বাংলাদেশ ক্রিকেট দল গত ফেব্রুয়ারিতে হায়দ্রাবাদে ভারতের মাটিতে যে প্রথম টেস্ট খেলেছিল, সেই ম্যাচের ব্যবস্থাপনায় বিপুল আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগে হায়দ্রাবাদ ক্রিকেট সংস্থা তাদের দুই শীর্ষ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করেছে। সংস্থার প্রেসিডেন্ট ও ভারতের সাবেক টেস্ট তারকা আরশাদ আয়ুব বরখাস্ত হয়েছেন। বাদ দেওয়া হয়েছে সংস্থার সাবেক সচিব কে জন মনোজকেও। ফেব্রুয়ারির ৯ থেকে ১৩ তারিখ পর্যন্ত হায়দ্রাবাদের উপ্পলে রাজীব গান্ধী আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে ভারতের মাটিতে বাংলাদেশ খেলেছিল তাদের প্রথম টেস্ট। ওই ম্যাচটির আয়োজন ও সার্বিক ব্যবস্থাপনা বেশ ভালো ছিল, ম্যাচের পাঁচ দিন ধরেই অন্তত চল্লিশ থেকে সত্তর শতাংশ স্টেডিয়াম ভরা ছিল।
কিন্তু পরে ওই ম্যাচের উদ্যোক্তাদের আর্থিক দুর্নীতি নিয়ে এত অভিযোগ ওঠে যে, আন্তর্জাতিক অডিটর সংস্থা ডেলয়েটকে দিয়ে ম্যাচের আর্থিক হিসাব-নিকাশের তদন্ত করাতে বাধ্য হয় হায়দ্রাবাদ ক্রিকেট সংস্থা। ডেলয়েট-এর সেই রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পরই সংস্থা আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের দুই প্রধান কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করলো। সংস্থার বর্তমান সচিব টি শেস নারায়ণ সোমবার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আরশাদ আয়ুব ও কে জন মনোজ- দুজনের বিরুদ্ধেই তহবিল তছরুপের অকাট্য প্রমাণ মিলেছে। সন্দেহের তালিকায় আছেন আরও  অনেকেই। কমিটির সদস্যরা সর্বসম্মতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাদের কোনোভাবেই হায়দ্রাবাদ ক্রিকেটের সঙ্গে জড়িত থাকার কোনও অধিকার নেই।’

তিনি আরও জানান, বাংলাদেশ টেস্টের সময় ম্যাচের ক্যাটারারদের কন্ট্রাক্ট দেওয়া থেকে টিকিটের বিলিবন্টন আর্থিক দুর্নীতি ছিল সব ক্ষেত্রেই। এমন কী, ড্রিঙ্কসের সময় ভিরাট কোহলি বা সাকিব আল হাসানরা যে ট্রলি থেকে পানীয় নিয়ে তৃষ্ণা মিটিয়েছেন, সেই বরাত দেওয়ার ক্ষেত্রেও দুর্নীতি হয়েছে বলে প্রমাণ মিলেছে।

সাবেক টেস্ট তারকা ও ভারতের এককালের নামী অফ-স্পিনার আরশাদ আয়ুব এই বরখাস্তের সিদ্ধান্তে স্তম্ভিত। তিনি হায়দ্রাবাদের অত্যন্ত ধনী ও সম্ভ্রান্ত একটি ব্যবসায়ী পরিবারের সন্তান। এই তহবিল তছরুপের অভিযোগ তিনি কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না।

তিনি বলেছেন, ‘এত বছর ধরে আমি হায়দ্রাবাদ ক্রিকেট সংস্থার সঙ্গে যুক্ত আছি, কেউ বলতে পারবে না সংস্থার অ্যাকাউন্ট থেকে আমি একটা পয়সাও সরিয়েছি। আমার বিরোধী গোষ্ঠী সম্পূর্ণ মিথ্যা অভিযোগে আমাকে ফাঁসাতে চাইছে।’

সংস্থার সাবেক সচিব কে জন মনোজ অবশ্য অভিযোগের জবাবে এখনও কোনও মন্তব্য করেননি। তাকে এদিন বারবার ফোন করা হলেও তিনি তা ধরেননি, অথবা কেটে দিয়েছেন।

অথচ বাংলাদেশ টেস্টের সময় এই মি. মনোজই ছিলেন হায়দ্রাবাদ ক্রিকেটের প্রধান মুখ। সফররত বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান নাজমুল হাসান পাপনের সঙ্গে ফটো-সেসনই হোক, কিংবা বাংলাদেশ থেকে আসা ক্রিকেট অনুরাগীদের সংবর্ধনা, সব সময়ই তাকে দেখা গেছে একেবারে হাসিমুখে সামনে থাকতে। হায়দ্রাবাদ যে এই ঐতিহাসিক টেস্ট আয়োজন করতে পেরে কত গর্বিত, অক্লান্তভাবে তিনি সেই ‘বাইট’ দিয়ে গেছেন দেশি-বিদেশি মিডিয়ার সামনে।

সেই স্মরণীয় টেস্ট শেষ হওয়ার পর আড়াই মাসও গড়াল না, কে জন মনোজ এবং আরশাদ আয়ুব টেস্ট আয়োজনের এই  দুই প্রধান স্তম্ভকে বিদায় নিতে হলো চুরির দায় মাথায় নিয়ে। হায়দ্রাবাদ ক্রিকেট সংস্থার সূত্রগুলো বলছে, পুরনো আরও  নানা কেলেঙ্কারির তদন্ত হচ্ছে। তাতে বিদায় নিতে হতে পারে আরও অনেককেই!

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn