বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’র প্রভাবে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে সারাদেশে সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। সোমবার বেলা ২টা থেকে পরবর্তী ঘোষণা না দেয়া পর্যন্ত নৌযান বন্ধের এ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। নির্দেশনা অনুযায়ী রাজধানীর সদরঘাটে থাকা দূরপাল্লার লঞ্চসহ সব ধরনের নৌযানের চলাচল বন্ধ ঘোষণা করে বিআইডব্লিউটিএ। এছাড়া শিমুলিয়া ও পাটুরিয়ায় স্পিডবোট ও লঞ্চ চলাচল এবং ভোলা, পটুয়াখালী ও বরিশাল অঞ্চলে সব লঞ্চ চলাচল বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

সোমবার বেলা সাড়ে ১২টায় দেশের অভ্যন্তরীণ নদীবন্দরগুলোতে দুই নম্বর সতর্কতা সংকেত জারি করে বিআইডব্লিউটিএ। এর আগে বেলা ১২টায় আবহাওয়া অধিদফতরের ১০ নম্বর বিশেষ বুলেটিনে বলা হয়- বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপ ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’য় রূপ নিয়েছে। এটি আরও ঘণীভূত এবং উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে আগামীকাল মঙ্গলবার সকাল নাগাদ চট্টগ্রাম-কক্সবাজার উপকূল অতিক্রম করতে পারে। এদিকে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরসমূহকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। অপরদিকে মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে ৪ নম্বর  স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ৫ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। এছাড়াও উপকূলীয় বেশ কয়েকটি জেলাকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় রাখা হয়েছে। আবহাওয়ার বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঘূর্ণিঝড় মোরা আজ বেলা ১২টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৮০কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৪০০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৫৪০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপূর্ব এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৭০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপূর্ব দিকে অবস্থান করছিল। এটি আরও ঘণীভূত ও উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে মঙ্গলবার সকাল নাগাদ চট্টগ্রাম-কক্সবাজার উপকূল অতিক্রম করতে পারে। এর প্রভাবে আজ বিকাল থেকে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় এবং সমুদ্র বন্দরসমূহের উপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে ।

আবহাওয়া বার্তায় বলা হয়, ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’-এর প্রভাবে উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, ভোলা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৪-৫ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে। এতে আরও বলা হয়, ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’ অতিক্রমকালে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, পিরোজপুর জেলা সমূহ এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণসহ ঘন্টায় ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটার গতিতে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এছাড়া উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলার সমূহকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে। নদীবন্দর সমূহের জন্য আজ সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত আবহাওয়ার বিশেষ বার্তা বলা হয় খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার অঞ্চলসমূহের উপর দিয়ে পূর্ব/উত্তর-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৬০-৮০ কিলোমিটার গতিতে অস্থায়ীভাবে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। সেই সঙ্গে বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এসব এলাকার নদীবন্দরসমূহকে ২ নম্বর (পুনঃ) ২ নম্বর নৌ-হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। এছাড়া দেশের অন্য একই দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫-৬০ কিলোমিটার গতিতে অস্থায়ীভাবে দমকা/ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। সেই সঙ্গে বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এসব এলাকার নদীবন্দরসমূহকে ১ নম্বর (পুনঃ) ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

সকাল নাগাদ উপকূলে আঘাত হানতে পারে ‘মোরা’

 বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’ আরও ঘণীভূত হয়ে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার উপকূলের দিকে এগিয়ে আসছে। মঙ্গলবার সকাল নাগাদ এটি উপকূলে আঘাত হানতে পারে। সোমবার বিকাল সাড়ে ৩টায় আবহাওয়া অধিদফতরের ১১ নম্বর বিশেষ বুলেটিনে একথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’ আরও সামান্য উত্তরদিকে অগ্রসর হয়ে উত্তর বঙ্গোপসাগর এবং তৎসংলগ্ন পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় (১৮.৪ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯১.৩ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমাংশ) অবস্থান

করছিল।
বিকাল ৩টায় ঘূর্ণিঝড় মোরা চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৪২৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৩৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৯০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপূর্ব এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৪১৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপূর্ব দিকে অবস্থান করছিল। ঘূর্ণিঝড়টি আরও ঘণীভূত ও উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে মঙ্গলবার সকাল নাগাদ চট্রগ্রাম-কক্সবাজার উপকূল অতিক্রম করতে পারে। এদিকে ঘূর্ণিঝড়ের কারণে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরসমূহকে ৭ (সাত) নম্বর পুনঃ ৭ (সাত) নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৭ (সাত) নম্বর বিপদ সংকেত পুনঃ ৭ (সাত) নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে। মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে ৫ (পাঁচ) নম্বর পুনঃ ৫ (পাঁচ) নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৫ (পাঁচ) নম্বর বিপদ সংকেত পুনঃ ৫ (পাঁচ) নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে। ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’ এর অগ্রবর্তী অংশের প্রভাবে সোমবার বিকাল থেকে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় এবং সমুদ্র বন্দরসমূহের ওপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়ের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে। ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, ভোলা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিমড়বাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৪-৫ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
আবহাওয়ার বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’ অতিক্রমকালে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, পিরোজপুর জেলাসমূহ এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণসহ ঘণ্টায় ৬২-৮৮ কিলোমিটার বেগে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে বিশেষ বার্তায়।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn