ঈদুল ফিতরের একদিন আগে ছাত্রদলের কমিটি বিলুপ্ত ও নেতৃত্ব নির্বাচনে একাডেমিক ইয়ারের শর্তযুক্ত করায় ক্ষুব্ধ ছাত্রদল নেতারা। তাদের ক্ষোভের মুখে পড়েছেন বিএনপির সিনিয়র নেতারা। বিশেষ করে  নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনে শর্তের বিষয়টিকে মানতে পারছেন না ছাত্রদলের সিনিয়র নেতারা। এর প্রতিবাদে এবং ধারাবাহিক কমিটি গঠনের দাবিতে আগামীকাল সোমবার থেকে গণঅনশনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ছাত্রদল নেতারা বলছেন, মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি বাতিলের দাবি কয়েক বছরের পুরোনো। সে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি বাতিল করে নতুন কমিটি গঠনের ব্যাপারে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কয়েকবার তাদের সঙ্গে স্কাইপির মাধ্যমে মতবিনিময় করেছেন। মতবিনিময় সভার পাশাপাশি ছাত্রদলের সিনিয়র নেতারা যৌথভাবে লিখিত কিছু দাবি ও পরামর্শ দিয়েছিল। তারা পরপর দু’টি স্বল্পমেয়াদী কমিটি গঠনের দাবি করেছিলেন। তারা বলেছিল, কমিটি গঠনে বয়সের কোন সীমারেখা নির্ধারণ না করে স্বল্প মেয়াদে আগামী ১লা জানুয়ারি পর্যন্ত একটি কমিটি গঠন এবং পরে এক বছরের জন্য আরেকটি কমিটি গঠন করা হলে নেতৃত্ব প্রত্যাশীদের জট কমে আসবে।
পরের কমিটিগুলোতে নেতাদের বয়সও স্বাভাবিকভাবেই কমিয়ে আনা যাবে। কিন্তু নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের যে তিনটি বিধিযুক্ত করা হয়েছে সেখানে তাদের মতামতকে পুরোপুরিভাবে অগ্রাহ্য করা হয়েছে। এতে ছাত্রদল নেতাদের অনেকের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার ধ্বংসের মুখে পড়েছে। ছাত্রদল নেতারা এর জন্য দায়ি করছেন কমিটি গঠনের জন্য গঠিত দশ সদস্যের সার্চ কমিটিকে। এর বাইরে দলের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতাও সম্পৃক্ত রয়েছেন এই প্রক্রিয়ার। ছাত্রদল নেতাদের অভিযোগ দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ভুল বুঝিয়ে এ সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করেছেন। তাই সংগঠনের নেতারা তাদের প্রতিও বিক্ষুব্ধ হয়ে আছেন। নেতারা বলছেন, মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি বাতিল করলেও নতুন কমিটি না থাকায় আগামী দেড় মাস অস্তিত্বহীন থাকবে ছাত্রদল। এছাড়া ছাত্রদলের নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনে কাউন্সিলর কারা হবেন, পদপ্রত্যাশী প্রার্থীরা কোন প্রক্রিয়ায় কার সঙ্গে আলোচনা করে কিভাবে মনোনয়ন জমা দেবেন, সংগঠনের দাপ্তরিক কাজ কিভাবে সম্পন্ন করা হবে তার কোন সিদ্ধান্ত বা কৌশল নির্ধারণ করা হয়নি।
এ নিয়ে ছাত্রদল নেতাদের প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে বিএনপি নেতাদের। ছাত্রদল নেতারা বলছেন, আন্দোলন সংগ্রামে সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের শিকার হয়েছে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। প্রায় প্রত্যেক নেতাকর্মীর নামে একাধিক মামলা রয়েছে। দলের জন্য ত্যাগ স্বীকার করে নিজেদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতকে জলাঞ্জলি দেয়ার পর এখন তাদের ছুড়ে ফেলে দেয়া হচ্ছে। ছাত্রদলের জন্য এখন হঠাৎ করে বয়সের সীমারেখা নির্ধারণ করা হলেও যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলের ক্ষেত্রে কোন নিয়মনীতির তোয়াক্কা করা হয় না। ছাত্রদলকে একটি নির্দিষ্ট নিয়মের মধ্যে আনার পরিকল্পনা থাকলে বিগত দিনে কেনো মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দিয়ে প্রায় তিন বছর অতিবাহিত হলো এটা তাদের কাছে বড় প্রশ্ন। ছাত্রদলের একজন সাবেক সহ সভাপতি বলেন, বয়সসীমা নির্ধারণ করায় কেন্দ্রীয় কমিটির চার শতাধিক নেতা বাদ পড়বেন। যাদের মধ্যে রয়েছেন আন্দোলন সংগ্রাম করতে গিয়ে দীর্ঘদিন গুমের শিকার, দফায় দফায় কারাবরণকারী, ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠনের হামলার শিকার ও মামলায় বিপর্যস্ত অনেক ছাত্রনেতা।
এছাড়াও ১১৭ সাংগঠনিক জেলা শাখার কয়েক হাজার নেতা বাদ পড়বেন। তাহলে কাদের নিয়ে ছাত্রদলের নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন হবে? যারা বাদ যাবেন তাদের কোথায় পুনর্বাসন করা হবে। ছাত্রদল নেতারা বলছেন, তিন বছর আগে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি বাতিল করা হলে এখন নেতৃত্বের প্রতিযোগীতার জট তৈরি হতে না। এখন ছাত্রদলের সহ সভাপতি-যুগ্ম সম্পাদক থেকে সম্পাদকীয় পর্যায়ের বাদ পড়া এত বিপুল সংখ্যক নেতাকে কোথায় বা কোন সংগঠনে পদায়ন করা হবে তার কোন পরিকল্পনাও নেই দলটির। ফলে বেশিরভাগ ছাত্রদল নেতার রাজনীতি থেকেই হারিয়ে যাওয়ার শঙ্কা তৈরী হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে তারা নিজেদের রাজনৈতিক অস্তিত্ব রক্ষায় প্রতিবাদী আন্দোলন কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
উল্লেখ্য, ঈদের একদিন আগে মধ্যরাতে গণমাধ্যমে একটি বিবৃতির মাধ্যমে ছাত্রদলের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি বিলুপ্তির ঘোষণা দেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। সেই সঙ্গে আগামী ৪৫ দিনের মধ্যে কাউন্সিলরদের মতামতের ভিত্তিতে সংগঠনটির নতুন কেন্দ্রীয় সংসদ গঠন করা হবে। ছাত্রদলের অনুষ্ঠিতব্য কাউন্সিলে প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতার বিষয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, ছাত্রদলের প্রাথমিক সদস্য হতে হবে। অবশ্যই বাংলাদেশে অবস্থিত কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্র হতে হবে। কেবল ২০০০ সাল থেকে পরবর্তীতে যে কোনো বছরে এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। এদিকে নতুন কমিটি গঠনের বিষয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, খুব শিগগিরই ছাত্রদলের কাউন্সিলের জন্য তফসিল ঘোষণা করা হবে। জেলা মর্যাদার বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজসহ ছাত্রদলের সব জেলা শাখার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বা আহ্বায়ক কমিটির শীর্ষ দুইজন কাউন্সিলর থাকবেন। তারা ভোট দিয়ে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করবেন। তিনি বলেন, ছাত্রদলের যারা বাদ পড়বেন তাদের যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলসহ সহযোগী সংগঠনের নেতৃত্ব দেয়া হবে।
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn