আশিস রহমান ::মানুষ কেনইবা সুনামগঞ্জ বিমুখ হবেনা? একটা জেলাসদরে যেসব সুযোগ সুবিধা মানুষ প্রত্যাশা করে তার কোনোটাই কি সুনামগঞ্জে আছে? বাড়ির রাস্তায় ওঠানামা করতে গিয়ে আমার ফুরফুরে ছোট্ট বোনটার একটা হাত ভেঙ্গে গেছে। ব্যাথায় কাতর সে। ওইদিন দোয়ারাবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে তারা সাময়িক ব্যান্ডেজ করে দিয়ে সুনামগঞ্জে রেফার করেন। পরের দিন শুক্রবার সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে আসলাম জরুরী বিভাগে। পর্যাপ্ত ডাক্তার নেই। ছুটির দিন সকালেও একটার পর একটা রোগী আসছেই। ৫ টাকা টিকিট কেটে কাগজপত্রসহ জরুরী বিভাগের একজন ডাক্তারকে দেখালাম। তিনি বললেন এক্সরে করানো লাগবে। বাইরে থেকে এক্সরে করিয়ে নিয়ে আসুন। জানতে চাইলে জানালেন সরকারি হাসপাতালের এক্সরে মেশিন নষ্ট! জেলা সদরের মতো জায়গায় একটা ব্যস্ততম সরকারি হাসপাতালে এক্সরে নেই! সেবাই যদি না পাওয়া যায় তাহলে মানুষ হাসপাতালের ছয়তলা দৃষ্টিনন্দন বিল্ডিং দিয়ে কি করবে? হাসপাতালের পাশেই একটা প্রাইভেট ক্লিনিকে ঘন্টাখানেক অপেক্ষা করে এক্সরে করিয়ে আবার জরুরী বিভাগে আসলাম। ডাক্তার এক্সরে দেখে বললেন হাত ভেঙ্গে গেছে প্লাস্টার করানো লাগবে। প্লাস্টারের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম। একটার পর একটা রোগী আসছে। তাদেরকে সামাল দিতে দিতে ডাক্তারের অবস্থা শেষ। আধাঘন্টা পরে আমাদেরকে ডেকে নিয়ে বললেন প্রাইভেটে প্রিয়াঙ্গন অথবা পাইওনিয়ারে গিয়ে প্লাস্টার করাতে। এখানে অনেক লেইট হবে। অবশেষে চলে আসলাম প্রিয়াঙ্গনে। প্রিয়াঙ্গনের দায়িত্বশীলরা জানালেন জানালেন আজকে ডাক্তার আসবেনা। পাইওনিয়ারে দেখান। অতঃপর সেখান থেকে চলে আসলাম উকিলপারা পাইওনিয়ারে। পাইওনিয়ারে না দেখিয়ে তার পাশের বিল্ডিং রোজিনা ম্যানশনে ডাক্তার দেখাতে গেলাম। রোজিনা ম্যানশনে এসে দেখি চেম্বারে যে ডাক্তার আসার কথা তিনি আজকে আসেননি। তার বিকল্প আরেকজন ডাক্তার এসেছেন। তিনি রোগী দেখছেন। শেষ পর্যন্ত উনার শরনাপন্ন হলাম। তিনি প্লাস্টার করিয়ে দিয়ে আবার এক্সরে করাতে প্রিয়াঙ্গনে যেতে বললেন। ভাবলাম পাইওনিয়ারেওত এক্সরে করানো হয়। এখানেই করিয়ে ফেলি। পাইওনিয়ারের রিসিপশনের দায়িত্বশীল একজন ভদ্র মহিলা আমাদের কাগজপত্র হাতে নিয়ে ভেতরে গেলেন। একটু পরে বাইরে এসে বললেন প্রেসকিপশনের লেখাটা অস্পষ্ট। ডাক্তারের কাছ থেকে জেনে আসুন তিনি এখানে কি লিখেছেন। আবার প্রেসকিপশন নিয়ে ডাক্তারের কাছে গিয়ে বিস্তারিত খুলে বললাম। এই ডাক্তার বললেন এখানে এক্সরে ভালো রিপোর্ট দেয়না। আপনি প্রিয়াঙ্গন থেকে এক্সরে করিয়ে নিয়ে আসুন। ডাক্তারের কথামতো পাশের পাইওনিয়ার ফেলে আবারও সেই প্রিয়াঙ্গনে গেলাম। সিরিয়াল নিয়ে দীর্ঘক্ষন অপেক্ষা করে অবশেষে এক্সরে করিয়ে আবার পাইওনিয়ারে ফিরে আসলাম। এখান থেকে ওখানে ছোট্ট বোনকে কোলে নিয়ে অনবরত ছোটাছুটি। তার অসুস্থতা নিয়ে এযেন এক মহ বিড়ম্বনায় পরলাম। শুধু এক প্লাস্টার করাতে গিয়ে ২টা সরকারি হাসপাতাল ও ৩ টা প্রাইভেট ক্লিনিকে দৌড়াদৌড়ি করতে হলো। তার উপরে ৪ বছরে শিশু রোগী। তার কান্নাকাটি আর বিরক্তিতো আছেই! সরকারি হাসপাতালেতো সেবার কিছুই পেলাম না। তিন প্রাইভেটের দুইটাতে ডাক্তার নেই। একটাতে বিকল্প ডাক্তার আছে, ভালো এক্সরে নেই। সকাল থেকে বিকাল প্রায় তিনটা পর্যন্ত আজ অতিবাহিত হলো চিকিৎসা বিড়ম্বনায়। টাকা পয়সা কত গেলো সেকথা এখন আর নাইবা বললাম! সামনে এই জেলা সদরের ভবিষ্যৎ আরো অন্ধকার। সিলেটের ওসমানি মেডিকেল কলেজ যদি মেডিকেল কলেজ না হয়ে শুধু ক্লিনিক হতো সেখানেও হয়তো একই অবস্থা হতো! আমাদের যাও একটা মেডিকেল কলেজ আসছে সেটাও জেলা সদরের শেষ মাথায় পাঠিয়ে দিলাম। ওই মেডিকেল কলেজটা সদর হাসপাতালে হলে অন্তত হাসপাতালটাত চলতো? এখন যে অবস্থা তার চেয়ে বরং সদর হাসপাতালটা দিরাইয়ের মদন পুরে নিয়ে গেলেই ভালো হবে। অদূর ভবিষ্যতে এই দৌড়াদৌড়ির বিড়ম্বনা থেকে সেবাগ্রহীতারা অন্ততপক্ষে কিছুটা হলে স্বস্তি পেতে পারবে। মন্ত্রী/এমপি, চেয়ারম্যান,মেয়র, অমুক নেতা তমুক নেতা এসব দিয়ে সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য সেবার কি হবে? তারাতো আর এখানে চিকিৎসা করাননা। সিলেট থেকে ঢাকা নয়তো বিদেশের চিকিৎসার শরনাপন্ন হন তারা। কার্যত জেলাশহরের মর্যাদা হারাতে বসেছে সুনামগঞ্জ। আমাদের কর্তাদের কি সে খেয়াল আছে?

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn