গোলাম আজমের শিষ্য নদভী এখন আওয়ামী লীগের আস্থাভাজন!
সাংসদ নদভী জামায়াতী না আওয়ামী- এ এক বিরাট প্রশ্ন। জামায়াতের প্রতিষ্ঠাতা যোদ্ধাপরাধী গোলাম আজমের একানিষ্ঠ শিষ্য নদভী এখন আওয়ামীলীগের অাস্থাভাজন। তার স্ত্রী আলবদর নেতা, ছাত্র সংস্থার সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা জামাতের প্রতিষ্ঠাতা আমির, জামাতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ তথা জামাতের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম কেন্দ্রীয় শুরার প্রভাবশালী সদস্য মুমিনুল হক চৌধুরীর কন্যা রিজিয়া মহিলা আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। নদভী ও তার স্ত্রী রিজিয়াকে নিয়ে সারাদেশে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মাঝে চরম অসন্তোষ দানাবেধেছে।
জানা গেছে, চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার মাদ্রাসা শিক্ষক মৌং ফজলুল্লাহর ছেলে হলো নদভী। এককালে মাদ্রাসার লিল্লাহ ফান্ডের খরচে তার পড়ালেখা ও হোস্টেলে থাকা খাওয়া চলতো। আর এখন আবু রেজা নদভী নামে ও বেনামে হাজার কোটি টাকার মালিক। বিলাসবহুল বাড়ি, গাড়ি বহর, বাগানবাড়ি, ঘেটুপুত্রের দল, আন্তর্জাতিক কানেকশন। একটা এনজিও ছাড়া তার কাগজে কলমে কোন উপার্জনের উৎস নেই। আর তার সম্পদেরও সীমা নেই এখন। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের রাষ্ট্রগুলোর সাথে আবু রেজার নদভীর নেটওয়ার্ক, এমন যোগাযোগ ও প্রতিপত্তি বাংলাদেশের অনেক মন্ত্রীরও নেই। নদভীর টাকার উৎস বিদেশ, টাকা থেকে মুনাফা জেনারেটও হয় বিদেশ সংক্রান্ত উপার্জন থেকে। নিজের ব্যাক্তিগত বিষয়কে মিডিয়া ও লোকচক্ষুর আড়ালে রাখতে নদভী সবসময়ই সচেতন থেকেছে।
ভারতের নদওয়া মাদ্রাসায় পড়ালেখা শেষ করে নদভী চট্টগ্রামের দারুল মাআরিফ মাদ্রাসায় শিক্ষকতা শুরু করে। শিক্ষকতার ফাকে সউদি আরব, কাতার, কুয়েত, আমিরাত, বাহরাইন, ওমান, তুরষ্ক এসব দেশের ধনাঢ্য শেখ ও এনজিওদের সাথে আবু রেজার ব্যক্তিগত যোগাযোগ গড়ে উঠে। একসময় সে ঐসব শেখদের কাছে ঐসব দেশে যাওয়া শুরু করে ও অনুদান আনা শুরু করে। অনুদানের টাকা থেকে ক্রমাগত উত্থান শুরু। উত্থানের শুরুতে সে জামায়াত পরিচালিত চট্টগ্রাম ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেয়। মধ্যপ্রাচ্যের দেশ গুলোর সাথে ভালো সখ্যতার জন্য জামায়ত নেতা গোলাম আজম নদভীকে কাছে টেনে নেয়।
পুরো আরব বিশ্বে আবু রেজা এবার একটি ফুল ফ্লেজেড বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানিত প্রতিনিধি হয়ে উঠে। জামায়াত নেতাদেরকে নদভী খুশি করে এলিজিয়েন্স ও টুকরা টাকরা অনুদান দিয়ে। গোলাম আজমের ইচ্ছায় জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতা মওলানা মুমিনুল হকের মেয়ে রিজিয়াকে বিয়ে করে নদভী। আলবদর নেতা মুমিনুল হকের জামাই হওয়ার পর নদভীর উত্থান অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠে। আরেক নেতা আবু তাহেরের পৃষ্ঠপোষকতায় নদভী পৌঁছে যায় নিজামী মুজাহিদসহ সব পলিসি মেকিং নেতার কাছে। তাদের সাথে মধ্যপ্রাচ্যের দুতাবাসগুলোর যোগাযোগে নদভী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
সাতকানিয়া লোহাগাড়া আসন নিয়ে জামায়াত নেতা শাহজাহান চৌধুরী আর শামসুল ইসলামের আভ্যন্তরীণ টানাটানিতে নদভী তার নিজের জন্য সুবর্ণ সুযোগ দেখতে পায়। চারদলীয় জোট সরকারের আমলে সে প্রধামনন্ত্রীর কার্যালয়ে নিয়মিত যাতায়াত করতে থাকে। সেই সময় হারিস চৌধুরীর সহযোগীতায় নদভী সহজেই তারেক জিয়ার সাথে সখ্যতা গড়ে তুলে। বিএনপি সরকারের সময় নদভী তার বাবার নামে প্রতিষ্ঠা করে এনজিও- ‘আল্লামা ফজলুল্লাহ ফাউন্ডেশন’। বাবার নামে এনজিওর জন্য মধ্যপ্রাচ্য থেকে অনুদান আনা শুরু করে।
আওয়ামীলীগ নেতাদের সূত্রে জানা যায়, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর প্রথম বছর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে লিংক খুঁজে পেতে আবু রেজার বেশ পরিশ্রম করতে হয়। এই সময় কিছু দিনের জন্য সে আত্মগোপনে চলে যায়। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের দূতাবাসের মাধ্যমে ও নিজস্ব রাজনৈতিক সূত্রে শেষ পর্যন্ত সে সেই সময়ের একজন বর্তমান মন্ত্রীর কাছে পৌঁছতে সক্ষম হয়। এবং সেই মন্ত্রীর সহযোগীতায় ২০১৫ সালের নির্বাচনে সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে সে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়। সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর মধ্যপ্রাচ্যের দেশ গুলোর প্রভাব দেখিয়ে নদভী ধ্রুত সময়ের মধ্যে আওয়ামীলীগ সরকারের আস্থাভাজন হয়ে উঠে।