বাড়ি ফেরার পথে হাওরে স্রোতের তোড়ে নৌকাডুবির মতো নিশ্চিত মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরলেন পাঁচ নারী। তাহিরপুর বাদাঘাট সড়কের হোসনার ঘাট সেতুর দুই পাশের সংযোগ সড়ক না থাকায় মঙ্গলবার দুপুরে নিজেরাই নৌকায় চালিয়ে খরস্রোতা নদী পাড়ি দিতে গিয়েছিলেন তারা। এ সময় নদীর স্রোতের মুখে তারা ভেসে যাচ্ছিলেন। পরে প্রায় নিশ্চিত মৃত্যুর দুয়ার হতে ফিরেছেন স্থানীয় ওই পাঁচ নারী। ঘটনার সময় উপজেলা সদরে যাবার পথে পাঁচ নারীর বেঁচে ফেরার ওই দৃশ্য ভিডিও ধারণ করেন হাবিব সরোয়ার আজাদ। নৌকাডুবির হাত থেকে রক্ষা পাওয়া নারীদের এই ঘটনা চারিদিকে ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় ভোক্তভোগীরা তাদের অসহায়ত্বের কথা তুলে ধরেন। তাহিরপুর -বাদাঘাট সড়কের গত ৫০ বছরের দুর্ভোগের কথা জানান তারা। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী ও জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়ে সড়কটির নির্মাণ কাজ সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের মাধ্যমে দ্রুত সম্পন্ন করার দাবি তুলেন ভুক্তোভোগীরা।

জানা গেছে, মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলার পাতারগাঁও বাবার বাড়ি হতে নিজ বাড়ি হোসনার ঘাটে ফিরছিলেন গৃহবধূ মিনারা খাতুনসহ (৫৫) পাঁচ নারী ও কিশোরী। নির্ধারিত খেয়া না থাকায় পানিতে ডুবে থাকা তাহিরপুর বাদাঘাট সড়কের হোসনার ঘাট এলাকায় ওই নারীরা নিজেরাই কাঠের নৌকা চালিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। আকস্মিক স্রোতের তোড়ে হাওরের পানিতে ভেসে যেতে যেতে প্রায় ডুবু ডুবু অবস্থায় ভাসতে থাকে নৌকাটি। ওই সময় নারী ও কিশোরীদের চিৎকারে ঘাটের উত্তর তীরে থাকা অপর এক নারী পানিতে নেমে সাঁতরে গিয়ে প্রায় ডুবতে থাকা নৌকাটিতে উত্তর তীরের টেনে নিয়ে আসেন। এতে নৌকায় থাকা পাঁচ নারী ও কিশোরী নৌডুবির হাত থেকে রক্ষা পায়। মিনারা খাতুন ও তার সাথে থাকা অজুফা বেগম বলেন, জন্মের পরই শুধু আশ্বাস শুনছি তাহিরপুর –বাদাঘাট সড়ক নির্মাণ কাজ শেষ হবে। কিন্তু গত ৫০ বছরেও এ সড়কের ভাঙ্গা তিনটি অংশ নির্মাণ শেষ করতে পারেনি সংশ্লিষ্টরা। শুধু আমরাই না, প্রতিনিয়ত অনেক মানুষ উপজেলা সদরে, স্কুল কলেজে কিংবা হাসপাতালে রোগী নিয়ে যাবার পথে এ সড়কে মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে চলাচল করেন। মোটরসাইকেলে, অটোরিকশায় করে, কিছুটা পায়ে হেঁটে আবার কোন কোন সময় খেয়া নৌকা, ফেরি নৌকায়, ইঞ্জিন চালিত ট্রলারে করে গন্তব্যে যান।

তাহিরপুর একাধিক অটোরিকশা চালকগণ জানান, বাদাঘাট সড়ক নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়ায় উপজেলার সদর ও উত্তরাঞ্চল খ্যাত কয়েকটি ইউনিয়ন উন্নয়ন বঞ্চিত। সড়কটি নির্মাণ কাজ শেষ হলে কয়েক হাজার মানুষের নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হত। তারা আরো বলেন, প্রতি বছর এ সড়ক নির্মাণের কথা বলা হয়। কিন্তু এলজিইডির দায়িত্বশীলরা সড়কে তিনটি ভাঙ্গন রোধ করতে পারেনি গত ৫০ বছরেও। তাহিরপুরের টিএলএমপির সাবেক শিক্ষার্থী আবুল হাসনাত তপু বললেন, ডেনমার্ক স্কলারশিপ পাওয়ায় মঙ্গলবার একটি পুলিশ ক্লিয়ারেন্সর’র জন্য বাদাঘাট হয়ে তাহিরপুর গিয়েছিলাম। কি বলব, সড়কের তিনটি ভাঙ্গা অংশ খেয়া নৌকায় পাড়ি দিতে গিয়ে হাওরের ঢেউয়ের কবলে ঝুঁকি নিয়ে পাড়ি দিতে হয়েছে। এ সড়কে যাতায়াত করাটা মৃত্যুর ঝুঁকি ছাড়া আর কিছুই নয়।

উপজেলার বাদাঘাটের বাসিন্দা আলাউদ্দিন আরিফ দাবি তুলেছেন, গত ৫০ বছরেও কি পরিমাণ বরাদ্দ এসেছে এ সড়কের জন্য? কি পরিমাণ কাজ হয়েছে আর কি পরিমাণ সরকারি অর্থ লোপাট হয়েছে সেসব তদন্ত করা হোক। আর এলজিইডি নয়, এবার বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরকে এ সড়ক নির্মাণ কাজের দায়িত্ব দেয়া হোক। ৫০ বছরের দুর্ভোগ দেখবেন ৬ মাসেই দূর হয়ে এ সড়কে চার চাকার যানবাহন চলাচল করতে পারবে। উপজেলার সোনাপুর এলাকার জজ মিয়াসহ নানা শ্রেণিপেশার লোকজন জানান, তাহিরপুর-বাদাঘাট ৮ কিলোমিটার সড়কের মাত্র ৬ কিলোমিটার অংশে পাতারগাঁও, হোসনার ঘাট ও উপজেলা সদরের হাসপাতালের পেছনের সড়কে তিনটি ভাঙ্গন রয়েছে। প্রায় দুই কিলোমিটার ভাঙ্গা। এসব ভাঙ্গন রোধ করে সড়কটি নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করতে গত ৫০ বছর পেরিয়ে গেলেও এলজিইডি সড়কটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করতে পারেনি। এলাকার সব শ্রেণিপেশার লোকজন সড়কটি নির্মাণ কাজে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরকে দায়িত্ব দেবার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী এম এ মান্নান এমপির হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।-যুগান্ত

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn