কিশোরগঞ্জ সদর থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ওমর সিদ্দিক ফারুকী ওরফে ওমর আলীর বিরুদ্ধে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে কিশোরগঞ্জ শহরের গাইটাল এলাকার মৃত আবদুল হামিদ মুন্সীর ছেলে আবদুল হাকিম বাদী হয়ে এ অভিযোগ করেন। ওমর আলী সরকারের তালিকাভুক্ত রাজাকার কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার কাঠাবাড়িয়া বড় দীঘিরপাড় এলাকার মৃত কিতাব আলীর ছেলে। ওমর আলীর বিরুদ্ধে ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, লুটতরাজ ও সংখ্যালঘুসহ অনেক নিরীহ মানুষ হত্যা-নির্যাতন, সংখ্যালঘুর বাড়ি এবং সম্পত্তি দখলের অভিযোগ আনা হয়।
ট্রাইব্যুনালে দায়েরকৃত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ওমর আলীর নেতৃত্বে ৯-১০ জন রাজাকার ১৯৭১ সালের ১৭ নভেম্বর সদর উপজেলার কাঠাবাড়িয়ার দীঘিরপাড় গ্রামের যুগেশচন্দ্র দত্ত, বিনোদ বিহারী রায়, সুধীরচন্দ্র দাস, সুধাংশু দাসসহ ছয় ব্যক্তিকে বাড়ি থেকে ধরে পিঠমোড়া বেঁধে পাক বাহিনীর ক্যাম্প হিসেবে ব্যবহৃত কিশোরগঞ্জ শহরের ডাকবাংলোয় নিয়ে গুলি করে হত্যা করে। ১৯৭১ সালের ১৫ অক্টোবর সকাল ১০টার দিকে সদর উপজেলার শ্যাম রায়ের বাজার এলাকা থেকে আবদুল বাছিরের ছেলে আবদুর রাজ্জাক ওরফে হেলু মিয়াকে ধরে নিয়ে পিঠমোড়া বেঁধে পার্শ্ববর্তী ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইল উপজেলার কালীগঞ্জ ব্রিজে নিয়ে গুলি করে হত্যা করে। এ ছাড়াও অভিযোগে ওমর আলীর বিরুদ্ধে সদর উপজেলার লতিবাবাদ ও রশিদাবাদ ইউনিয়নসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, নির্যাতন ও ধর্ষণের একাধিক ঘটনার কথা উল্লেখ আছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দায়েরকৃত অভিযোগের বিষয়ে ৬৬ বছর বয়সী বাদী আবদুল হাকিম জানান, অভিযোগ পেয়ে ট্রাইব্যুনালের সমন্বয়ক তার উপস্থিতিতেই অভিযোগটি তদন্তের জন্য পুলিশের সিনিয়র সহকারী সুপারিনটেনডেন্ট ও আন্তর্জাতিক অপরাধ তদন্ত সংস্থার সদস্য হরি দেবনাথকে তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করেন।   তিনি জানান, সরকারি তালিকায় রাজাকার হিসেবে ওমর আলীর নাম থাকলেও তিনি সদর থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও প্রভাবশালী ব্যক্তি। আর এ কারণে তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ দায়ের নিয়ে তিনি দীর্ঘদিন সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছিলেন। কিন্তু যখন মানবতাবিরোধী অপরাধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রভাবশালী অনেক ব্যক্তির বিরুদ্ধে ফাঁসির আদেশ দেন এবং কার্যকর করেন তখন আমি এ অভিযোগ করার সাহস পাই। বাদী আবদুল হাকিম বলেন, আমি এত দিন আত্মদংশনে জ্বলে-পুড়ে মরছিলাম। অভিযোগটি করার পর আমি নিজেকে অনেকটা দায়মুক্ত মনে করছি। এখন শুধু এ জঘন্য মানবতাবিরোধী অপরাধীর বিচার দেখে মরতে চাই।
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn