তাহিরপুরের ৩ শুল্ক বন্দর দিয়ে আজ (৩১মে বুধবার) থেকে আবারও কয়লা আমদানী বন্ধ হয়ে গেছে। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বৃহৎ কয়লা শুল্কস্টেশন তাহিরপুরের বড়ছড়া, চারাগাঁও ও বাগলী দিয়ে গত বছরের ২৩ নভেম্বর থেকে কয়লা আমদানী শুরু হলেও ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের নোট বাতিলের সিদ্ধান্তের কারণে বন্দরগুলোর আমদানী-রপ্তানী কার্যক্রম ঢিমেতালে চলছিল। এই বছরের ৫ জানুয়ারি থেকে জমতে শুরু হয় বন্দরগুলো। প্রায় ৬ মাস চালু থাকার পর আজ বুধবার থেকে বন্দর বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ৫০০ আমদানীকারকের অফিস স্টাফসহ কমপক্ষে ৩৫ হাজার মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়বে। ভারতের মেঘালয়ের পরিবেশবাদী সংগঠন ডিমাহাসাও জেলা ছাত্র ইউনিয়নের আবেদনের ভিত্তিতে ২০১৪ ইংরেজির ১৭ এপ্রিল ন্যাশনাল গ্রীন ট্রাইব্যুনাল (এনজিটি) মেঘালয় সরকারের অবৈধ কয়লা খনন ও পরিবহন বন্ধের নির্দেশ দেন। একই বছরের ৬ মে সংশ্লিষ্ট বিভাগের বিভাগীয় মূখ্যসচিব এ ব্যাপারে প্রতিটি জেলায় নির্দেশ জারি করেন। এই নির্দেশে গ্রীণ ট্রাইব্যুনালের নির্দেশ কার্যকর করতে বলা হয় মেঘালয়ের জেলা প্রশাসকদের। এ কারণে ২০১৪ ইংরেজির ১৩ মে থেকে মেঘালয়ের সীমান্ত জেলাগুলোয় ১৪৪ ধারা জারি করে কয়লা পরিবহনে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। এরপর থেকে বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সবচেয়ে বড় শুল্কবন্দর সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের বড়ছড়া-চারাগাঁও ও বাগলী দিয়ে কয়লা আমদানী বন্ধ হয়ে যায়। রপ্তানীকারকরা আইনী লড়াই করে প্রথমে উত্তোলিত কয়লার রাজস্ব জমা দিয়ে ৩ মাস (এপ্রিল, মে ও জুন’২০১৫) রপ্তানীর সুযোগ পান। পরে এই সময় ৩ দফায় বাড়িয়ে গত ১৫ মে পর্যন্ত (বিভিন্ন সময় মিলে ৯ মাস) রপ্তানী কার্যক্রম চালু রাখা হয়। এই সময়ের মধ্যে কেবল উত্তোলিত কয়লা রপ্তানী করেছেন মেঘালয়ের রপ্তানী কারকরা। কিন্তু মাইনিং করতে পারেননি। গত বছরের ১৬ মে কয়লা রপ্তানী বন্ধ হয়ে যায়। এপারের তিন শুল্কবন্দরের ৫০০ আমদানীকারক বেকায়দায় পড়েন। বেকার হয়ে পড়েন কমপক্ষে ৩৫ হাজার শ্রমিক।
গত ২৩ নভেম্বর থেকে কয়লা আমদানী শুরু হলেও ভারতের মেঘালয়ের বড় রপ্তানীকারকরা এবং এপারের আমদানীকারকরাও সক্রিয় না হওয়ায় বন্দরের কার্যক্রমে ছিল অচলাবস্থা।  তাহিরপুর কয়লা আমদানী কারক গ্রুপের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আবুল খায়ের বলেন, ‘তাহিরপুরের ৩ বন্দর এবং ভারতের এই দিকের রপ্তানীকারকরা গত ৫ জানুয়ারি থেকে সক্রিয় হয়েছিলেন। দেশের অন্যদিক দিয়ে এই সময়ে ইন্দোনেশিয়া, চীন এবং আফ্রিকার কম দামের কয়লা আসলেও তাহিরপুর সীমান্তের শুল্কস্টেশন দিয়ে আসা কয়লার মান ভাল থাকায় দেশজুড়ে এই কয়লার চাহিদা ছিল। আমদানী কারকরা গত ৬ মাসের মধ্যে ৫ মাস ব্যবসা ভাল করেছেন। অনেকেই তাদের ব্যবসাকে সুবিধাজনক পর্যায়ে নিয়ে এসেছিলেন। এই মূহূর্তে কয়লা আমদানী বন্ধ হওয়ায় প্রায় ৫’শ আমদানীকারক বেকায়দায় পড়েছেন। একই সঙ্গে হাওরে ফসলডুবির পর অনেক কৃষি শ্রমিকও বাঁচার তাগিদে এই বন্দরগুলোয় এসে কাজে লেগেছিলেন, তারাও বেকার হয়ে পড়লেন।’
তাহিরপুর কয়লা আমদানীকারক গ্রুপের সচিব রাজেশ তালুকদার জানালেন, ৫০০ আমদানীকারকের কমপক্ষে ৫ জন করে অফিস স্টাফ রয়েছে। তাহিরপুর সীমান্তের ৩ বন্দর মিলিয়ে শ্রমিক আছে কমপক্ষে ৩০ হাজার। এছাড়া ৩ বন্দরে থাকা দোকানপাটে কর্মরত লোকজনও বেকার হয়ে পড়বে।’ তাহিরপুর কয়লা আমদানীকারক গ্রুপের সভাপতি আলকাছ উদ্দিন খন্দকার বলেন,‘ভারতীয় রপ্তানী কারকরা মেঘালয়ের কয়লা মাইনিংয়ের জন্য আইনী লড়াই করছেন। একই সঙ্গে উত্তোলিত মওজুদ কয়লা রপ্তানী’র জন্যও আবেদন করেছেন। আমরা আশা করছি আবারও কয়লা আমদানী-রপ্তানী শুরু হবে এবং বন্দরগুলোয় চাঞ্চল্য ফিরে আসবে।’

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn