মার্কিন প্রস্তাবিত বাজেটে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সচল রাখার জন্য নতুন করে ৯ কোটি ৫০ লাখ ডলার বরাদ্দ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এদিকে, জঙ্গিবাদ দমনে অ্যান্টি-টেররিজম এসিসট্যান্স হিসেবে বাংলাদেশকে ৩০ লাখ ডলার বরাদ্দের প্রস্তাব করেছে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর। মানবাধিকার ও আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে জঙ্গিবাদ দমনে বাংলাদেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে শক্তিশালী করতে তা কাজে লাগানো হবে। জঙ্গিবাদের উত্থানে বাধা দেওয়া, শনাক্ত করা, তদন্ত ও মোকাবিলা করতে ওই অর্থ ব্যয় করা হবে। ওই বরাদ্দ দিয়ে জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় কার্যকর ব্যবস্থা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে যথাযথ প্রশিক্ষণে ব্যবস্থা করা হবে বলেও মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রস্তাবিত বাজেটে উল্লেখ করা হয়। তবে বাংলাদেশে সামরিক অনুদান বন্ধের প্রস্তাব করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচনি প্রতিশ্রুতিতে বিদেশে আর্থিক সহায়তা কমানোর কথা বলেছিলেন। তার অংশ হিসেবেই বাংলাদেশে বরাদ্দ কমানোর প্রস্তাব করেছে মার্কিন প্রশাসন।  ২০১৬ সালে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ২১ কোটি ডলার আর্থিক সহায়তা পেয়েছিল। ট্রাম্পের পররাষ্ট্র দফতর তা কমিয়ে ২০১৮ সালের জন্য বাংলাদেশকে ১৩ কোটি ৮০ লাখ ডলার আর্থিক সহায়তা দেওয়ার প্রস্তাব করেছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও অন্যান্য অপরাধ সম্পর্কিত প্রতিষ্ঠান সংস্কারের মাধ্যমে বিচার ও প্রশাসনে আন্তর্জাতিক মানের মানবাধিকার নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে নতুন প্রস্তাবে। সমন্বিত কমিউনিটি পুলিশিং কার্যক্রম চালিয়ে অপরাধ ও জঙ্গিবাদ দমনের কথাও ওই প্রস্তাবে বলা হয়।

জানা গেছে, স্বাস্থ্য খাতে ২০১৬ সালে বাংলাদেশ আর্থিক বরাদ্দ পেয়েছে সাত কোটি ৯০ লাখ ডলার। ট্রাম্প প্রশাসন এ খাতেও বড় রকমের কাটছাঁটের প্রস্তাব করেছে। ২০১৮ সালে বাংলাদেশকে তিন কোটি ৬৭ লাখ ডলার আর্থিক সহায়তা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। তবে দক্ষিণ এশিয়ায় স্বাস্থ্য খাতে এটাই সবচেয়ে বড় মার্কিন সহায়তা। প্রস্তাবনায় দ্বিতীয় স্থানে আছে ভারত। ভারতে স্বাস্থ্য খাতে মার্কিন সহায়তার পরিমাণ দুই কোটি ৯৬ লাখ ডলার। এক কোটি ৭৬ লাখ ডলার নিয়ে তৃতীয় স্থানে আছে নেপাল। চতুর্থ স্থানে থাকা পাকিস্তানের স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ এক কোটি ১২ লাখ ডলার।

২০১৬ সালে বাংলাদেশে সামরিক খাতে আর্থিক বরাদ্দ ছিল ২০ লাখ ডলার। এবার সামরিক খাতে সব সহায়তা বন্ধের প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে সামরিক প্রশিক্ষণ ও শিক্ষার জন্য ১৫ লাখ ডলার বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। অপরদিকে, ২০১৮ অর্থবছরের বাজেটে বাংলাদেশের জন্য আর্থিক সহায়তা ও উন্নয়ন তহবিলে (ইকোনমিক সাপোর্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ফান্ড – ইসিডিএফ) ৯ কোটি ৫০ লাখ ডলার বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। ২০১৬ সালে এ খাতে কোনও বরাদ্দ ছিল না। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা স্থিতিশীল এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বজায় রাখতে বাংলাদেশকে সহায়তার জন্য ইসিডিএফ খাতে বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের যথাযথ সেবা জনগণের মাঝে বিস্তৃত করা, বাজার ব্যবস্থার উন্নয়ন, বাণিজ্য ও প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবস্থাপনা এবং ইসলামিক স্টেট ও আল-কায়েদার মতো জঙ্গি সংগঠনের উত্থান রুখতে ইসিডিএফ খাতে বরাদ্দ সহায়তা করবে বলে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর জানিয়েছে।

প্রস্তাবিত বাজেটে বলা হয়, ‘ওই বরাদ্দ জঙ্গিবাদের অগ্রমুখ প্রান্তিক জনগোষ্ঠী ও নাগরিক সমাজ, বিশেষত মানবাধিকার কর্মীদের সহায়তা করবে।’ তরুণ ও দরিদ্র্য জনগণের জন্য নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে জঙ্গিবাদবিরোধী কাজেও তা সহায়তা করবে। দরিদ্র্য জনগণের জন্য ওই বরাদ্দ ‘শিক্ষার দ্বিতীয় সুযোগ’ সৃষ্টি করবে বলেও প্রস্তাবিত বাজেটে দাবি করা হয়। বাজেট প্রস্তাব অনুযায়ী, সরকারি প্রক্রিয়ায় নাগরিক সমাজের অংশগ্রহণ ও বাংলাদেশে নির্বাচনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাড়াতে ওই আর্থিক বরাদ্দ সহায়তা করবে। সেই সঙ্গে আইনের শাসন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা এবং বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থার সেবা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে ওই বরাদ্দ সহায়তা করবে বলেও প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়। আন্তর্জাতিক অপরাধ ও মানবপাচার মোকাবিলায়ও ওই আর্থিক বরাদ্দ কাজ করবে। কৃষি উৎপাদন ও পুষ্টিগুণ বাড়াতে কার্যকর চাষাবাদ, নতুন প্রযুক্তি এবং ফসলের বৈচিত্র্য আনার ক্ষেত্রেও এটি কাজ করবে বলে প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়।

প্রস্তাবে আরও বলা হয়, ‘নীতিগত সংস্কার এবং অবাধ বাণিজ্যকে সহায়তার মধ্য দিয়ে ইএসডিএফ বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত বেড়ে উঠা বাজারে মার্কিন ব্যবসা বাড়াতে এবং যুক্তরাষ্ট্রের জন্য দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বাণিজ্য করিডোর উন্মুক্ত করতেও ওই বরাদ্দ সহায়তা করবে। ওই সহায়তা দুর্যোগ মোকাবিলা এবং প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে প্রতিনিয়ত প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি কমিয়ে আনতে কাজ করবে।’

শহরাঞ্চলসহ দেশের সব জায়গায় গর্ভবতী নারীদের মৃত্যুর হার কমাতে এবং পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের জন্য মার্কিন প্রশাসন দুই কোটি ২৫ লাখ ডলার বরাদ্দের প্রস্তাব করেছে। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর জানিয়েছে, নবজাতক মৃত্যু শিশু মৃত্যুর হারে বিশেষ প্রভাব ফেলে। নবজাতকের প্রথম ৩০ দিনে, যখন তাদের মৃত্যুর আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি। ওই বরাদ্দ এমন সময়ে জীবন বাঁচাতে সহায়তা করবে। ফিস্টুলা দূর করে নিরাপদ মাতৃত্বে সহায়তা করা কথাও ওই প্রস্তাবে বলা হয়।

কমিউনিটিভিত্তিক পুষ্টি কার্যক্রম ও অপুষ্টির শিকার শিশুদের এ থেকে উত্তরণের ক্ষেত্রে মার্কিন প্রশাসন ৪৮ লাখ ডলার বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করেছে। দুই বছরের কম বয়সী শিশুরা এ পুষ্টি কার্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত থাকবে। পররাষ্ট্র দফতর ওই প্রস্তাবে জানিয়েছে, মায়ের বুকের দুধের বাইরেও শিশুদের জন্য যে পুষ্টিকর খাদ্য ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক ব্যবস্থা প্রয়োজন ওই আর্থিক বরাদ্দ এতে সহায়তা দেবে। বাংলাদেশে, বিশেষত দক্ষিণাঞ্চলে অপুষ্টি মোকাবিলায় এ পুষ্টি কার্যক্রম কৃষি ও মাছ উৎপাদন এবং পুষ্টি ও চিকিৎসা শিক্ষার সঙ্গে জড়িত বলে প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়। রফতানি নিয়ন্ত্রণ এবং সীমান্ত নিরাপত্তার জন্য মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর আরও ৩ লাখ ডলার বরাদ্দের প্রস্তাব করেছে। বাংলাদেশের জল, জমি, আকাশ নিরাপদ রাখতে বিভিন্ন নিয়ন্ত্রক ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার জন্য ওই অর্থ বরাদ্দ থাকবে।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn