একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসনসহ তৃণমূলে শক্ত অবস্থান তৈরি করতে চায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। সুসংগঠিত দল নিয়ে দুই দলই ভোটের লড়াইয়ে নামতে চায়। তাই নির্বাচনের দু’বছর আগেই ঘর গোছাতে মাঠে নেমেছেন দল দু’টির কেন্দ্রীয় নেতারা। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক দায়িত্বশীল নেতাদের সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা জেলার নেতাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগ রাখছেন। দলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও কোন্দল মেটাতে এরইমধ্যে কয়েকটি জেলার নেতাদের ঢাকায় ডেকে এনে দিক-নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আরও কয়েকটি জেলার নেতাদের কেন্দ্রে তলব করা হয়েছে। দ্বন্দ্ব কোন্দল মেটাতে আওয়ামী লীগের বিভাগীর সাংগঠনিক সম্পাদকরা কাজ করে যাচ্ছেন। এদিকে বিএনপি বসেও নেই। তৃণমূলে শক্ত অবস্থান তৈরি করতে দলটির ৫১টি টিম মাঠে নেমেছে। দলীয় কোন্দল মেটানো, কমিটি পুনর্গঠনসহ আগামী নির্বাচনে মাঠে থাকার পরিকল্পনা নিয়ে তৃণমূলে যাচ্ছে দলটি।
আওয়ামী লীগ
সম্প্রতি দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল মেটাতে কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, যশোর জেলার নেতাদের সঙ্গে রাজধানীর ধানমন্ডিতে দলের সভাপতির কার্যালয়ে বৈঠক করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এছাড়া ২৭ এপ্রিল নীলফামারী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক এবং সংশ্লিষ্ট জেলার সংসদ সদস্যদের নিয়ে বৈঠকে বসবে আওয়ামী লীগ। এছাড়াও আওয়ামী লীগ সমর্থিত দুই পেশাজীবী সংগঠন আইনজীবী ও সংস্কৃতিকর্মীদের সাথে বৈঠকের সূচি চূড়ান্ত করেছে আওয়ামী লীগ। আজ বুধবার (২৬ এপ্রিল) বিকেল ৫টায় সংস্কৃতিকর্মীদের সাথে বৈঠ করে। আগামী ৩০ এপ্রিল আইনজীবীদের সাথে বৈঠকে বসবে দলটি। বৈঠক হবে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে।
গত ১৯ এপ্রিল বিকেলে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সম্পাদকমণ্ডলীর সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের দলের এই সিদ্ধান্তের কথা জানান। ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সভায় সাংগঠনিক বিষয়ে বিস্তারিত আলাপ-আলোচনা হয়েছে। বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় সাংগঠনিক অবস্থা, সংকট ও সমাধান নিয়ে আমাদের সাংগঠনিক নেতারা তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করেছেন। আমাদের কিছু কিছু সংকট আছে। সেগুলো আমরা ধারাবাহিকভাবে জেলা-উপজেলা নেতৃবৃন্দকে ঢাকায় সভানেত্রীর কার্যালয়ে ডেকে এনে এই মাস থেকেই আলাপ-আলোচনা করে সমাধান করবো। আমরা এই উদ্যোগ নিয়েছি। সভায় আমাদের এই সিদ্ধান্ত হয়েছে।’
বিএনপি
গত ২২ এপ্রিল থেকে বিএনপি সাংগঠনিক সফর শুরু করেছে যা আগামী ৭ মে পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। এর পর আগামী ১৫ এপ্রিল থেকে বাই রোটেশন নেতারা আবার জেলা সফরে যাবেন বলেও জানা গেছে। এজন্য বিএনপির ৫১টি টিম করা হয়েছে। প্রতিটি টিম রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে তৃণমূলকে সংগঠিত করতে কাজ করবে। দলের ৭৭ সাংগঠনিক জেলা বিএনপির নেতাদের দ্বায়িত্ব বণ্টন করে দেওয়া হয়েছে। এজন্য মঙ্গলবার দুপুরে সকালে এক প্রস্ততি সভা অনুষ্ঠিত হয়। এত দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সভাপতিত্ব করেন। নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বৈঠকে সারাদেশে দলের সাংগঠনিক অবস্থা ও টিম প্রধানদের করণীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। এ বিষয়ে মির্জা ফখরুল বলেছেন, ‘আমাদের (বিএনপি) জাতীয় কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দলের সাংগঠনিক পুনর্গঠনের জন্য ৫১টি দল গঠন করা হয়েছে। এ সব দল সারাদেশের ৭৭টি সাংগঠনিক জেলা সফর করবে। নেতৃত্বে থাকবেন বিএনপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দ। সেখানে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতৃবৃন্দ আমাদের দলের স্থানীয় পর্যায়ের সব নেতাকর্মীর সঙ্গে মিলিত হবেন আনুষ্ঠানিকভাবে ও অনানুষ্ঠানিকভাবে। তারা দেশের চলমান সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করবেন।’
তিনি বলেন, ‘আন্দোলন ও আগামী নির্বাচনসহ সব বিষয়ে আলোচনা হবে। আশা করছি, এ সফরে আমাদের দলের সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধি পাবে, ঐক্য বৃদ্ধি পাবে। নেতাকর্মীরা ভবিষ্যৎ কার্যক্রমের জন্য আরো বেশি উজ্জীবিত হবেন। কারণ আমাদের এ কর্মসূচির মধ্যে বর্তমান রাজনীতির সব কিছুই বিদ্যমান থাকবে।’ বিএনপি ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু  বলেন, ‘রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক সফর হবে। আগামী দিন নির্বাচনের প্রস্ততির লক্ষ্যে তৃণমূল বিএনপি ও অঙ্গ দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে মিটিং করা হবে। এটা একবারেই সাংগঠনিক সফর।’ আগামী দিনে নির্বাচন ও আন্দোলনের জন্য দলকে তৈরি করাই লক্ষ্য এ সফর কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn