ভারতে সদ্য শেষ হওয়া লোকসভা নির্বাচনের পর নরেন্দ্র মোদির নতুন মন্ত্রিসভায় প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘নায়ক’-এ পরিণত হয়েছেন প্রতাপ চন্দ্র সারেঙ্গি। কারণ অন্যান্য রাজনীতিকদের থেকে তার জীবনযাত্রা অনেকটাই আলাদা। সম্পত্তি বলতে রয়েছে একটি কুঁড়েঘর ও একটি বাইসাইকেল। আর নিজের লোক বলতে রয়েছে এলাকার ছোট্ট বাচ্চারা। এমন একজন মন্ত্রী হওয়ায় সাধারণ মানুষের কৌতুহল একটু বেশি থাকাই স্বাভাবিক। ফলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলছে প্রতাপ চন্দ্র সারেঙ্গির প্রশংসার ঢেউ। ব্যক্তিজীবনে অবিবাহিত সারেঙ্গি জীবনের সবটুকু সময় নিজের এলাকার মানুষের সেবায় নিয়োজিত, নির্লোভ, ত্যাগী, চাকচিক্যহীনসহ নানা খেতাবে-প্রশংসায় পঞ্চমুখ নেটিজেনরা। ওড়িশার বাইরে এ নব্য প্রতিমন্ত্রীকে ভার্চুয়ালভাবে খুব কম মানুষই চেনে। ফলে দুর্নীতি আর নানা অভিযোগে ভরপুর এ সময়ে সারেঙ্গিকে নিয়ে মাতামাতি অস্বাভাবিক কিছু নয়। কিন্তু মাতামাতির ঠিক এরকম মুহূর্তেই সাদামাটা, নিরীহ জীবনযাপনকারী প্রতাপ চন্দ্র সারেঙ্গিকে নিয়ে বেরিয়ে এলো ভয়াবহ এক তথ্য। যে মানুষটিকে প্রশংসার জন্য নতুন নতুন প্রতিশব্দ খুঁজতে গিয়ে নেটিজেনরা হয়রান, সেই মানুষটিরই রয়েছে এক কালিমালিপ্ত অধ্যায়!

দেখতে নীরিহ মনে হওয়া এ মানুষটি ২০০২ সালে ওড়িশার বিধানসভা হামলার ঘটনায় অন্যতম অভিযুক্ত ছিলেন। সরকারি সম্পত্তি নষ্টসহ একাধিক অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তারও করেছিলো ওড়িশা পুলিশ। শুধু তাই নয়, ১৯৯৯ সালের জানুয়ারিতে অস্ট্রেলিয়ান মিশনারি গ্রাহাম স্টেইন এবং তার ১১ ও ৭ বছর বয়সী দুই ছেলেকে পুড়িয়ে হত্যা করে বিজেপির বজরং দল। যে দলের নেতৃত্বে ছিলেন সারেঙ্গি, একইসঙ্গে তিনি ওই দলেরও নেতা। যদিও সরকারি তদন্তে কখনো তার নাম উঠে আসেনি। একইসঙ্গে ওই ঘটনায় পুলিশ কোনো দলের সম্পৃক্ততাই পায়নি বলে দাবি করে! তবে দীর্ঘদিন মামলা চলার পর ২০০৩ সালে ওই ঘটনায় দারা শিং নামে একজনসহ মোট ১৩জনকে অভিযুক্ত করে বিশেষ ট্রাইবুনাল। একইসঙ্গে তাদের মৃত্যুদণ্ডের আদেশও দেওয়া হয়। অভিযুক্ত দারা শিং বজরং দলের সদস্য ছিলেন। কিন্তু কোনো এক অজানা কারণে রায়ের দুই বছর পর ওড়িশার হাইকোর্ট তাদের মৃত্যুদণ্ড বাতিল ঘোষণা করে। একইসঙ্গে ঘটনার সঙ্গে জড়িত যাবজ্জীবনপ্রাপ্ত ১১ জনকে পর্যাপ্ত প্রমাণ না থাকার কথা জানিয়ে মুক্তি দেয়।

ঘটনা এখানেই শেষ নয়, সারেঙ্গিকে ২০০২ সালে দাঙ্গা, অগ্নিসংযোগ, হামলা ও সরকারি সম্পত্তির ক্ষতিসাধন করার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়। একইসঙ্গে তার দল বজরংকে ওড়িশায় দাঙ্গা বাঁধানোর জন্যও দায়ী করা হয়। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সারেঙ্গি এসবের কোনোকিছুই উঠে আসে না। বরং তার জীবনযাপনের নানা ধরনের ছবি পোস্ট করে এবং সেটা নিয়ে নানা ধরনের ক্যাপশন দেওয়াতেই মেতে উঠেছেন। শুধু তাই নয়, তাকে নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে তুলনা করে ‘ওড়িশার মোদি’ বলেও খেতাব দেওয়া হয়েছে।

তবে সারেঙ্গিকে সবাই যে পছন্দ করেন তাও নয়। পশ্চিমবঙ্গের জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী কবীর সুমন এই বজরং দলকে নিয়ে ২০১৩ সালে গান লিখেছেন। সেই গানটিও তিনি গেয়েছেন। যেখানে বজরং দল ধর্মের কথা বলে মানুষ পুড়াতে নামে বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি। ইতোমধ্যে সেই গানটিও অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করছেন। এছাড়া প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আরেকটি ছবি ছড়িয়ে পড়েছে। যেখানে হিন্দু উগ্রবাদী সংগঠন বজরং দলের প্রধান হিসেবে সারেঙ্গিকে শক্ত হাতে তলোয়ার ধরে হুংকার ছাড়তে দেখা গেছে। ফলে বাইরে ছেঁড়া পাঞ্জাবি পরে থাকলেও অন্যধর্মের মানুষের রক্তে রাঙানোর অভিযোগ তাকে কিঞ্চিত মলিন করলো বলেই মনে হয়।
সূত্র: বিবিসি, বণিক বার্তা

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn