ওয়াহিদুর রহমান ওয়াহিদ-::

জগন্নাথপুরে বন্যার পানিতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। কয়েক দিনের একটানা বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে নদ-নদীর পানির বৃদ্ধি পেয়ে বন্যার সৃষ্টি হয়। বাড়িঘরে পানি উঠে যাওয়ায় প্রায় পানিবন্দি অবস্থায় জীবন-যাপন করছেন অত্র এলাকার লোকজন। ফলে বন্যায় কবলিত লোকজনের দুর্ভোগ দিনদিন বেড়েই চলেছে। এর মধ্যে অনেকে নিজেদের বাড়িঘর ছেড়ে নিরাপদ উঁচু স্থান আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। আবার অনেকে পানির সাথে মোকাবেলা করে নিজের ঘরে উঁচু বাঁশের মাচাং ও কাঠের চৌকি দিয়ে কোন রকমে জীবন-যাপন করছেন। তবে গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন তারা। গো-খাদ্য সংকটে অনেকে তাদের গবাদিপশু কম মূল্যে বিক্রি করে দিচ্ছেন বলে ভোগান্তির শিকার অনেকে জানান। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেন জগন্নাথপুরের মানুষের পিছু ছাড়ছে না। বিগত বৈশাখে অকাল বন্যায় ফসল হানির ক্ষত সেরে উঠার আগেই এখন আবার বন্যার পানিতে বাড়িঘর প্লাবিত হয়ে নতুন করে ভোগান্তি বেড়েছে।

এছাড়া বন্যার পানিতে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে গ্রামীণ রাস্তা-ঘাট তলিয়ে যাওয়ায় লোকজন চলাচল করতে পারছেন না। নিয়মিত স্কুলে যেতে পারছেন না শিক্ষার্থীরা। নৌকাযোগে কোন রকমে যোগাযোগ রক্ষা করছেন পানি বন্ধি হওয়া নদী ও হাওর পারের লোকজন। তাছাড়া জগন্নাথপুর পৌর শহরের স্লুইচ গেইটের সামনে মাটির বাঁধ দিয়ে বন্ধ করে দেয়ায় পৌর শহরের নলজুর নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। যদিও স্লুইচ গেইটের মাটির বাঁধের উপর দিয়ে বর্তমানে প্রবল বেগে পানি যাচ্ছে। পানির নিচে থাকা এ মাটির বাঁধ কেটে দেয়া হলে নদীতে পানি চলাচল স্বাভাবিক হতো বলে স্থানীয়রা জানান।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলার মিরপুর ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জমির উদ্দিন জানান, আমার ইউনিয়নে বন্যার পানিতে ১৫/২০টি গ্রামীণ রাস্তার ক্ষতি হলেও বাড়িঘরে এখনো পানি উঠেনি। জগন্নাথপুর পৌরসভার মেয়র আলহাজ্ব আবদুল মনাফ জানান, বন্যার পানিতে জগন্নাথপুর পৌর এলাকার প্রায় ৪০/৫০ টি রাস্তার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে এবং কয়েক শতাধিক পরিবারের লোকজন পানিবন্ধি রয়েছেন।

চিলাউড়া-হলদিপুর ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান বাবুল মাহমুদ জানান, বন্যায় আমাদের ইউনিয়নের প্রায় সাড়ে ৪ শতাধিক পরিবারের লোকজন পানি বন্ধিসহ ২ টি রাস্তার ক্ষতি হয়েছে। সেই সাথে স্থানীয় গোলাপাড়া পুঞ্জি গ্রামের ব্রিজটিও হুমকির মুখে রয়েছে। রাণীগঞ্জ ইউনিয়নের ইউপি সদস্য মুকিত মিয়া জানান, বন্যায় আমাদের ইউনিয়নের নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বেশ কয়েকটি রাস্তা-ঘাটেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়। সৈয়দপুর-শাহারপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান তৈয়ব মিয়া কামালী জানান, বন্যায় আমার ইউনিয়নের প্রায় এক হাজার পরিবারেরর লোকজন পানিবন্ধি আছেন এবং প্রায় ৭০ ভাগ গ্রামীণ সংযোগ রাস্তাঘাটের ক্ষতি হয়েছে। আশারকান্দি ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়াম্যান জাবেদ চৌধুরী জানান, বন্যায় আমার ইউনিয়নের প্রায় শতাধিক পরিবার পানি বন্ধিসহ বেশ কয়েকটি রাস্তাঘাট পানির নিচে তলিয়ে গেছে।

পাইলগাঁও ইউপি চেয়ারম্যান মখলুছ মিয়া জানান, বন্যায় আমার ইউনিয়নের কমপক্ষে ৭০০টি পরিবার পানি বন্ধি রয়েছেন। সেই সাথে ৫ টি রাস্তা তলিয়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ মাসুম বিল্লাহ বলেন, বন্যার পানি নয়, স্বাভাবিক বর্ষার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে তেমন ক্ষয়-ক্ষতি হয়নি। তবে উপজেলার নদী পারের বাড়িঘরের আঙিনায় পানি উঠেছে। প্রশাসনের উদ্যোগে এসব পানি বন্ধি লোকজনের মধ্যে ৪ হাজার কেজি চাল বিতরণের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn