ফাইনালে পাকিস্তানের মুখোমুখি বাংলাদেশ নাকি ভারত?
আজ বৃহস্পতিবার চ্যাম্পিয়নস ট্রফির দ্বিতীয় সেমিফাইনাল শেষে জানা যাবে এর উত্তর। ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে বাংলাদেশ সময় বিকেল সাড়ে তিনটায় মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ ও ভারত। এদের মধ্যে যারা জয়ী হবে তাদের সঙ্গে ১৮ জুন ওভালে ফাইনালে লড়বে পাকিস্তান।
ক্রিকেট পরিসংখ্যানে অবশ্য বাংলাদেশ থেকে ভারত বেশ কয়েক ধাপ এগিয়ে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে টাইগারদের পারফরর্মেন্স বলছে, টিম ইন্ডিয়াকে সহজে ছাড় দেবে না মাশরাফিবাহিনী। কারণ এর আগে আইসিসি ও এশিয়ার কাপের বিভিন্ন আসরে তাদের হারের নির্মম স্বাদ পাইয়ে দিয়েছে টাইগাররা। ২০০৭ বিশ্বকাপ ও ২০১২ এশিয়া কাপে টাইগারদের কাছে হারের পর ২০১৫ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল এবং ২০১৬ টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও কোহলিদের চোখে চোখ রেখে লড়াই করেছে মাশরাফি ও তাঁর দল।
ইদানিং বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচ মানেই বাড়তি উত্তেজনা। তা শুধু প্রতিপক্ষ দুই দেশের মধ্যেই সীমিত নয়। এ উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে পুরো ত্রিকেট বিশ্বে। টাইগারদের গত দুবছরের দুর্দান্ত পারফরর্মেন্স বলে দেয় যে, ব্যাটিং- বোলিং-ফিল্ডিং সবকিছুতেই ভারতের সাথে টক্কর দেওয়ার ক্ষমতা রাখে তারা। এই টুর্নামেন্টেই নিউজিল্যান্ডকে কিছুদিন আগেই খাদের কিনারা থেকে হারিয়ে ফিরেছে বাংলাদেশ। আর এই জন্যআর তাই বাংলাদেশকে হালকাভাবে নিয়ে ভুল করতে চায় না ভারত। ওপেনার তামিম ইকবাল রয়েছেন দুর্দান্ত ফর্মে। আগের ম্যাচেই সেঞ্চুরি হাকিয়ে ফর্মে ফিরেছেন সাকিব আল হাসান । মাহমুদ উল্লাহর রিয়াদও দেখিয়েছেন তার ব্যাটিং ক্যারিশমা। কাজেই বাংলাদেশের ব্যাটিংশক্তিকে সমীহ না করে উপায় নেই ভারতের।
ভারতের চেয়ে বাংলাদেশের বোলিং বিভাগ বৈচিত্র্যময়। চার পেসার, সবারই স্কিল আলাদা, শক্তির জায়গা ভিন্ন, এটিই আত্মবিশ্বাসী করে রাখছে দলকে। আর টিম ইন্ডিয়ার আতংকের আরেক নাম হলো মুস্তাফিজুর রহমান। কারণ দুবছর আগে তার পেস আক্রমণের সামনে খড়কুটোর মতো উড়ে গিয়েছিল ভারতীয় বিখ্যাত ব্যাটিং লাইন আপ। চলতি টুর্নামেন্টে এখন পর্যন্ত কাঙ্ক্ষিত ফর্মের ধারেকাছে পৌঁছতে পারেননি তিনি। তবে ভারতের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের কাটার মাস্টার জ্বলে ওঠার প্রত্যয় জানিয়েছেন।
দ্বিতীয় সেমিফাইনালে টিম ইন্ডিয়াকেই অবশ্য ফেভারিট বলে মনে করা হচ্ছে। এবারের টুর্নামেন্টে গত আসরের চ্যাম্পিয়ন ভারতের শুরুটা ছিল চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানকে হারিয়ে। মাঝে শ্রীলংকার বিপক্ষে হারলেও শেষ ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দারুন জয়ে সেমিতে ওঠে কোহলির ভারত। এবার চোখ ফাইনালে। দলে আছে একাধিক বিশ্বসেরা ব্যাটসম্যান। নিজেদের দিনে দলপতি কোহলি ছাড়াও, অভিজ্ঞ ধোনী, ধাওয়ানরা যে কোন বোলিং তছনছ করে দিতে পারেন। তাছাড়া উঠতি তারকা হিসেবে হার্দিক পাণ্ডিয়া, জসপ্রিত বুমরাহরাও নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করার মঞ্চ হিসেবে বেছে নিয়েছেন চ্যাম্পিয়নস ট্রফিকে। কাজেই বাংলাদেশের কাছে তারা অাত্মসমর্পনে রাজি নন কেউই।
১১ বছর পর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলছে বাংলাদেশ। এই প্রথম আইসিসির কোনো টুর্নামেন্টের সেমিফাইনালে খেলছে। এ নিয়ে উত্তেজনায় কাঁপছে গোটা দেশ। মাশরাফিদের সাফল্যের জন্য হাত উঁচিয়ে প্রার্থনাও করছেন ক্রিকেটপ্রেমীরা ।
বাংলাদেশ-ভারত সেমিফাইনালের আম্পায়ার ধর্মসেনা-ক্যাটেলবরো
আইসিসির কোনো বড় আসরের সেমিফাইনালে এই প্রথমবারের মতো খেলবে বাংলাদেশ। আগামী ১৫ই জুন এজবাস্টনে বাংলাদেশ বনাম ভারতের মধ্যকার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ম্যাচটি নিয়ে ১৬ কোটি ক্রিকেটপ্রেমীর কৌতূহলের শেষ নেই। তবে সবার মধ্যেই আম্পায়ারিংয়ের অজানা আতঙ্ক ভর করেছে। ২০১৫ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে বাংলাদেশি সমর্থকদের মধ্যে ক্ষোভের ঝড় বইয়ে দিয়েছিল আম্পায়ারিং। যে ম্যাচে দায়িত্ব পালন করেছিলেন ইয়ান গোল্ড ও আলীম দার। আর তাই সবার দৃষ্টি এখন ওই ম্যাচের আম্পায়ারিংয়ের দিকে।
চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সেমিফাইনালে বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচে ফিল্ড আম্পায়ার হিসেবে থাকবেন রিচার্ড ক্যাটেলবরো ও কুমার ধর্মসেনা। থার্ড আম্পায়ার হিসেবে থাকবেন নাইজেল লং। আর ফোর্থ আম্পায়ার হিসেবে থাকবেন রিচার্ড ইলিংওয়ার্থ। ম্যাচ রেফারির দায়িত্ব পালন করবেন ক্রিস ব্রড।
ফিরে দেখা
ওয়ানডেতে এর আগে দুই দলের ৩২ মোকাবেলায় এগিয়ে ভারত। ভারতের ২৬ জয়ের বিপরীতে বাংলাদেশ জিতেয়ে ৫টি ম্যাচে। একটি ম্যাচে কোন রেজাল্ট হয়নি। তবে সর্বশেষ দুইদলের পাঁচটি লড়াইয়ে দুটি করে জয় পেয়েছে বাংলাদেশ ও ভারত। একটি ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়েছিল। চোখ রাখা যাক ওই পাঁচটি ম্যাচে।
ম্যাচ-১: মিরপুর, ২৪ জুন ২০১৫
ভারত ৭৭ রানে জয়ী
টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে শিখর ধাওয়ানের ৭৫ এবং ধোনির ৬৯ রানের সুবাদে ভারত ৩১৭ রান সংগ্রহ করে। জবাবে খেলতে নেমে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়েছিল স্বাগতিক বাংলাদেশ। সুরেশ রায়নার তিন উইকেটের পর রবিচন্দ্রন অশ্বিনের ৩৫ রানে ২ উইকেট শিকার করেন। ২৪০ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ ৪৩ রান করেন সাব্বির রহমান।
ম্যাচ-২: মিরপুর, ২১ জুন ২০১৫
বাংলাদেশ ৬ উইকেটে জয়ী
টসে জিতে প্রথমে ব্যাটিং করে ভারত। মোস্তাফিজুর রহমান ৬ উইকেট শিকার করেন। ২০০ রানেই গুটিয়ে যায় ভারত। ধাওয়ান ৫৩ ও ধোনি ৪৭ রান করেন। জবাবে সাকিব আল হাসানের অপরাজিত ৫১ রানের সুবাদে ৪ উইকেট হারিয়েই জয় তুলে নেয় বাংলাদেশ।
ম্যাচ-৩: মিরপুর, ১৮ জুন ২০১৫
বাংলাদেশ ৭৯ রানে জয়ী
টসে জিতে আগে ব্যাটিং করতে নেমে তামিম ইকবালের ৬০, সৌম্য সরকারের ৫৪ ও সাকিব আল হাসানের ৫২ রানের সুবাদে ৩০৭ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ। জবাবে মোস্তাফিজুর রহমানের বিধ্বংসী বোলিংয়ে ২২৮ রানে গুটিয়ে যায় ভারতের ইনিংস। মোস্তাফিজ একাই নেন ৫ উইকেট। ভারতের পক্ষে সর্বোচ্চ ৬৩ রান করেন রোহিত শর্মা। রায়না করে ৪০ রান। ৪ ওভার বাকি থাকতে বড় জয় পায় বাংলাদেশ।
ম্যাচ-৪:মেলবোর্ন, ১৯ মার্চ ২০১৫
ভারত ১০৯ রানে জয়ী
প্রথমে ব্যাটিং করতে নেমে রোহিত শর্মার ১৩৭ রানের সুবাদে ভারত ৩০২ রান সংগ্রহ করে। বাংলাদেশের পক্ষে পেসার তাসকিন আহমেদ ৩ উইকেট শিকার করেন। জবাবে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়া বাংলাদেশের ইনিংস গুটিয়ে যায় ১৯৩ রানে। বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ ৩৫ রান করেন নাসির হোসেন। ৫ ওভার হাতে রেখে জয় পায় ভারত।
ম্যাচ-৫: মিরপুর, ১৯ জুন ২০১৪
পরিত্যক্ত
টসে জিতে আগে ব্যাটিং করতে নেমে বিপর্যয়ে পড়ে ভারত। ৩৪.২ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ভারত মাত্র ১১৯ রান সংগ্রহ করে। পরে বৃষ্টির বাধায় ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়। এ ম্যাচে সাকিব সর্বোচ্চ ৩ উইকেট পেয়েছিলেন।