সিলেট :: সিলেট নগরীর জিন্দাবাজারে কুয়েত আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম আব্দুল আহাদ খুনের পরিকল্পনায় ছিলেন হোসেন মুরাদ চৌধুরী। তিনিও কুয়েত প্রবাসী। পাওনা টাকা পরিশোধের কথা বলে ডেকে এনে আহাদকে খুনের মিশনে অংশ নিয়েছিল ৫ জন। এ খুনের সাথে জড়িত দুজন দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। আর মূল পরিকল্পনাকারী মুরাদও খুনের আগেই দেশ ছাড়েন। আব্দুল আহাদ খুনের মামলায় আদালতে দেয়া অভিযোগপত্রে এসব তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। সম্প্রতি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নগরীর কোতোয়ালী থানার এসআই অনুপ কুমার চৌধুরী আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন এই তদন্ত কর্মকর্তা। তিনি জানান, ৬ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়া হয়েছে। এই খুনের মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন কুয়েত প্রবাসী হোসেন মুরাদ চৌধুরী। তিনি কুয়েতে আছেন। এছাড়া খুনে জড়িত একজন আরব আমিরাতে এবং আরেকজন ভারতে পলাতক। এসআই অনুপ কুমার চৌধুরী আরো জানান, সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েই অভিযোগপত্র তৈরি করা হয়। গেল মাসে জমা দেয়া অভিযোগপত্রটি আদালত গ্রহণ করেছেন। বর্তমানে বিচারকার্য চলছে। আব্দুল আহাদের গ্রামের বাড়ি মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর উপজেলার মেদেনীমহলে। ২০১৮ সালের ৩১ সিলেট নগরীর জিন্দাবাজারে তাঁতীপাড়া গলির মুখে তাকে কুপিয়ে খুন করা হয়। এ ঘটনার তার স্ত্রী রাসনা বেগম বাদী হয়ে ২ সেপ্টেম্বর কোতোয়ালী থানায় মামলা করেন। অন্যদিকে খুনের মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে অভিযুক্ত হোসেন মুরাদ চৌধুরী সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার জালালনগরের ময়নুল হোসাইন চৌধুরীর ছেলে। তিনি জাতীয় পার্টির কর্মী হিসেবে পরিচিত।

অভিযোগপত্রে যে ৬ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে, তারা হলেন- সিলেটের দক্ষিণ সুরমার সাধুর বাজারের তারা মিয়ার ছেলে ফখরুল ইসলাম শান্ত (৩৬), বিয়ানীবাজারের মাথিউরা বাজারের আব্দুল মালিকের ছেলে মাহমুদুর রহমান লায়েক (২৮), গোলাপগঞ্জের উত্তর রায়গড়ের কামরুল হাসানের ছেলে মুরাদ হোসাইন রানা (২৫), ফেঞ্চুগঞ্জের কটালপুরের ফিরোজ আহমদের ছেলে সোহেল আহমদ জালাল (২৭), বিয়ানীবাজারের চারখাই জালালনগরের ময়নুল হোসাইন চৌধুরীর ছেলে হোসেন মুরাদ চৌধুরী (৪১) এবং সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার সূর্যেরগাঁওয়ের আশীষ কুমার চক্রবর্তীর ছেলে অভিষেক চক্রবর্তী মিথুন (২৫)। তাদেরকে দন্ডবিধির ৩০২, ১০৯ ও ৩৪ ধারায় অভিযুক্ত করা হয়েছে। অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রায় ২০ বছর ধরে কুয়েতে বসবাস করছিলেন আব্দুল আহাদ। তিনি রাজনীতির পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সাথেও জড়িত ছিলেন। সেখানে হোসেন মুরাদ চৌধুরীর সাথে তার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এর ফলে আহাদের কাছ থেকে টাকা ধার নিতেন মুরাদ। কিন্তু ধারের টাকা শোধ করতে টালবাহন করতে থাকেন তিনি। এ নিয়ে উভয়ের মধ্যে মনোমালিন্য হয়। পাওনা টাকা ফেরত চাওয়ায় মুরাদ ক্ষুব্ধ হন আহাদের ওপর।

অভিযোগপত্রের তথ্যানুসারে, কুয়েত থেকে হোসেন মুরাদ চৌধুরী দেশে আসেন ২০১৮ সালের ৬ এপ্রিল। আর আব্দুল আহাদ দেশে আসেন একই বছরের ১৫ আগস্ট। আহাদকে খুনের পরিকল্পনা করে ২৩ আগস্ট কুয়েতে ফিরে যান মুরাদ। পরিকল্পনা অনুসারে ৩০ আগস্ট রাতে আহাদের কাছে ফোন করেন ফখরুল ইসলাম শান্ত। তিনি মুরাদের কাছে পাওনা টাকা পরদিন সিলেট থেকে নিয়ে যেতে বলেন আহাদকে। পাওনা টাকা ফেরত নিয়ে ৩১ আগস্ট সিলেটে আসেন আব্দুল আহাদ। শুরু থেকেই তার গতিবিধি লক্ষ্য করতে থাকেন মাহমুদুর রহমান লায়েক, শান্ত ও সোহেল আহমদ জালাল। ওইদিন রাত পৌনে ১০টার দিকে জিন্দাবাজার তাঁতীপাড়ার গলির মুখে আব্দুল আহাদের পিঠের ডান পাশে ধারালো চাকু দিয়ে কোপ দেন লায়েক, পিঠের বাম পাশে কোপ দেন শান্ত, কোমরের নিচে ও মলদ্বারের নিচে কোপান জালাল, কোমরের নিচে কোপান মুরাদ হোসাইন রানা। এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকেন অভিষেক চক্রবর্তী। আব্দুল আহাদের মৃত্যু নিশ্চিত করে পালিয়ে যায় ঘাতকরা। অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, খুনে জড়িত মাহমুদুর রহমান লায়েক গত ১৮ সেপ্টেম্বর ভারতে পালিয়ে যান। আর ২৪ সেপ্টেম্বর আরব আমিরাতে যান জালাল। এ দুজনের কেউই দেশে ফিরেছেন বলে তথ্য পাওয়া যায়নি। এদিকে, কুয়েত আওয়ামী লীগ নেতা এস এম আব্দুল আহাদ খুনের পর পুলিশ ওলামালীগ নেতা সিরাজুল ইসলাম সুরকীকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়েছিল। তবে খুনের সাথে তার সম্পৃক্ততা না পাওয়ায় অভিযোগপত্রে তাকে অভিযুক্ত করা হয়নি।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn