বার্তা ডেক্সঃঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনাভাইরাসের টিকা উপহার দেওয়ায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষপূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত আন্তর্জাতিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির ভাষণে মোদিকে ধন্যবাদ জানান। ভারত থেকে কেনা টিকা ২৪-২৫ তারিখের মধ্যে দেশে চলে আসবে বলেও উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনের অনুষ্ঠানের সঙ্গে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হন। ‘সেলিব্রেটিং দ্য হান্ড্রেড ইয়ার্স অব দ্য ইউনিভার্সিটি অব ঢাকা: রিফ্লেকশন ফ্রম দ্য অ্যালামনাই-ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড ন্যাশনাল’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের এগিয়ে যাওয়ার মাঝেও করোনাভাইরাস আমাদের বাধা দিয়েছে এবং সেটাকে অতিক্রম করেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। আর এ জন্য গবেষণার বিশেষ প্রয়োজন রয়েছে। গবেষণা ছাড়া কোনো অর্জন সম্ভব নয়। আপনারা গবেষণাকে গুরুত্ব দেবেন, সেটাই আমরা চাই।’ সরকার করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সম্ভাব্য সব ধরনের পদক্ষেপ অব্যাহত রেখেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী জনগণের প্রতি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন।
২০ লাখ ডোজ টিকা উপহার পাঠানোর জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আপনারা জানেন করোনার জন্য ভারত সরকার যে ২০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন পাঠিয়েছে, তা ইতিমধ্যেই আমাদের কাছে পৌঁছেছে। এ জন্য আমি ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই।’ আর তাঁর সরকার যে তিন কোটি ডোজ ভ্যাকসিন ভারত থেকে ক্রয় করেছে, তা ২৪–২৫ তারিখের মধ্যে দেশে চলে আসবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে পড়বে, তাতে দেশের অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও আলোকিত হয়ে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের জন্য দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলায় ব্রতী হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে বাঙালি জাতির সব অর্জনের বাতিঘর আখ্যায়িত করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার একটাই আকাঙ্ক্ষা, বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলার যে মানবসম্পদ গড়ে তোলা, সেটা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই শুরু হবে। সমগ্র বাংলাদেশে যত বিশ্ববিদ্যালয় আমরা করে যাচ্ছি, তারাও সেটা অনুসরণ করবে এবং সেভাবেই দেশকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যাব।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখানে জ্ঞানের চর্চা হবে, গবেষণা হবে, শিক্ষার প্রসার ঘটবে—সেটাই আমরা চাই। আসন্ন চতুর্থ শিল্পবিপ্লবে আমরা যেন বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারি। আর সেটা পারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এমন একটি প্রতিষ্ঠান, যেটি আমাদের প্রতিটি অর্জনে পথ দেখিয়েছে। কাজেই এই বিশ্ববিদ্যালয় আরও সুন্দর এবং উন্নত হোক, সেদিকে লক্ষ রেখেই সরকার বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে।’ তিনি ঐতিহ্যবাহী এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভবিষ্যতে যেন আধুনিক জ্ঞান ও প্রযুক্তিনির্ভর একটি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে উঠতে পারে, সে জন্য গৃহীত মাস্টারপ্ল্যানের আওতায় বিভিন্ন অনুষদ ও বিভাগ সম্প্রসারণের প্রসঙ্গও উল্লেখ করেন।
‘১৯২১ সাল থেকে ২০২১’ গৌরবময় এই শতবর্ষ উদযাপনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন। বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক রেহমান সোবহান মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। সহ-উপাচার্য (শিক্ষা) এ এস এম মাকসুদ কামাল অনুষ্ঠানে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন এবং অপর সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) মুহম্মদ সামাদ সাইটেশন পাঠ করেন। সম্মেলন আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক ইমতিয়াজ আহমেদ অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে ঢাবির উপাচার্য আখতারুজ্জামানের হাতে সম্মেলনের স্যুভেনির তুলে দেন কোষাধ্যক্ষ মমতাজ উদ্দিন আহমেদ।-প্রথম আলো