ঢাকা :  মহান স্বাধীনতার ঘোষক, বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমান বীর উত্তমের ৩৬তম শাহাদতবার্ষিকী আজ। ১৯৮১ সালের এইদিনে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে একদল বিপথগামী সেনাসদস্যের গুলিতে শহীদ হন জিয়াউর রহমান। শোকাবহ এই দিনটি স্মরণে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে মিলাদ মাহফিল, আলোচনা সভা ও দরিদ্রদের মাঝে খাবার বিতরণসহ নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠন।

বহুদলীয় গণতন্ত্র, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ এবং উৎপাদনমুখী রাজনীতির প্রবক্তা হিসেবে জিয়াউর রহমান পরিচিতি পেয়েছিলেন খুব অল্প সময়ে। রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নেওয়ার পাঁচ বছরের মাথায় ১৯৮১ সালের এই দিনটিতে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে একদল বিপথগামী সেনাসদস্যের গুলিতে শহীদ হন জিয়াউর রহমান।

বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী জিয়াউর রহমান ১৯৩৬ সালের ১৯ জানুয়ারি বগুড়ার গাবতলী থানার বাগবাড়ীতে মাতুলালয়ে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মনসুর রহমান কলকাতায় একজন কেমিস্ট হিসেবে সরকারি চাকরিতে নিয়োজিত ছিলেন। শৈশব ও কৈশোরের একটি সময় গ্রামে কাটিয়ে তিনি পিতার সঙ্গে কলকাতায় এবং দেশ বিভাগের পর করাচিতে চলে যান। শিক্ষাজীবন শেষে ১৯৫৩ সালে পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমিতে অফিসার ক্যাডেট হিসেবে ভর্তি হন। ১৯৫৫ সালে তিনি কমিশন লাভ করেন। সামরিক জীবনে কঠোর শৃঙ্খলার মধ্যেও তিনি একের পর এক কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন। ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধে খেমকারান সেক্টরে অসীম সাহসিকতার সঙ্গে একটি কোম্পানির অধিনায়ক হিসেবে যুদ্ধ পরিচালনা করেন। তার কোম্পানি যুদ্ধে সবচেয়ে অধিক খেতাব লাভ করে। ব্যক্তিগত নৈপুণ্যের জন্য তিনি নিজেও একটি পিস্তল উপহার পান। সৈনিকজীবনে তিনি যেমন চরম পেশাদারিত্ব দেখিয়েছেন ঠিক জাতীয় সকল সঙ্কটকালেও শক্ত হাতে হাল ধরেছেন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তানি বাহিনী নিরস্ত্র জনতার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ার পর চট্টগ্রাম কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন জিয়াউর রহমান। ৯ মাসের মুক্তি সংগ্রামে তিনি একটি সেক্টরের অধিনায়ক হিসেবে সমরনায়কের দায়িত্ব পালন করেন। বীরত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি বীরোত্তম খেতাব লাভ করেন।

১৯৭৫ সালে দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এক বিশেষ প্রেক্ষাপটে জিয়াউর রহমান রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ৩ নভেম্বর ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে সামরিক অভ্যুত্থানে খন্দকার মোশতাক আহমদ ক্ষমতাচ্যুত হন এবং সেনাবাহিনীর তৎকালীন উপপ্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে গৃহবন্দি করা হয়। জাতির ভাগ্যাকাশে তখন এক অনিশ্চয়তা বিরাজ করছিল। সেনাবাহিনীতে বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়ে। অবস্থা এতটাই শোচনীয় ছিল যে প্রকৃতপক্ষে সে সময় দেশে কোনো সরকার ছিল না। কোথা থেকে কি হচ্ছে তা জানতে পারছিলেন না কেউ। চারদিকে এক অনিশ্চয়তা-বিশৃঙ্খলার মাঝে আধিপত্যবাদের শ্যেন দৃষ্টিতে উৎকণ্ঠিত ছিল সারা জাতি। ইতিহাসের সেই বিশেষ ক্ষণে সিপাহি-জনতার মিলিত প্রয়াসে জিয়াউর রহমান বন্দিদশা থেকে মুক্ত হন এবং নেতৃত্বের হাল ধরেন।

এরপর থেকে জিয়াউর রহমানকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। তিনি শুধুই এগিয়ে গেছেন। ব্যক্তিগত সততা, পরিশ্রমপ্রিয়তা, কর্তব্যনিষ্ঠা, দৃঢ় নেতৃত্ব দেয়ার যোগ্যতা, নির্লোভ, নির্মোহ, গভীর দেশপ্রেম প্রভৃতি গুণাবলি দিয়ে তিনি জাতির মধ্যে নতুন করে জাগরণের সৃষ্টি করেন। তার প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দল বিএনপিতে একদিকে যেমন চরম বামপন্থীরা স্থান পায় তেমনি চরম ডানপন্থীরাও জায়গা করে নেন। একটি উদার ও মধ্যপন্থী দল হিসেবে বিএনপিকে গড়ে তোলেন তিনি, যা বাংলাদেশের সমাজ বাস্তবতায় সবচেয়ে প্রয়োজন ছিল। জিয়াউর রহমান বিভক্তির রাজনীতি দূর করে ঐক্যের রাজনীতির ডাক দেন। রাজনীতিবিদদের তিনি জনগণের দোরগোড়ায় যেতে বাধ্য করেন। বিশাল কর্মযজ্ঞের সূচনা করে জনগণের মধ্যে তিনি সাড়া জাগান। মাত্র ছয় বছরের জন্য রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পান শহীদ জিয়া। কিন্তু এ ছয় বছরেই তিনি বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন এবং তলাবিহীন ঝুড়ির অপবাদ থেকে এ জাতিকে মুক্ত করেন। স্বজনপ্রীতি, সর্বগ্রাসী দুর্নীতি, রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুণ্ঠনসহ নানান অপকর্মে জাতির যখন ত্রাহী অবস্থা ঠিক তখনই জিয়াউর রহমান শক্ত হাতে দেশে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনেন। তিনি সমগ্র জাতির মধ্যে এক নব জাগরণের সূচনা করেন। সাদামাটা জীবন-যাপনের এমন দৃষ্টান্ত বাংলাদেশ কেন সমসাময়িক রাজনীতিবিদদের ইতিহাসে খুব বেশি নেই। তার চরিত্রে কোনো কপটতা ছিল না।

বাংলাদেশকে একটি আধুনিক রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে জিয়াউর রহমান যখন অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন, বিশ্বে দ্রুত অগ্রসরমান দেশ হিসেবে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছিল ঠিক তখনি দেশি-বিদেশি চক্রান্তের অংশ হিসেবে মাত্র ৪৫ বছর বয়সে ঘাতকদের তপ্ত বুলেটে প্রাণ হারান বাংলাদেশের ইতিহাসের ক্ষণজন্মা এই রাষ্ট্রনায়ক। তিনি যে কত জনপ্রিয় ছিলেন তা বুঝা গিয়েছিল ঢাকায় মানিক মিয়া এভিনিউয়ে অনুষ্ঠিত তার স্মরণকালের নামাজে জানাজায়। সেদিন পত্রিকায় শিরোনাম হয়েছিল ‘একটি লাশের পাশে সমগ্র বাংলাদেশ।’

কর্মসূচি : শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাহাদতবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির উদ্যোগে ২৯ মে সোমবার সকাল ১০টায় রাজধানীর রমনাস্থ ইনস্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ার্স-বাংলাদেশ মিলনায়তনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিএনপির জাতীয় নেতৃবৃন্দ ছাড়াও দেশের বরেণ্য ব্যক্তিবর্গ বক্তব্য রাখেন। এছাড়া সাবেক  প্রেসিডেন্ট শহীদ জিয়াউর রহমান বীর উত্তমের ৩৬তম শাহাদতবার্ষিকী উপলক্ষে ৩০ মে ২০১৭ মঙ্গলবার সকাল ১০টায় শেরেবাংলা নগরস্থ শহীদ জিয়াউর রহমানের মাজারে বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে দলের জাতীয় নেতৃবৃন্দসহ সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ ও ফাতেহা পাঠ করবেন। এছাড়াও যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদল, মহিলাদলসহ অন্যান্য অঙ্গসংগঠনও প্রয়াত নেতার শাহাদতবার্ষিকীতে পৃথক কর্মসূচি পালন করবে। শাহাদতবার্ষিকীর অন্যান্য কর্মসূচির মধ্যে থাকছে রক্তদান কর্মসূচি, মিলাদ মাহফিল ও আলোচনা সভা। সারাদেশের মহনগর, জেলা ও উপজেলা এলাকাগুলোতেও অনুরূপ কর্মসূচি পালিত হবে।

রাজধানীর ৪০ স্পটে বস্ত্র ও খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করবেন বেগম খালেদা জিয়া : মহান স্বাধীনতার ঘোষক ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৩৬তম শাহাদতবার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানীর বিভিন্ন স্পটে দুঃস্থ অসহায়দের মাঝে বস্ত্র ও খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করবেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। আজ মঙ্গলবার ধানমন্ডি সুগন্ধা কমিউনিটি সেন্টারের সামনে থেকে ২৪টি স্পটে এ দুঃস্থ অসহায়দের মাঝে বস্ত্র ও খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করা হবে। এর আগে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে জিয়াউর রহমানের মাজারে দলের নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে ফুলেল শ্রদ্ধাঞ্জলি জানাবেন তিনি। এ ছাড়া বুধবার ৩১ মে গুলশানের ডিসিসি মার্কেট থেকে দ্বিতীয় দিনে ১৬টি স্পটে বস্ত্র ও খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করা হবে বলে জানা গেছে।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn