আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকরের অপেক্ষায় থাকা বিতর্কিথ নতুন ভ্যাট আইন নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একইসঙ্গে তিনি নতুন এই ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন স্থগিতের নির্দেশও দিয়েছেন। গতকাল সোমবার মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকের পর অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন এবং এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবুর রহমানের সঙ্গে ভ্যাট আইন-২০১২ নিয়ে পৃথক বৈঠক করেন। জাতীয় সংসদ ভবনের মন্ত্রিসভা কক্ষে এ বৈঠক হয়। একটি সূত্র এ তথ্য জানিয়ে বলেছে, প্রধানমন্ত্রী আইনটি আরও পর্যালোচনার নির্দেশনা দিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আইন হবে জনগণের সুবিধার্থে। জনগণকে ভোগান্তিতে ফেলে এমন কোনো আইন আওয়ামী লীগ সরকার চায় না। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী জানতে চান, বাজেট পেশের আগে বার বার নির্দেশনা দেওয়া সত্ত্বেও এমন একটি বিভ্রান্তিকর সিদ্ধান্ত কীভাবে এলো? কেন আগে যাচাই-বাছাই করা হয়নি? আইনটি ২০১২ সালে তৈরি। চার বছর সময় পেয়েও কেন এর সমাধান হয়নি? এ আইনের বাস্তবায়ন আপাতত স্থগিত রেখে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা কীভাবে অর্জন করা যায়, সেই পথ খুঁজে বের করুন।

চার বছর ধরে যেসব কর্মকর্তা এ আইন নিয়ে কাজ করেছেন এবং বিভিন্ন ব্যবসায়ী ও শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে আইনটি নিয়ে বৈঠক করেছেন— তাদের প্রতিও তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। এমনকি ওই সব কর্মকর্তা অন্য কারও উদ্দেশ্য হাসিল করা বা সরকারের মধ্যে কোনো ধরনের বিভ্রান্তি সৃষ্টির জন্য কাজ করেছেন কিনা, সে বিষয়েও খোঁজখবর নিতে অর্থমন্ত্রী, এনবিআর চেয়ারম্যানের প্রতি নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।

বৈঠক সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ভ্যাট আইন নিয়ে জনসাধারণের মধ্যে এক ধরনের বিভ্রান্তিমূলক তথ্য চলে গেছে। ১৫ শতাংশ ভ্যাট নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। নির্বাচন সামনে রেখে আমাদের জন্য (দলের) এটা কোনোভাবেই মঙ্গল বয়ে আনতে পারে না। ভ্যাটের হার কত হলে জনভোগান্তি হবে না এবং ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষের জন্য স্বস্তিদায়ক হার নির্ধারণ করে স্বল্প সময়ের মধ্যে তাকে অবহিত করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। বা

১ জুন সংসদে বাজেট পেশের পর থেকেই নতুন ভ্যাট আইন আর ব্যাংক হিসাবে লেনদেনের ওপর আবগারি শুল্ক বাড়ানোর বিষয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা এ সংকট সমাধানের জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন একাধিকবার। এ জন্য রাজনৈতিক অর্থনীতির অংশ হিসেবেই প্রধানমন্ত্রী ভ্যাট সংক্রান্ত এই চলমান সংকট সমাধানে আবারও উদ্যোগী হয়েছেন। তিনি বলেছেন, বাজেট হতে হবে জনকল্যাণের জন্য। শুধু বাজেটের আকার বাড়িয়ে আর করের বোঝা চাপিয়ে জনগণকে চাপে ফেলার মতো সিদ্ধান্ত কার্যকর করা যাবে না। ফলে প্রস্তাবিত বাজেটের বিতর্কিত বিষয়গুলো সমাধান হতে হবে এটি পাসের আগেই।
বৈঠকের একটি সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী জানতে চান নতুন ভ্যাট আইন দ্রব্যমূল্য বাড়াবে কিনা, জীবন-যাত্রার ব্যয় অস্বাভাবিক হারে বাড়বে কিনা—এসব বিষয় অবশ্যই আমলে নিতে হবে। প্রয়োজনে একটি পর্যালোচনা প্রতিবেদন তৈরির জন্য এনবিআরকে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। ব্যাংকের আবগারি শুল্কের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী অর্থমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে বলেন, এটা যদি পুরনো বিষয় হয়ে থাকে তাহলে এতদিন সাধারণ মানুষকে জানানো হয়নি কেন? এতে বাংলাদেশ ব্যাংক বা সংশ্লিষ্ট বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো তাদের দায়িত্বে অবহেলা করেছে কিনা, সে বিষয়েও জানতে চান তিনি। আবগারি শুল্কের হার নির্ধাণের ক্ষেত্রে এক লাখ টাকার ঊর্ধ্বে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত ৫০০ টাকা থেকে ৮০০ টাকা করাকে প্রধানমন্ত্রীও যৌক্তিক মনে করেন না। লেনদেনের এই সীমা আরও বাড়ানোর নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn