বার্তা ডেক্সঃঃ দেশে চাকরির বাজার তৈরি করতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যাতে করে দেশের যুবসমাজ দেশেই কাজ করতে পারে। বিদেশে যেন না যেতে হয় সেই ব্যবস্থা করতে বলেছেন তিনি। মঙ্গলবার (২৯ ডিসেম্বর) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে গণভবন থেকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও এনইসি চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা। সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সদস্য সিনিয়র সচিব ড. শামসুল আলম পরিকল্পনার সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করেন। সভা শেষে সংবাদ সম্মেলন করেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান ও জিইডি সদস্য। এ সময় আইএমইডি সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব মোহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরী, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য জাকির হোসেন আকন্দ, আবুল কালাম আজাদ উপস্থিত ছিলেন। সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন তুলে ধরে বলেন, প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন দেশের ইউনিয়ন পর্যায়ের কৃষিজমি আরও উন্নত করতে। কৃষিজমি যেন অহেতুক ব্যবহার করা না হয় সেদিকে নজর রাখতে বলেছেন। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, দেশে যে অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি করা হচ্ছে তা আরও বাড়াতে। তাহলে দেশেই কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা অনুমোদন
এনইসি সভায় আাগামী পাঁচ বছরের জন্য অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। পরিকল্পনাটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ৬৪ হাজার ৯৫৯ দশমিক ৮ বিলিয়ন টাকা বা ৬৪ লাখ ৯৫ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা। এরমধ্যে অভ্যন্তরীণ (দেশীয়) উৎস থেকে ৫৭ হাজার ৪৮৩ বিলিয়ন টাকা বা ৫৭ লাখ ৪৮ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে। বৈদেশিক উৎস থেকে আসবে সাত হাজার ৪৭৫ দশমিক ৯ বিলিয়ন টাকা বা ৭৪ হাজার ৭৫৯ কোটি টাকা। এছাড়া মোট খরচের মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ১২ হাজার ৩০১ দশমিক ২ বিলিয়ন টাকা বা ১২ লাখ ৩০ হাজার ১২০ কোটি টাকা এবং ব্যক্তি খাত থেকে ৫২ হাজার ৬৫৮ বিলিয়ন টাকা বা ৫২ লাখ ৬৫ হাজার ৮০০ কোটি টাকা খরচের লক্ষ্য ধরা হয়েছে।
এছাড়া পরিকল্পনা মেয়াদে ১ কোটি ১৩ লাখ ৩০ হাজার নতুন কর্মসংস্থান তৈরির লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এরমধ্যে বৈদেশিক কর্মসংস্থান ৩২ লাখ ৫০ হাজার এবং দেশীয় ৮০ লাখ ৫০ হাজার কর্মসংস্থান হবে।পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, সরকারের উন্নয়ন রূপকল্প ও নির্বাচনী ইশতেহারের আলোকে ধারাবাহিকতার দিকটিতে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায়। এছাড়া টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টর (এসডিজি) লক্ষ্যগুলো এতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, এসব লক্ষ্য অর্জনের প্রচেষ্টাকে অব্যাহত রাখার প্রয়োজনীয়তা গুরুত্বসহকারে বিবেচনায় রাখা হয়েছে। গত জুলাই মাস থেকে শুরু হয়ে ২০২৪-২৫ অর্থবছর পর্যন্ত এটি বাস্তবায়ন করবে সরকার।
ড. শামসুল আলম জানান, অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নকালে বার্ষিক গড় জিডিপি (মোট দেশজ উৎপাদন) অর্জন হবে ৮ শতাংশ হারে। পরিকল্পনার শেষ অর্থবছরে ৮ দশমিক ৫১ শতাংশ হারে। এতে দেশের মূল্যস্ফীতির লাগাম টানার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে চলতি অর্থবছরে সার্বিক মূল্যস্ফীতির লক্ষ্য ধরা হয়েছে পাঁচ দশমিক পাঁচ শতাংশ। ২০২১-২২ অর্থবছর থেকে ২০২৪-২৫ অর্থবছর পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে পাঁচ দশমিক চার শতাংশ, পাঁচ দশমিক তিন শতাংশ, পাঁচ দশমিক দুই শতাংশ, চার দশমিক নয় শতাংশ এবং চার দশমিক আট শতাংশ মূল্যস্ফীতি হবে।
পরিকল্পনায় বিনিয়োগের লক্ষ্য ধরা হচ্ছে মোট জিডিপির ৩৭ দশমিক চার শতাংশ। অর্থবছর ভিত্তিক লক্ষ্য হচ্ছে- চলতি ২০২০-২১ অর্থবছর থেকে ২০২৪-২৫ অর্থবছর পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে জিডিপির ২০ দশমিক আট শতাংশ, ৩৩ দশমিক পাঁচ শতাংশ, ৩৪ দশমিক পাঁচ শতাংশ, ৩৫ দশমিক ছয় শতাংশ, ৩৬ দশমিক দুই শতাংশ এবং ৩৭ দশমিক চার শতাংশ বিনিয়োগ।
তিনি আরো জানান, ২০২৫ সাল নাগাদ কর জিডিপির অনুপাত বর্তমানের ৮ দশমিক ৯০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১২ দশমিক ৩০ শতাংশ করা হবে। রাজস্ব আয় বৃদ্ধি এবং বাণিজ্য শুল্কের ওপর নির্ভরতা কমাতে এই দুই লক্ষ্য অর্জনের জন্য রাজস্ব আইন অধিকতর সংস্কার এবং কর প্রশাসনে আধুনিকায়ন ও শক্তিশালীকরণে প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার সুপারিশ করা হয়েছে। এছাড়া সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের (পিপিপি) মাধ্যমে প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় অর্থায়নের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। জিইডি সদস্য বলেন, করোন মোকাবিলাসহ অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে ২৪৪টি উন্নয়ন কৌশল নেওয়া হয়েছে পরিকল্পনায়। শুধু করোনা মোকাবিলায় আসছে পাঁচটি কৌশল। এছাড়া আন্তসম্পর্কিত উন্নয়ন কৌশল রয়েছে ছয়টি। পশ্চাৎপদ অঞ্চলের দারিদ্র্য সমস্যা মোকাবিলায় ছয়টি কৌশল। সেই সঙ্গে খাতভিত্তিক উন্নয়ন কৌশল রয়েছে ২২৭টি। ১৪টি অধ্যায়ে এসব কৌশল নির্ধারণ করা হয়েছে।
অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় কোভিড-১৯ এর প্রভাব মোকাবিলায় কৌশলগুলো হচ্ছে- সরকারের উন্নয়ন রূপকল্প ও নির্বাচনী ইশতেহারের আলোকে ধারাবাহিকতার দিকটিতে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে যেসব কার্যসম্পাদক সূচকে বাংলাদেশ এখনও পিছিয়ে আছে সেসব ক্ষেত্রে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এছাড়া অর্থনীতিতে পিছিয়ে পড়া খাতগুলো সংস্কারের গতি বাড়ানোর বিষয়টি কোভিডের কারণে আরও বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে। বেকারত্বসহ বিদেশফেরত কর্মীদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য খাতে কোভিড-১৯ মহামারিসহ ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে ক্রমান্বয়ে একটি সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা বা ইউনিভার্সেল হেলথ সিস্টেম প্রবর্তনের প্রস্তাব করা হয়েছে। কোভিড-১৯ এর বিরূপ প্রভাব মোকাবিলা এবং প্রবৃদ্ধির মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনের হার বাড়াতে জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা কৌশলের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করা হবে। এক্ষেত্রে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা ও উপকারভোগীর সংখ্যা বাড়াতে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
সংবাদ টি পড়া হয়েছে :
৪৯ বার