সিকিম সীমান্তে সৃষ্ট উত্তেজনা নিয়ে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় চলছে চীন ও ভারতের মধ্যে। গতকাল চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী অরুন জেটলি’র মন্তব্যের জবাব দিয়েছে। জেটলিকে উদ্দেশ্য করে মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জেং শুয়াং বলেছেন, ‘তিনি এটা ঠিকই বলেছেন যে, আজকের ভারত ১৯৬২’র ভারত থেকে আলাদা। যেমনটা আলাদা চীনও।’ এর আগে ২৯শে জুন অরুনাচল প্রদেশ নিয়ে ’৬২ সালে হওয়া দু’দেশের মধ্যকার যুদ্ধের কথা টেনে চীন হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছিল, ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয়া উচিত ভারতের। এর প্রতিক্রিয়ায় পরদিন অরুন জেটলি বলেছিলেন, আজকের ভারত ১৯৬২ থেকে আলাদা। এ খবর দিয়েছে টাইমস অব ইন্ডিয়া, এনডিটিভি ও জি নিউজ। খবরে বলা হয়, চীন ও ভুটানের মধ্যে ডোকলাম বা ডোংলোং নামের বিতর্কিত ভূখণ্ড নিয়ে ভারতীয় ও চীনা সেনাদের মধ্যে সাম্প্রতিক অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। এ নিয়ে দু’পক্ষই একে অপরকে উদ্দেশ্য করে আক্রমণাত্মক মন্তব্য করছে। ৬২’র যুদ্ধ থেকে ভারতের শিক্ষা নেয়া উচিত চীনের তরফে আসা মন্তব্যের জবাবে অরুন জেটলি আরো বলেছিলেন, সিকিম সেক্টরে ভারতীয় ও চীনা সেনাদের মধ্যকার বর্তমান অচলাবস্থা উস্কে দিয়েছে বেইজিং। জেটলির মন্তব্যের জবাবে জেং শুয়াং বলেন, ভারতের মতো আজকের চীনও আলাদা। তিনি আরো বলেন, ‘আমি আশা করবো ভারতীয় পক্ষ ১৮৯০ সালের চুক্তির প্রতি অবিলম্বে সম্মান দেখাবে আর সীমান্ত সেনাদের ভারতীয় সীমানার ভেতরে সরিয়ে নেবে যারা চীনের ভূখণ্ডে প্রবেশ করেছে।’ চীন তাদের আঞ্চলিক সার্বভৌমত্ব রক্ষার্থে প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ নেবে বলে হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
শুক্রবার জেটলি বলেছিলেন, হিমালয় সীমান্তে রাস্তা নির্মাণ নিয়ে অচলাবস্থা উস্কে দিয়েছে বেইজিং যা ভারতের জন্য নিরাপত্তা উদ্বেগের কারণ। ওদিকে, বেইজিং অভিযোগ করছে ভারতীয় সেনারা ওই রাস্তা নির্মাণ বন্ধের জন্য সিকিম থেকে সীমান্ত পার করে তাদের ভূখণ্ডে প্রবেশ করেছে। চীন বলছে, ১৮৯০ সালে বৃটেনের করা চুক্তি মোতাবেক ওই ভূখণ্ড তাদের নিয়ন্ত্রণে। এদিকে, ভুটানও এ ইস্যুতে চীনের কাছে আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ পাঠিয়েছে। দেশটি বলেছে, ওই রাস্তা দ্বিপক্ষীয় চুক্তির লঙ্ঘন। ভুটানের সঙ্গে চীনের কোনো কূটনৈতিক সম্পর্ক না থাকলেও ওই ভূখণ্ডের সার্বভৌমত্ব নিয়ে দু’পক্ষের দ্বন্দ্ব রয়েছে। জেটলি বলেন, ‘ভুটানের ইস্যু করা বিবৃতি থেকে এটা স্পষ্ট যে, ওই ভূখণ্ড ভুটানের। এটা ভারতীয় ভূখণ্ডের কাছে অবস্থিত। সীমান্ত অঞ্চলে নিরাপত্তা দেয়ার জন্য ভারত ও ভুটানের মধ্যে সমঝোতা রয়েছে।’
চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অভিযোগ করেছেন, ডোকলাম এলাকায় ‘অবৈধ প্রবেশ ধামাচাপা দেয়ার জন্য’ ভুটানকে ব্যবহার করছে ভারত।শুয়াং বলেন, ভারত ও ভুটানের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে চীনের কোনো আপত্তি নেই তবে ভুটানকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করে চীনা ভূখণ্ডে ভারতীয় পক্ষের অনধিকার প্রবেশের তীব্র আপত্তি রয়েছে দেশটির। শুয়াং আরো বলেন, ‘ভুটান আগে জানতোও না যে ডোকলাম এলাকায় ভারতীয় সেনারা প্রবেশ করেছে যা ভারতের করা দাবির সঙ্গে সঙ্গতপূর্ণ না।’ সিকিমের অচলাবস্থা নিরসনে ভারত ও চীনের মধ্যে কোনো আলোচনা হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে শুয়াং বলেন, ‘সীমান্তে অবৈধ প্রবেশের ঘটনা ঘটার পর চীন দিল্লি ও বেইজিংয়ে ভারতীয় পক্ষের বিভিন্ন পর্যায়ে তাদের অবস্থান তুলে ধরেছে।’ তিনি বলেন, ‘দু’পক্ষের কূটনৈতিক যোগাযোগের মাধ্যম উন্মুক্ত ও মসৃণ।’

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn