লায়েকুজ্জামান :: রাজনৈতিক সুবিধা আদায়ে দলবদল বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন কিছু নয়। নীতি-আদর্শের কথা ভুলে ফায়দা লুটতে অতীতে অনেকেই যোগ দিয়েছেন ক্ষমতাসীন দলে। এক দল ছেড়ে অন্য দলে যোগ দেওয়ার এই প্রক্রিয়া বর্তমানে অনেকটা পাল্টে গেছে। বর্তমানে যে প্রক্রিয়ায় নিজ দল ছেড়ে ক্ষমতাসীন দলে যোগ দেওয়া হচ্ছে তাকে আর দলবদল বলা যায় না। বলা যায়, অনুপ্রবেশ। এই প্রক্রিয়ায় বিএনপি ও জামায়াত-শিবির ছেড়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশ শুরু হয় ২০০৯ সাল থেকে। আর এই অনুপ্রবেশ স্রোতের আকার ধারণ করে ২০১৪ সালে চারদলীয় জোটের সহিংস আন্দোলন দমে যাওয়ার পর থেকে। ২০১৫ সালের ৮ নভেম্বর গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘জামায়াত-শিবির ও বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে নয়।’ কিন্তু তার পরও অনুপ্রবেশ থেমে নেই। নানা প্রক্রিয়ায় জামায়াত-শিবির-বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশের পর অনেকে পদ-পদবিও বাগিয়ে নিচ্ছেন। বর্তমানে ঢালাওভাবে এই প্রক্রিয়া বন্ধ থাকলেও এরই মধ্যে যাঁরা যোগ দিয়েছেন তাঁদের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পদে বসে পড়েছেন।
যুদ্ধাপরাধী দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির আদেশ হওয়ার পর দেশের যে কয়েকটি স্থানে বেপরোয়া নাশকতার ঘটনা ঘটে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য চাঁপাইনবাবগঞ্জ, জয়পুরহাট ও সাতক্ষীরা। এই তিন জেলায় নাশকতা মামলার একাধিক অভিযুক্ত জামায়াত-শিবির নেতা বর্তমানে আওয়ামী লীগে।২০১৬ সালে বিজয়ের মাসে আওয়ামী লীগে যোগ দেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার বারঘরিয়া ইউনিয়ন জামায়াতের আমির মাওলানা আবুল খায়ের। তার আগে একই বছর ১ অক্টোবর জেলা জামায়াতের কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা সোহরাব আলী, জামায়াতের শ্রমিক সংগঠন শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনের কেন্দ্রীয় নেতা আফরোজ জুলমত আলী, জামায়াত নেতা আবদুল্লাহহেল বাকী, মিজানুর রহমান আওয়ামী লীগে যোগ দেন। এঁরা সবাই একাধিক নাশকতা মামলার আসামি। যোগ দেওয়ার পর ধীরে ধীরে তাঁদের মামলাগুলো অন্তরালে চলে যেতে থাকে। ২০১৫ সালের ৮ জুন জয়পুরহাটে আওয়ামী লীগের এমপি সামছুল আলম দুদুর হাতে ফুলের তোড়া দিয়ে আওয়ামী লীগে যোগ দেন নাশকতা ও সহিংসতার ১০ মামলায় অভিযুক্ত পাঁচবিবি উপজেলার কুসুম্বা ইউনিয়ন জামায়াতের আমির আবদুস সালাম। ২০১৩ সালের ৩ মার্চ পাঁচবিবি থানায় দায়ের হওয়া আওয়ামী লীগের কর্মী ও সংখ্যালঘুদের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের একটি মামলাসহ ৯টি মামলা রয়েছে তাঁর নামে।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয় ২০১৬ সালের অক্টোবর মাসে। কেন্দ্রীয় কাউন্সিল সামনে রেখে ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা কাউন্সিল শুরু হয় ২০১৫ সালের জানুয়ারি মাস থেকে। চলে ২০১৬ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত। তবে তৃণমূলে কোন্দল ও রাজনৈতিক চাপে প্রায় ৫০ ভাগ ইউনিটে কাউন্সিল হতে পারেনি। এসব কাউন্সিল না করেই কেন্দ্রীয় কাউন্সিল হয়েছিল।বিশ্লেষণে দেখা গেছে, জামায়াত থেকে যারা ২০১৫ সালের জানুয়ারি মাসের আগে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছে তাদের একটি অংশ দলীয় কাউন্সিলের মাধ্যমে দলের পদ-পদবি পেয়েছে। যারা পদ-পদবি পায়নি তাদের বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, মাদরাসা পরিচালনা পরিষদ, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ নানাভাবে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। বিভিন্ন গণমাধ্যম, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের সূত্র ও অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ২০০৯ সাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত থেকে আওয়ামী লীগে ৬২টি যোগদানের ঘটনা ঘটেছে। সংখ্যার দিক দিয়ে যোগদানে বিএনপির সংখ্যা বেশি হলেও জামায়াত থেকে যোগদান করা নেতা-কর্মীদের সংখ্যা সাড়ে চার থেকে পাঁচ হাজার। ইতিমধ্যে যোগদান করা এসব জামায়াত-শিবিরের দুই শতাধিক নেতাকর্মী আওয়ামী লীগের পদ-পদবি পেয়েছে। যার পরিমাণ ৪ শতাংশ।
২০১৫ সালে শিবির থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দেন রাজশাহী বাগমারার উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক মোল্লা এম আলতাফ হোসেন। একসময় তিনি ছিলেন ইসলামী ছাত্রশিবির রাজশাহী পশ্চিম সাংগঠনিক জেলার সভাপতি। একই বছর আওয়ামী লীগে যোগ দেন বাগমারায় বাংলা ভাইয়ের সহযোগী হিসেবে পরিচিত জেএমবি নেতা আবদুস সালাম। তিনি বর্তমানে বাগমারা উপজেলা আওয়ামী লীগের কৃষিবিষয়ক সম্পাদক। একই সঙ্গে যোগ দেওয়া বাগমারা উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি নুরুল ইসলামকে করা হয়েছে উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য। অনুসন্ধানে জানা যায়, বাগমারা উপজেলার বেসরকারি স্কুল-কলেজ-মাদরাসার পরিচালনা পর্ষদ থেকে পুরনো আওয়ামী লীগ নেতাদের সরিয়ে জামায়াত নেতাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

ঝালকাটির রাজাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণবিষয়ক সম্পাদক মোস্তফা কামাল শিকদার একসময় ছিলেন রাজাপুর উপজেলা ছাত্রশিবিরের সভাপতি। বর্তমানে তিনি নৌকা প্রতীক নিয়ে মঠবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত চেয়ারম্যান। ঝালকাটির সৌজালিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি ও নৌকা প্রতীকে বিজয়ী ওই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহমুদ হাসান রিপন একসময়ে ছিলেন বরগুনার বেতাগী কলেজ ছাত্রশিবিরের সভাপতি। ঝালকাটির রাজাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রিয়াজউদ্দিন মাদবর বলেন, ‘উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণবিষয়ক সম্পাদক মোস্তফা কামাল শিকদার একসময় ছাত্রশিবিরের নেতা ছিলেন, এটা এলাকার সব মানুষ জানে। এমপি তাঁকে দলে এনেছেন। আমরা প্রতিবাদ করেছি, লাভ হয়নি।’
কাঁঠালিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তরুণ শিকদার  বলেন, মাহমুদ হাসান রিপন সৌজালিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি একসময়ে বেতাগী কলেজ ছাত্রশিবিরের সভাপতি ছিল। এরা স্বাধীনতাবিরোধী পরিবারের লোক। এমপি বি এইচ হারুন এই স্বাধীনতাবিরোধী পরিবারের লোকদের দলে জায়গা দিয়েছেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য হয়েছেন ওই উপজেলা জামায়াতের সদস্য আবু তাহের খান।দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর নির্বাচনী এলাকা পিরোজপুরের ইন্দুরকানী উপজেলার বালিপাড়া ইউনিয়ন ছাত্রশিবিরের সাধারণ সম্পাদক শেখ শামীম বর্তমানে একই ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক।
ইন্দুরকানীর পাড়েরহাট ইউনিয়ন জামায়াতের সাবেক সদস্য দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ঘনিষ্ঠ বলে এলাকায় পরিচিত গিয়াসউদ্দিনকে ওই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে। ইন্দুরকানী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান বলেন—শুনেছি, ছাত্রশিবির থেকে একজন যোগ দিয়েই যুবলীগের বালিপাড়া ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন। এ বিষয়ে যুবলীগ নেতাদের সঙ্গে কথা বললে ভালো হয়। গিয়াসউদ্দিন সম্পর্কে তিনি বলেন—শুনেছি, তিনি ছাত্রজীবনে অন্য রাজনীতি করতেন, তবে অনেক দিন ধরে আওয়ামী লীগ করেন। তিনি স্থানীয় একটি মাদরাসার সুপার। এ বিষয়ে ইন্দুরকানী উপজেলা যুবলীগ সভাপতি আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘আমরাও শুনেছি শামীম ছাত্রশিবির করতেন, তবে কোনো প্রমাণ পাইনি।’ ইন্দুরকানী উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন গাজী বলেন, শেখ শামীম ছিলেন বালিপাড়া ইউনিয়ন শিবিরের সাধারণ সম্পাদক। তাঁকে দলে আনার প্রতিবাদে এলাকায় মানববন্ধন হয়েছে।
ঝিনাইদহ জেলার হরিণাকুণ্ডু উপজেলার কাপাসাঁথিয়া ইউনিয়ন জামায়াতের সাবেক সদস্য রওশন আলী বর্তমানে ওই ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি। ২০১০ সালে হরিণাকুণ্ডু উপজেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন আহ্বায়ক বর্তমান সভাপতি মশিউর রহমান জোয়ার্দারের মাধ্যমে তিনি দলে যোগ দেন।
নারায়ণগঞ্জের আড়াই হাজার উপজেলার খাককান্দা ইউনিয়ন জামায়াতের সাবেক প্রচার সম্পাদক তোফাজ্জেল হোসেনকে ইউনিয়ন ওলামা লীগের সভাপতি করা হয়েছে।
বরিশালের গৌরনদী উপজেলা জামায়াতের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক হাফেজ নুরুল হক বর্তমানে গৌরনদী উপজেলা ওলামা লীগের সভাপতি। ওলামা লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার আগে যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন উপজেলা জামায়াতের সদস্য মাওলানা আনিসুর রহমান। তাঁকে বর্তমান কমিটির সদস্য করা হয়েছে। অন্যদিকে অন্য কোনো কমিটির কাউন্সিল না হওয়া ও ওলামা লীগে জামায়াত থেকে যোগ দেওয়াদের সংখ্যা বেশি হওয়ার কারণে উপজেলা জামায়াতের সাবেক সদস্য জাফর শরীফকে স্থানীয় আল-হেলাল স্কুলের পরিচালনা কমিটির সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। গৌরনদী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এইচ এম জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘হাফেজ নুরুল হক, মাওলানা আনিসুর রহমান ও জাফর শরীফ—সবাই জামায়াতের রাজনীতি করতেন। তবে নুরুল হক বর্তমানে ওলামা লীগে নেই। সম্প্রতি কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়েছে। তবে তাঁরা তিনজন পদে না থাকলেও আমাদের দলে আছেন্। আমাদের সঙ্গে মিটিং-মিছিল করেন।’
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার আগরদাঁড়ি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ মাহাবুবুর রহমান ছিলেন সদর উপজেলা জামায়াতের সদস্য। দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির আদেশ হওয়ার পর জামায়াতের নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যে পিটিয়ে হত্যা করে আওয়ামী লীগ নেতা প্রভাষক মামুনকে। মামুন হত্যাসহ দুটি হত্যা মামলার আসামি এই মাহাবুবুর রহমান ।সদর উপজেলার ঝাউডাঙ্গা ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের বর্তমান সহসভাপতি আনোয়ারুল ইসলাম  নাশকতার মামলায় গ্রেপ্তার হন। ওই সময় তিনি জামায়াত নেতা ছিলেন। মুক্তি পাওয়ার পর দলে যোগ দেন।বর্তমানে ঝাউডাঙ্গা ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি বনি আমিন একসময় ছিলেন ওই ইউনিয়ন ছাত্রশিবিরের সভাপতি। একই ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সহসভাপতি আবুল হোসেন ছিলেন ওই ওয়ার্ড ছাত্রশিবিরের সহসভাপতি।সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার প্রভাবশালী জামায়াত নেতা, উপজেলা জামায়াতের সাবেক সদস্য রেজাউল করিমকে  শ্যামনগরের কৈখালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি করা হয়েছে।শ্যামনগরের আটালিয়া ইউনিয়ন শিবিরের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাসান বর্তমানে ওই ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি।সাতক্ষীরা সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শওকত আলী বলেন, আগরদাড়ি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাহাবুবু র রহমান জামায়াত নয়, বিএনপি করতেন। তবে তিনি সাঈদীর মামলার রায়ের পর জামায়াতের হাতে নিহত আওয়ামী লীগ নেতা প্রভাষক মামুন হত্যা মামলার আসামি। মাহবুবুর রহমান কি জামায়াত অফিস থেকে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, উনি বিএনপি হিসেবে গ্রেপ্তার হন।
নাটোরের লালপুর বিলমারিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য এবং দুরদুরিয়া কলেজের অধ্যক্ষ করা হয়েছে ছাত্রশিবির নেতা আবু রায়হানকে। তিনি আবদুলপুর কলেজ ছাত্রশিবিরের সভাপতি ছিলেন। ২০০৩ সালে আবদুলপুর কলেজে ছাত্রলীগ-শিবির সংঘর্ষের সময় ছাত্রশিবিরের নেতারা ছাত্রলীগ নেতা আহসান হাবিব বকুলের হাত কেটে নিয়ে উল্লাস মিছিল করে। সে মামলার আসামি ছিলেন এই আবু রায়হান।
লালপুরের আরবাব ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য করা হয়েছে আবু তালেবকে। তিনি ছিলেন উপজেলা জামায়াতের সদস্য। দয়ারামপুর ইউনিয়ন জামা য়াতের সভাপতি আলী আকবর বর্তমানে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য। তাঁকে তালতলা মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি করা হয়েছে।লালপুর ইউনিয়ন যুব লীগের সদস্য করা হয়েছে ছাত্রশিবিরের সক্রিয় কর্মী জামিল আকতারকে। তাঁর চাচা আলাউদ্দিন জামায়াতের কেন্দ্রীয় কমিটির রোকন। লালপুর উপজেলা জামায়াতের সদস্য বিত্তবান আমজাদ হোসেনকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়েছে।লালপুর উপজেলা ছাত্রশিবির নেতা নয়া দিগন্ত পত্রিকার স্থানীয় সংবাদদাতা আবু রায়হানকে উপজেলা ছাত্রলীগের সদস্য পদ দেওয়া হয়েছে।লালপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক, কেন্দ্রীয় উপকমিটির সাবেক নেতা, সাবেক এমপি মমতাজউদ্দিনের ছেলে শীমম আহমেদ সাগর বলেন, ‘দলে জামায়াত-শিবিরকে স্থান দেওয়ার প্রতিবাদ করায় আমি ও আমার মা সাবেক এমপি শেফালী মমতাজকে কমিটি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।’
ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলা জামায়াতের সভাপতি আবু বকর খান আওয়ামী লীগে যোগ দেন ২০১৬ সালে। যোগদান অনুষ্ঠানে ঘোষণা করা হয়, দলীয় কাউন্সিল হয়ে যাওয়ায় তাঁকে আপাতত কমিটিতে পদ দেওয়া যাচ্ছে না। তবে যোগদানকারী সবাইকে আওয়ামী লীগের সদস্য করে নেওয়া হলো।জামায়াত-জেএমবি থেকে  দলে আসা নেতাদের আওয়ামী লীগের পদ-পদবি দেওয়ার কথা স্বীকার করে বাগমারা পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম  বলেন, ‘আমরা এদের দলে নেওয়ার বিষয়ে প্রতিবাদ করে কোনো প্রতিকার পাইনি। এখানে এমপির কথায় সংগঠন চলে, দলের নেতাদের পাত্তা নেই।’
২০১৫ সালে রাজশাহীর পুটিয়ায় একসঙ্গে আওয়ামী লীগে যোগ দেন এক ডজন জামায়াত নেতা। তাঁদের মধ্যে পুটিয়া উপজেলার জিউপাড়া ইউনিয়ন  কৃষক লীগের সভাপতি করা হয়েছে উপজেলা জামায়াতের প্রভাবশালী সদস্য আরিফ হোসেনকে। একই কমিটির সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে জামায়াত নেতা মজিবুর রহমানকে, সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়েছে পুটিয়া থানা জামায়াতের আরেক নেতা কাদের আলীকে।পুটিয়া আসনে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য এমপি প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহসান-উল হক মাসুদ বলেন, জামায়াত-বিএনপি থেকে দলে লোক এনে পদ-পদবি দেওয়া হয়েছে, এটা সত্য। তিনি বলেন, এখানে উপজেলা ও জেলার রাজনীতির মধ্যে সমন্বয় নেই। এমপিরা যেমন মনে করেন প্রশাসন তাঁদের কথায় চলবে, তেমনি মনে করেন দলও তা-ই।এ বিষয়ে ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘শুনেছি, বিএনপি-জামায়াতের হাজার ত্রিশেক নেতাকর্মী আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশ করেছে। সঠিক পরিসংখ্যান নিয়ে আমি এখনো কাজ করিনি। তবে সংখ্যা যা-ই হোক, এরা অনুপ্রবেশ করে দলে পদ পেয়েছে—এ কথা সত্যি। সংখ্যা ৩০ না হয়ে যদি তিন হাজারও হ য় বা ৩০০-ও হয়, ওরা কিন্তু সিদ্ধান্ত নিয়ে অনুপ্রবেশ করেছে—এটা উদ্বেগজনক। কারণ জামায়াত ও বিএনপির জামায়াতপন্থীরা সিদ্ধান্ত নিয়েই প্রবেশ করে। কারণ তারা জঙ্গি হয়ে বাইরে থে কে কিছু করতে পারেনি, এখন ভেতরে  থেকে কিছু করতে চায়।’দলে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের অনুপ্রবেশ ও পদ-পদবি পাওয়াদের সংখ্যা নিয়ে দ্বিমত প্রকাশ করে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ  বলেন, ‘কিছু অনুপ্রবেশ তো ঘটেছে, হয়তো তাদের কেউ কেউ গোপনে পদও বাগিয়ে নিয়েছে। আমরা বিষয়টি দেখব। জামায়াত-শিবিরের জায়গা আওয়ামী লীগে কেন হবে?’-কালের কন্ঠের সৌজন্যে

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn