শেখ জাহাঙ্গীর আলম-আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অব্যাহত অভিযানে রাজধানীর বিভিন্ন ক্লাব, বার ও বাসা-বাড়িতে সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে লকার বা সিন্দুকের। এসবের ভেতরে মিলছে কোটি কোটি নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার ও আগ্নেয়াস্ত্র। এ পটভূমিতে সিন্দুক প্রস্তুতকারী ও বিক্রেতারা বলছেন, একসময় কেবল সোনা ব্যবসায়ীদের মধ্যে সিন্দুক-লকার ব্যবহারের প্রচলন ছিল; এখন বাসা-বাড়িতেও এর চাহিদা বেড়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কেবল রাজধানীর বংশালের ইংলিশ রোডের দোকানগুলো থেকে মাসে শতাধিক লকার বিক্রি হয়। কয়েক বছর আগেও এ চিত্র ভিন্ন ছিল। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বলছেন, অবৈধভাবে আয় করা টাকা ব্যাংকে না রেখে বাসা-বাড়িতে লকারে লুকিয়ে রাখছে অসাধু ব্যক্তিরা।  গত বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) বংশালের ইংলিশ রোডে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মালিটোলা বিপণিবিতানের ওপরে বংশাল থানা কার্যালয়, নিচে রয়েছে স্টিল ফার্নিচারের ৪০টি দোকান। এর মধ্যে ৫টি—হাসান মেটালের দুটি, জুয়েল মেটাল, শাবনাজ স্টিল কিং ও ডিজিটাল লকার হাউজ শুধু সিন্দুক বা লকার বিক্রি করে। প্রতিষ্ঠানগুলো পুরান ঢাকার সিক্কাটোলি, যাত্রাবাড়ীর কাজলা, ভাঙ্গা প্রেস এলাকা ও স্বামীবাগ রেলগেট এলাকার কারখানা থেকে সিন্দুক তৈরি করে আনে। ঢাকার বাইরে ভৈরবের রানীবাজার ও খুলনা থেকেও উন্নতমানের সিন্দুক এনে বিক্রি করে তারা।  এসব প্রতিষ্ঠানের মালিকেরা জানান, তাদের মার্কেট থেকে মাসে শতাধিক সিন্দুক বিক্রি হয়। কোনও কোনও মাসে এর থেকে বেশিও হয়। কয়েক বছর আগেও এত বেশিসংখ্যক সিন্দুক বিক্রি হতো না। দোকানিরা জানান, ক্রেতার অর্ডার অনুযায়ী তারা সিন্দুক তৈরি করেন। সিন্দুক বিক্রির কোনও মৌসুম নেই। সাধারণত সোনা ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন এজেন্ট ব্যাংক তাদের কাছ থেকে সিন্দুক কেনে। বর্তমানে সাধারণ মানুষও বাসা-বাড়িতে সিন্দুক ব্যবহার শুরু করেছে। শাবনাজ স্টিল কিং প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গত ৪০ বছর ধরে আমরা ব্যবসা করছি। সবসময়ই লকার, সিন্দুক বিক্রি হয়। ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ সবাই কিনছে।’ ব্যাংক, ব্যবসায়ী ও ব্যক্তি—সব স্তরেই তাদের ক্রেতা রয়েছে বলে জানান তিনি। এই ব্যবসায়ী জানান, তাদের প্রতিষ্ঠানে ১৬ হাজার থেকে লাখ টাকার বেশি দামের সিন্দুক রয়েছে। মাসের কোনোদিন ১টা বিক্রি হয়, আবার কোনও কোনোদিন ২০-২২টাও বিক্রি হয়। জুয়েল মেটালের ম্যানেজার মো. জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, মাসে তাদের ১০ থেকে ১৫টি সিন্দুক বিক্রি হয়। বাপ্পি স্টিল কিংয়ের স্বত্বাধিকারী মনির হোসেন শিকদার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আগে সোনা ব্যবসায়ী ও ব্যাংকগুলো লকার ব্যবহার করতো। বর্তমানে সাধারণ মানুষও বাসা-বাড়িতে নিজেদের মূল্যবান সম্পদ নিরাপদে রাখতে সিন্দুক বা লকার ব্যবহার করছে।’ পুরান ঢাকার সিক্কাটোলির মাজেদ সরকার রোডে অবস্থিত একটি লকার তৈরির কারখানার মালিক আব্দুল আজিজ বলেন, দোকানিদের অর্ডার অনুযায়ী তারা লকার তৈরি করে সাপ্লাই দেন। ক্রেতার কাছ থেকে সরাসরি কোনও অর্ডার তারা পান না। মাসে ৮-১০টা লকার তৈরি করা সম্ভব হয়। একটি লকার তৈরিতে ৩-৪ দিন সময় লাগে। বড় হলে আরও বেশি সময় লাগে। গত ২৪ সেপ্টেম্বর রাজধানীর বানিয়ানগর, লালমোহন ও নারিন্দায় অভিযান চালিয়ে গেন্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এনামুল হক এনুর ৫টি সিন্দুক থেকে ৫ কোটি টাকা, ৭৩০ ভরি স্বর্ণালংকার ও ২টি পিস্তল, ১টি রিভলবার, ১টি শটগান, ২টি ইয়ারগান উদ্ধার করে র‌্যাব। এসব সিন্দুক তিনি কিনেছিলেন ইংলিশ রোডের শাবনাজ স্টিল কিং থেকে। র‌্যাব কর্মকর্তারা জানান, যুবলীগ নেতা এনামুল গত ১৯ সেপ্টেম্বর এসব সিন্দুকের অর্ডার দেন, ২২ সেপ্টেম্বর তিনি সেগুলো বুঝে নেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে শাবনাজ স্টিল কিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা ব্যবসায়ীরা সিন্দুক বা লকার বিক্রি করি। অর্ডার দিলে আমরা তৈরি করে দিই।’ এরপর ক্রেতা কী কাজে সেটি ব্যবহার করবেন, কোথায় নিয়ে যাবেন, তা তাদের দেখার বিষয় নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn