উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর আসনে যোগী আদিত্যনাথ বসেছেন কয়েক মাস আগে। মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার পরেই যে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নিয়েছিলেন যোগী, তার মধ্যে অন্যতম ছিল অ্যান্টি রোমিও স্কোয়াড গঠন। রাস্তাঘাটে প্রেমিক যুগলের প্রকাশ্য অশালীনতা বন্ধ করার লক্ষ্যেই থানায়-থানায় এই অ্যান্ডি রোমিও স্কোয়াড নির্মাণের নির্দেশ দেন যোগী। কিন্তু ‘নিয়ম পালনে’র নামে এই স্কোয়াড অনেক ক্ষেত্রেই বাড়াবাড়ি করছে, সীমা অতিক্রম করে অকারণে হেনস্থা করছে তরুণ-তরুণীদের— এমন খবর মিলেছিল স্কোয়াড গঠিত হওয়ার পরেই। এ বার অ্যান্টি রোমিওদের বাড়াবাড়ির চূড়ান্ত নিদর্শন সামনে এসেছে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিও-র মাধ্যমে। ‘অখিলেশ যাদব ফ্যানস’-এর ফেসবুক পেজে পোস্ট করা এই ভিডিওয় দেখা গিয়েছে, প্রকাশ্যে অশালীনতা নিবারণের নামে কী ভাবে নির্মম ভাবে মারধর করা হচ্ছে এক যুগলকে।

ঘটনাটি উত্তর প্রদেশের কোন অঞ্চলের তা অবশ্য স্পষ্ট করে বলা হয়নি। সরকারি নির্দেশে গঠিত অ্যান্টি রোমিও স্কোয়াডের হাতেই ওই যুগল নিগৃহীত হচ্ছেন, নাকি কোনও স্বঘোষিত রোমিও-বিরোধীরা চোটপাট পালাচ্ছে দু’জনের উপরে, তা-ও জানা যায়নি। কিন্তু যেটুকু জানা যাচ্ছে তা থেকে এটা স্পষ্ট যে, শালীনতা রক্ষার নামে চূড়ান্ত নিগৃহীত হতে হয়েছে এক যুগলকে।

ওই যুবক-যুবতী রাস্তায় দাঁড়িয়ে একান্তে কথা বলেছিলেন কেবল। সেই সময়েই শালীনতার ‘পুলিশ’রা হামলা চালায় তাঁদের উপরে। প্রকাশ্যে প্রেম করার ‘অপরাধে’ শুরু হয় অকথ্য নির্যাতন। বেল্ট, রড দিয়ে মারা শুরু হয় দু’জনকে। দু’জন হাতজোড় করে ক্ষমা চাইতে থাকেন। কিন্তু তাতে মন ভেজেনি নিগ্রহকারীদের।

অ্যান্টি রোমিও-রা জোর করতে থাকে, দু’জনকে এই মুহূর্তেই বিয়ে করতে হবে। যুগল হাত জোড় করে বলেন, তাঁদের এখনও বিয়ের বয়সই হয়নি। বয়স হলেই বিয়ে করে নেবেন তাঁরা। কিন্তু তাতেও সন্তুষ্ট হয়নি অ্যান্টি রোমিও বাহিনী। তক্ষুণি বিয়ে করার জন্য জোর করার পাশাপাশি চলতে থাকে মার এবং গালিগালাজ। যুবতী তখন মনের জোর সংগ্রহ করে বিব্রতকারীদের বলেন, ‘যদি আপনাদের বাড়ির কোনও মেয়ে এমন কাজ করত, তা হলে আপনারা কী করতেন?’  এই কথায় যেন আগুনে ঘৃতাহূতি পড়ে। তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠে অ্যান্টি রোমিও বাহিনী। যুবতী যে বেফাঁস কথা বলে ফেলেছেন, তা বুঝতে পেরেছিলেন তাঁর সঙ্গীও। সেই কারণে যুবতী কথাটি উচ্চারণ করার সঙ্গে সঙ্গে তাঁর মুখ চেপে ধরেন। কিন্তু তত ক্ষণে যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে। অ্যান্টি রোমিও বাহিনীর সদস্যরা দু’জনকে টানতে টানতে নিয়ে যেতে যেতে বলতে থাকে, ‘দেখাচ্ছি, আমাদের বাড়ির মেয়েরা এমনটা করলে তাদের সঙ্গে কী করতাম!’ তাঁদের সঙ্গে কী হতে চলেছে, তা কল্পনা করে হাউ হাউ করে কাঁদতে কাঁদতে ক্ষমাপ্রার্থনা করতে থাকেন যুবক-যুবতী।

শেষ পর্যন্ত দু’জনের কী পরিণতি হল, তা অবশ্য এখনও পর্যন্ত অজানা। কিন্তু শালীনতা রক্ষার নামে এ হেন নির্যাতন মেনে নিতে পারছেন না কেউই। ভিডিওটিকে কেন্দ্র করে তোলপাড় হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়া। পোস্ট করার কয়েক দিনের মধ্যেই কয়েক লক্ষ ভিউ এবং শেয়ার পেয়ে গিয়েছে এই ভিডিও। সকলেই প্রকৃত দোষীদের শাস্তি চাইছেন। কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ার দাবি সরকারের কানে পৌঁছয় কি না, সেটাই এখন দেখার।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn