নাসিম আহমেদ, সুইডেন :: এখন পর্যন্ত সুইডেনে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ২৮ হাজার ৬৯৩ জন। প্রাণ হারিয়েছেন ৩ হাজার ৫৫০ জন। নিহতদের মধ্যে বাংলাদেশী রয়েছেন ৭জন।  আক্রান্তের সংখ্যা প্রতিদিন বাড়লেও একদিনের জন্যও করা হয়নি লকডাউন। লকডাউনে না যাওয়ার পেছনে যে সকল যুক্তি দেখানো হয়েছে : লকডাউনের ফলে সাময়িকভাবে ভাইরাসের প্রকোপ কিছুটা কমানো সম্ভব হলেও লকডাউন তুলে দেবার পরে ব্যাপক আকারে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার সম্ভানা।  ভাইরাসের সাথে বসবাস করে মানুষের মধ্যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হার্ড ইমিউনিটি বাড়ানো।  লকডাউন করলে বাচ্চাদের স্কুল এবং ডে কেয়ার বন্ধ রাখতে হবে, ফলে বাচ্চাদের বাবা অথবা মা কে বাসায় থাকতে হবে। কিন্তু অনেক বাচ্চার বাবা, মা হাসপাতালে চাকরি করেন অথবা অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ চাকরি করেন। তাই লকডাউন করলে স্বাস্থ্য খাত থেকে শুরু করে নানা জায়গাতে জনবলের মারাত্মক অভাব হবে। অন্যতম ও প্রধান কারণ লকডাউন না করলে, অর্থনীতির স্বাভাবিক গতি কিছুটা হলেও সচল থাকবে। ফলে দেশে আর্থিক ক্ষতি অনেকটা কম হবে।

জনগণের প্রতি রয়েছে সরকারের আস্থা, সরকার মনে করে জনগণ সকল দিক নির্দেশনা নিজে থেকেই মেনে চলবে, নিজেদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিজেরাই নিশ্চিত করবে। লক ডাউন না করে সরকার দুটি দিকে সফল হয়েছে : অর্থনীতির চাকা সচল রেখেছে এবং জনগণের মধ্যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পেরেছে। সুইডেনে সুস্থতার হার বেড়েছে এখন অনেকেই আক্রান্ত হচ্ছে, বাসাতেই সুস্থ হয়ে যাচ্ছে। বলা হচ্ছে আরো অনেকেই আক্রান্ত হবে এবং সুস্থও হয়ে যাবে চিন্তার কোন কারণ নাই। আর ব্যর্থ হয়েছে মৃতের হার কমাতে পারেনি। ইউরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায় সুইডেনে মৃতের হার অনেক বেশী। এপর্যন্ত যারা মারা গেছেন তাদের ৯০% এর বয়স ৭০ এর বেশি। সুইডেনে মারা যাওয়া ৯৯% এর বয়স ৫০ এর বেশি।  শুরুতেই ভাইরাস বৃদ্ধাশ্রম গুলোতে ছড়িয়ে পড়ে, এবং বয়ষ্করা গণহারে মারা যান। তাদের শরীরে অন্যান্য রোগ থাকার কারণে হাসপাতালেও আনা সম্ভব হয়নি তাদের মধ্যে অর্ধেকেই বৃদ্ধাশ্রমেই প্রাণ হারান।  আর এই সকল বয়ষ্কদের অক্লান্ত পরিশ্রমেই গড়ে উঠেছিল সুইডেনের অর্থনীতির মজবুত ভিত্তি। জীবন দিয়েও তারা সুইডেনের অর্থনীতিতে অবদান রেখে গেলেন। তাদের পেছনে বছরে সরকাররের মোটা অংকের টাকা ব্যয় হত।

শুরু থেকে এখনও আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যায় বড় ধরনের কোন পরিবর্তন দেখা যায় নি, প্রতিদিন প্রায় ৫০০ থেকে ৬০০ লোক আক্রান্ত ও ১০০ থেকে ১৫০ জনের মত প্রাণ হারাচ্ছেন। লক ডাউনে না গিয়ে সরকারের তরফ থেকে যে দিক নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল এবং যে সকল বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল তা এখনো অব্যাহত আছে। আন্তর্জাতিক রুটে বিমান চলাচল বন্ধ রয়েছে। ৫০ জনের উপরে জন সমাগমে রয়েছে নিষেধাজ্ঞা। মসজিদ, গির্জা, ধর্মীয় উপসনালয়, বিশ্ব বিদ্যালয় গুলো ও এখনও বন্ধ। বেকারত্বের হার বেড়েছে, যারা স্থায়ী ভাবে সুইডেনে আছেন তারা সরকারের তরফ থেকে সহায়তা পাচ্ছেন, কিন্তূ যারা পড়া লেখা করতে এসেছেন, ওয়ার্ক পারমিটে আছেন তারা আর্থিক সংকটে রয়েছেন। ছাত্র ছাত্রীরা সরকারের কাছে টিউশন ফি মওকুফের আবেদন করেছেন।  করোনা পরিস্থিতিতে সুইডেনে আমরা বাংলাদেশীদের জন্য গর্বের বিষয় হচ্ছে বেশকয়েকজন বাংলাদেশী ডাক্তার ও নার্স সুইডেনের হাসপাতাল গুলোতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। কিছু তথ্য উনাদের টাইম লাইন থেকে নেয়া হয়েছে।  রাষ্ট্র লকডাউনে গেল কি না, লকডাউনের লাভ ক্ষতির জটিল হিসেবে না গিয়ে আমাদের জীবনের নিরাপত্তা আমাদের নিজেদেরই নিশ্চিত করতে হবে। আসুন সবাই সচেতন হই, অন্যকে সচেতন করি, নিরাপদ জীবন গড়ি।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn