয়া হয়।

প্রত্যেক অতিথিকে ফুট সেনিটাইজার থেকে শুরু করে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করে প্রবেশ করতে দেয়া হয়। হলের এন্ট্রিতে আসার পরে প্রতিটি রুমের সামনে আবার সেনিটাইজ করা ড্রেসপরে হলে প্রবেশ করতে হয়। এক টেবিলে চার জনের বেশি অতিথি বসানো হয় না। যেখানে আগে দশ জন বসতেন। এক্ষেত্রে চেয়ারের দূরত্ব থাকে তিন থেকে চার ফিট পর্যন্ত। খাবারটা মূলত আমরা সরবরাহ করি। যাতে চামচের মাধ্যমে ভাইরাস না ছড়ায়। আমাদের সকল স্টাফ মাস্ক, হ্যান্ড গ্লাভস পরে পরিবেশন করে থাকেন। স্টাফদের ক্ষেত্রে একই রুলস অনুসরণ করা হয়। ওয়েস্টিন হোটেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত সেলস এক্সিকিউটিভ সাদিয়া বলেন, লকডাউন তুলে দেয়ার পর থেকে আমাদের এখানে বিয়ে আক্‌দসহ, সব ধরনের অনুষ্ঠানই হচ্ছে গত দু’মাস ধরে। তবে সেটা সীমিত পরিসরে। করোনার কারণে স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তার বিষয়টি শতভাগ নিশ্চিত করেই অনুষ্ঠান করে থাকি। রাজধানীতে সবকিছু স্বাভাবিক হলেও এখনো যেহেতু করোনার প্রকোপ চলমান তাই আমরা বড় পরিসরে অনুষ্ঠান করছি না। তবে সবাই আগের মতো স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এখানে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও স্যানিটাইজেশনের জন্য সর্বোচ্চ মান বজায় রাখছি আমরা। এক্ষেত্রে আমরা দেশের বাইরের একটি কোম্পানির সরবরাহকৃত মেডিকেল সামগ্রী ব্যবহার করছি।

সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে টেবিল সেটআপসহ অন্যান্য বিষয়ে সব সুরক্ষা ব্যবস্থা অনুসরণ করা হচ্ছে। মহামারির কারণে বিয়ের মতো সামাজিক অনুষ্ঠানের আয়োজনের জন্য ইতিমধ্যে গ্রাহক যোগাযোগ করতে শুরু করেছেন। যদিও সেটা খুব সীমিত। সাধারণত অন্য সময় যে গ্যাদারিং (ভিড়) হতো এখন সেটা কম হবে। পুরো বলরুমে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করে বসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আগে যেখানে এক টেবিলে ১০ থেকে ১২ জন বসতেন এখন সেখানে ৪ জন বসছেন। এক টেবিল থেকে আরেকটির দূরত্ব কমপক্ষে সাড়ে তিন ফিট রাখা হচ্ছে। কখনো আবার দু’জন করে বসানো হয়। আগে পুরো বলরুমে দু’শো গেস্টের আয়োজন করা যেতো। যেখানে এখন একশতে নেমে এসেছে। এক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসনের অনুমতি সাপেক্ষে অনুষ্ঠানগুলো করে থাকি। হোটেল রেডিসনের কর্মকর্তা মুকিত বলেন, আমরা গত মাস থেকেই অনুষ্ঠানের আয়েজন শুরু করেছি। হলুদ, বউভাত, আক্‌দসহ প্রাইভেট, কর্পোরেট সব ধরনের অনুষ্ঠান হচ্ছে। তা ছাড়া আমাদের হলটাতো সবচেয়ে বড় হল। করোনার কারণে পুরো হলটিই ব্যবহার করছি। ইতিমধ্যে আমরা ৮ থেকে ৯টি অনুষ্ঠান করেছি। আগামী মাস থেকে আরো বড় পরিসরে সাকসেসফুলি অনুষ্ঠান হবে। আমাদের টেবিলের দূরত্ব দুই থেকে আড়াই ফিট। করোনার কারণে দশজনের টেবিলে এখন কমপক্ষে চার ফিট দূরত্ব রেখে চার জনকে বসানো হয়। হলরুমের ধারণ ক্ষমতা ২শ’ এবং প্রতিটি টেবিলে ৪ জন অতিথি বসানো হয়। আমাদের দুটো বড় হল আছে। একটি সার্বক্ষণিকভাবে প্রস্তুত আছে। আরেকটিও মোটামুটি প্রস্তুত। অনুষ্ঠানের ধরনের ওপর এগুলো ব্যবহৃত হয়। এ বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসনকে অবগত করা আছে। এ ছাড়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুসরণ করছি। রেডিসন চেইনের গাইডলাইনগুলো পুরোপুরি মানার চেষ্টা করি আমরা।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn