তাপদাহে ১১ গার্মেন্টের সাড়ে তিন শতাধিক শ্রমিক অসুস্থ
প্রচণ্ড তাপদাহে জেলার কোনাবাড়ির কাশিমপুর শিল্প এলাকার অন্ততঃ ১১টি পোশাক কারখানার সাড়ে তিন শতাধিক শ্রমিক বুধবার অসুস্থ হয়েছে। এঘটনায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ওই এলাকার অধিকাংশ কারখানা ছুটি ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। গাজীপুর শিল্প পুলিশের ইন্সপেক্টর মো. আব্দুল খালেক ও অসুস্থ শ্রমিকরা জানায়, কোনাবাড়ির কাশিমপুর, জরুন, নয়াপাড়া শিল্প এলাকার কারখানাগুলোর শ্রমিকরা প্রতিদিনের মতো বুধবার সকালে কাজে যোগ দেয়। কাজে যোগ দেয়ার ঘন্টাখানেক পর থেকে প্রচণ্ড তাপদাহের কারণে কটন ক্লাব বিডি লিমিটেড, মুনটেক্স, পালকি, তাসনিয়া ফ্যাব্রিক্স, মাল্টিসেফ ও আলিম নিটওয়্যার লিমিটেডসহ ওই এলাকার অন্ততঃ ১১টি পোশাক কারখানার শ্রমিকদের পর্যায়ক্রমে বমি ভাব, মাথা ঘোরানো ও পেট ব্যাথা শুরু হলে তারা অসুস্থ হতে থাকে। অসুস্থদের অনেকের খিচুনীও দেখা দেয়। এতে কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে এদিন ওই কারখানাগুলোর অন্ততঃ সাড়ে তিন শতাধিক শ্রমিক পর্যায়ক্রমে অসুস্থ হয়ে পড়ে।
কারখানা কর্তৃপক্ষ ও তাদের লোকজন অসুস্থদের উদ্ধার করে স্থানীয় শরীফ জেনারেল হসপিটাল, পপুলার হাসপাতাল, কোনাবাড়ি ক্লিনিক ও হক জেনারেল হসপিটালসহ বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে নিয়ে যায়। অসুস্থদের মধ্যে কারখানার সুয়িং সেকশনের নারী শ্রমিকের সংখ্যা বেশী। এ ঘটনায় শ্রমিকদের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লে অন্য শ্রমিকরা কারখানার কাজ বন্ধ করে চলে যায়।
খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে উদ্ধার কাজে অংশ নেয় এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। এঘটনায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ওই ১১টিসহ প্রায় সব ক’টি পোশাক কারখানা এদিনের জন্য ছুটি ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। এ ব্যাপারে কোনাবাড়ী শরীফ জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক বাবুল আহমেদ শরীফ জানান, এটি Hysterical conversion reactions disease। এ রোগে একজন মাথা ঘুরে পড়ে গেলে তাকে দেখে আরেকজন অসুস্থ হয়ে পড়ে যাবে। তাছাড়া প্রচণ্ড গরমে কেউ হিটস্ট্রোক করলে একজনের দেখাদেখি অপরজনও মনে করবে তারও স্ট্রোক হয়েছে। আবার সেও অজ্ঞান হয়ে ঢলে পড়তে পারে। তবে অসুস্থদের অধিকাংশরাই চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছে।গাজীপুর শিল্প পুলিশের এসআই মফিজুল ইসলাম জানান, পোশাক কারখানার শ্রমিক অসুস্থ হওয়ার খবর পেয়ে পুলিশ সদস্যরাও ঘটনাস্থলে এসে উদ্ধার কাজে অংশ নেয়।
গত শনিবার থেকে প্রতিদিনই এ এলাকার বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকরা অসুস্থ হচ্ছে। তবে বুধবার স্থানীয় প্রায় সব ক’টি পোশাক কারখানা বেশ কিছু শ্রমিক অসুস্থ হয়। চিকিৎসকেরা বলছেন প্রচণ্ড গরমে কারখানাগুলোর কিছু শ্রমিক অসুস্থ হয়। তবে এসব অসুস্থদের দেখে আরো কিছু শ্রমিক অসুস্থ হওয়ায় অসুস্থতার সংখ্যা বেড়েছে। তাদের মাস হিস্টেরিয়া হতে পারে। আবার অনেক শ্রমিক কাজে ফাঁকি দিতে ইচ্ছাকৃতভাবে নিজেকে অসুস্থতা দেখিয়ে এ ঘটনা ঘটাচ্ছে। অসুস্থ শ্রমিকদের স্থানীয় বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। অসুস্থ প্রায় সব শ্রমিকই প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরছে। এঘটনায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে কাশিমপুর, নয়াপাড়া, জরুন এলাকার অধিকাংশ পোশাক কারখানা এদিনের জন্য ছুটি ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।