বার্তা ডেস্ক:: যমুনা সেতুর পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজের জন্য ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগে করা মামলায় সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী নাজমুল হুদা ও তার স্ত্রী সিগমা হুদাকে দোষী সাব্যস্ত করে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দিচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সোমবার কমিশন এই মামলায় অভিযোগপত্র অনুমোদন দেয়। বিষয়টি নিশ্চিত করে দুদকের উপপরিচালক (জনসংযোগ) প্রণব কুমার ভট্টাচার্য বলেন, শিগগিরই আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হবে।

জানা যায়, ২০০৮ সালের ১৮ জুন রাজধানীর মতিঝিল থানায় নাজমুল হুদার বিরুদ্ধে মামলা করেন দুদকের সে সময়ের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ বেলাল হোসেন। মামলার এজাহারে বলা হয়, যমুনা সেতুর পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজের জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মার্গানেট ওয়ান লিমিটেডকে নিযুক্ত করা হয়। সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী নাজমুল হুদা ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে প্রতি মাসে ৫০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন। দাবিকৃত টাকা তার স্ত্রীর মালিকানায় পরিচালিত ‘খবরের অন্তরালে’ পত্রিকার হিসাবে জমা দেওয়ার জন্য বলেন। মাসিক কিস্তিতে দাবিকৃত টাকা না দেওয়া হলে ওই প্রতিষ্ঠানের ঠিকাদারি নিয়োগ বাতিল করে কালো তালিকাভুক্ত করার হুমকি দেন। অবশেষে নিরুপায় হয়ে ব্যাপক ব্যবসায়িক ক্ষতি বিবেচনা করে মাসে ২৫ হাজার টাকা উৎকোচ প্রদানের প্রস্তাব করলে নাজমুল হুদা দম্পতি তাতে রাজি হন। এরপর তারা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মার্গানেট ওয়ান লিমিটেডের চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও পরিচালকের কাছ থেকে ২০০৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে ২০০৬ সালের ১৮ অক্টোবর পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে চেকের মাধ্যমে ৬ লাখ টাকা ঘুষ নেন। মামলাটির কার্যক্রম ২০১৬ সালে হাইকোর্ট বাতিল করলেও ২০১৭ সালের ৭ মার্চ দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশ বাতিল করেন আপিল বিভাগ।

হাইকোর্টের আদেশের পর দুদক আবারও তদন্তে নামে। এ বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি নাজমুল হুদাকে দুদকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন দুদকের সহকারী পরিচালক ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম। ওই দিন ৭ ঘন্টা জিজ্ঞাসাবাদ শেষে নাজমুল হুদা সাংবাদিকদের বললেন, মামলাটি ষড়যন্ত্রমূলক। এক এগারোর সময় জেনারেল মতিনের ইচ্ছায় ওই মামলা হয়েছিল। একটি পত্রিকার বিজ্ঞাপনের টাকা অ্যাকাউন্টে এসেছিল, ঘুষের টাকা নয়। অথচ ষড়যন্ত্রমূলকভাবে ঘুষের মামলা দায়ের করা হয়। পরে মামলাটি বাতিল হলেও ষড়যন্ত্রমূলকভাবে এটি পুনরুজ্জীবিত করেন সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। এদিকে গত বছরের ১ অক্টোবর সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার বিরুদ্ধে রাজধানীর শাহবাগ থানায় মামলা করেন নাজমুল হুদা। এ মামলাটির তদন্তও করছে দুদক।

মামলার অভিযোগে তিনি বলেন, ২০১৭ সালে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা আমাকে তার খাসকামরায় ডেকে মোট সোয়া তিন কোটি টাকা ঘুষ চান। তবে আমি তাঁকে ওই ঘুষের টাকা দিইনি। কয়েকটি মামলা থেকে রেহাই এবং ব্যাংক থেকে টাকা অবমুক্ত করে দেওয়ার আদেশ দেওয়ার বিনিময়ে তিনি ওই টাকা দাবি করেছিলেন। নাজমুল হুদা বলেন, এস কে সিনহা ঘুষ আদায়ের জন্য আমার বিরুদ্ধে খারিজ হওয়া একটি মামলা পুনরুজ্জীবিত করেন। আর সেই মামলাসহ আরও একটি মামলা থেকে রেহাই দিতে দুই কোটি টাকা আর ব্যাংকে আটকে যাওয়া টাকা অবমুক্ত করে দেওয়ার জন্য সেই টাকার অর্ধেক দাবি করেন। তাতে আসে সোয়া কোটি টাকা। আমি তাকে কোনো টাকা দিইনি। এটা ছিল ঘুষ নেওয়ার প্রচেষ্টা।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn