জমির হোসেন-পৃথিবীতে এমন একজন মানুষ খুজেঁ পাওয়া বড়ই দুস্কর যে তার আত্বীয় পরিবার পরিজনকে ইচ্ছাকৃতভাবে দূরে রাখতে চায়। সত্যিকারার্থে এরকম অভাগা মানুষ এ জগত সংসারে পাওয়া যাবে কিনা যথেষ্ঠ সন্দেহ রয়েছে। এরকম না থাকলেও নিজের অজান্তে ভাগ্য, আর্থিক টানপোড়নে অনেককে এ দূরত্বের পথিক হতে হয়। ইতালিতে অনেক মানুষ এরকম সমস্যায় পড়ে আছে। বছরের পর বছর নিজের পরিবারকে কাছে পেতে প্রানপণ চেষ্ঠা চালিয়ে যায়। তবুও কাগজপত্রের ঝামেলা শেষ হয়না। একের পর এক নতুন নতুন কাজজপত্র সংযোজন হচ্ছে অভিবাসী আইনে। সবাই চায় নিজ পরিবারকে কাছে পেতে আর সেজন্য ইতালি অভিবাসী অফিসের অনুমতির প্রতিক্ষায় থাকতে হয়। অনুমতি পাওয়া একটা জটিল কাজ এর ফলে বড় ধরনের সমস্যায় পড়তে হয় অনেক বাংলাদেশিকে। সুখে আর দুঃখে পরিবারকে নিয়ে কাছে থাকতে সবার মনই একটু হলেও কাদেঁ। ইতালিতে ফ্যামিলি আনতে বিভিন্ন রকমের কাগজপত্র আবেদনকারীর কাছ থেকে ইমিগ্রেশন অফিস চায়। একটি ডকুমেন্ট অবশিষ্ঠ থাকলে আবেদন গ্রহনযোগ্য হয়না।

‘আবেদন দুটি ভাগে বিভক্ত’

প্রথম ধাপে তাকে একটি নিদিষ্ঠ থাকার জায়গা অর্থাৎ একটি থাকার উপযোগী বাসস্থান থাকতে হবে। এই কাজটি সম্পন্ন করতে স্থানীয় মিনিউচিপল অফিসে যেতে হয়। দ্বিতীয় ধাপে ভিসার অনুমতি (নুলাওস্তা) পাওয়ার জন্য আবেদন করতে হয় অভিবাসী অফিসে। প্রথম ধাপে যে ধরনের কাগজপত্র নিয়ে যেতে হয়। যেকোন একটি ইদোনেইতা আলোজ্জাতিভা (আবাসন উপযুকক্ত স্থান)। এটা পেতে কতযে ঝামেলা পোহাতে হয় একজন প্রবাসীকে তা সেই জানে যে আবেদন করেছে। কালের পরিবর্তে এটি অনলাইনে আবেদন করতে হয়। আবেদন করার আগে যে বাসা থেকে আলোজ্জাতিভা নেবে ওই বাসার কন্ট্রাক্ট,পূনাঙ্গ মানচিত্র, বাসার কাঠামোগত পরিকল্পনা, ক্যাডেটস্টাল জরিপ এবং বাড়ির মূল মালিক এবং যে বাসা ভাড়া নিয়েছে ও যার জন্য আলোজ্জাতিভা আবেদন করা হবে তার এবং তার পরিবারের সমস্ত কাগজপত্র নিয়ে অফিসে যেতে হয়। কাগজপত্র সব ঠিক থাকলে অফিস আবেদনকারীর কাছে থেকে একটি ১৬ ইউরোর স্ট্যাম্প নেবে সেই সঙ্গে ব্যাংক ড্রাফট ৬০ ইউরো। সবকিছু ঠিক থাকলে পনেরো দিনের মধ্যে একটি রিয়া নাম্বার ইমেইলএ আসার পর প্রথম ধাপের আবেদন সম্পন্ন হয়। এরপর রোম পেরেফেত্তুরায় অর্থাৎ অভিবাসী অফিসে অন্যান্য ডকুমেন্ট নিয়ে তাকে যেতে হয়।

সেখানে আয় সংক্রান্ত কাগজপত্র,বাসায় থাকার উপযুক্ত কিনা সব ঠিক থাকলে দ্বিতীয় ধাপও সম্পন্ন হয়। পরে প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র বাংলাদেশে ভিএফএস গ্লোবাল লিগালাইজেশন অফিসে জমা দিতে হয়। জমা দেয়ার পূর্বে এবং পরে সেখানে ঝামেলার শেষ নেই। সমস্ত কাগজপত্র তাদের ফরমেটে করে সবকিছু নির্ভুল হলে ভিসা পাওয়ার আবেদন জমা নেয়া হয়। তারপর আবেদনকারী কবে ভিসা পাবে এটা জানার কারো কোন সাধ্য নেই। শুধু আল্লাহ আর এজেন্সি এবং ইতালিয়ান অ্যাম্বাসী ভাল জানে। এতো গেল পরিবার আনার ঝামেলার কথা। এরপর হল পরিবার নিয়ে থাকার সমস্যা। কথায় আছে সাধ আছে তো সাধ্য নেই। একক রোজগার দিয়ে ইতালিতে পরিবার নিয়ে থাকা এক প্রকার চ্যালেঞ্জ। ইতালির জীবন যাত্রার মান অনেক বেশি হওয়ায় ব্যয় ভারও অনেক বেশি। ফলে পর্যাপ্ত আয় না থাকলে পরিবার নিয়ে থাকা অনেক সময় সমস্যা দেখা দেয়। দেশের তুলনায় প্রায় নব্বই ভাগ জীবন যাত্রার মান বেশি বলে সুখে থাকতে গিয়ে ভবিষ্যৎ গড়তে চিন্তায় পড়তে হয় অনেক বাংলাদেশিকে। কারণ একার আয় দিয়ে সংসার চালানো অনেক কঠিন। আবার সংসার নিয়ে সুন্দরভাবে থাকতে গিয়ে অবশিষ্ট কিছুই থাকেনা। ইতালিতে প্রায় নিরানব্বই ভাগ ইতালিয়ান পরিবার স্বামী-স্ত্রীর যৌথ আয় দিয়ে সংসার চলে।

ফলে তাদের বেলায় এই সমস্যা নেই বললেই চলে। তাছাড়া তাদের আয়ের একটা অংশও পরিবারের অন্য কারো জন্য ব্যয় করেনা এবং ভবিষ্যতের চিন্তাও নেই। আমাদের বেলায় আমরা তা পারিনা। তাই সংসার জীবনে চলার পথে একটু হিমশিম খেতে হয়। তবে বর্তমান বাংলাদেশে আগের তুলনায় ইতালির ফ্যামিলি রি-নিইউয়ন ভিসা শিথিল করা হয়েছে। এর কারন হিসেবে জানা যায়, রাষ্ট্রদূত পরিবর্তন হওয়ায় পুরাতন অনেকের ভিসা দিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু দেশে শিথিল হলেও ইতালিতে ক্রমশ কঠিনের দিকে যাচ্ছে। বিশেষ করে আবাসন ব্যবস্থার কাগজপত্র যথাযথ উপস্থাপন করা অনেক জটিল হয়ে দাঁড়িয়েছে অভিবাসী অফিসে। ফলে (নুলাঅস্তা) ধীর গতিতে পাচ্ছে বাংলাদেশিসহ অন্যান্য অভিবাসীরা।-লেখকঃ সংবাদকর্মী ইতালি

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn