বাবার আদর্শের বিরুদ্ধে আমি রাজনীতি করেছি: রিজিয়া
বাবা জামায়াতে ইসলামীর নেতা হলেও আমি কেন আওয়ামী লীগের রাজনীতি করতে পারবো না? মহিলা আওয়ামী লীগে রিজিয়া নদভীর পদ পাওয়ার ক্ষেত্রে বাবার বিরুদ্ধে গিয়ে আওয়ামী লীগের জন্য কাজ করার আত্মত্যাগই গুরুত্ব পেয়েছে বলে জানিয়েছেন রিজিয়া। মঙ্গলবার দুপুরে পদ পাওয়া ও আওয়ামী লীগের জন্য কতদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছেন তার ব্যাখ্যা দেন তিনি। রিজিয়া নদভী বলে, প্রধানমন্ত্রী বাবার আদর্শ রক্ষার জন্য দেশ ও মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন, আর আমি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে বাবার বিরুদ্ধে রাজনীতি করছি। এটা কি আওয়ামী লীগের জন্য আমার আত্মত্যাগ নয়। কোন লবিং তদবির করে মহিলা আওয়ামী লীগের পদ পাননি জানিয়ে রিজিয়া বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত আছি। উত্তরাধিকার সূত্রে আমি কোন রাজনীতি করছি না। বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করার জন্য কাজ করে যাচ্ছি।
আমার এলাকায় নারীদের সংগঠিত করেছি। জামায়াত-শিবিরের এলাকায় প্রত্যেক গ্রামে গ্রামে নারীদের নৌকা প্রতিক ও আওয়ামী লীগের জন্য কাজ করতে অনুপ্রাণিত করেছি। আমার সাংগঠনিক যোগ্যতা দেখেই আমাকে মহিলা আওয়ামী লীগের পদ দেওয়া হয়েছে। জামায়াতে ইসলামের ছাত্রীদের সংগঠন ছাত্রী সংস্থার সাথে কোন সময় জড়িত ছিল না জানিয়ে তিনি বলেন, নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় আমার বিয়ে হয়েছে আওয়ামী লীগের পরিবারের সন্তানের সাথে। আমি যখন থেকে রাজনীতি বুঝতে শুরু করেছি তখন থেকেই আওয়ামী লীগের পক্ষে কাজ করে যাচ্ছি। বাবার রাজনীতির কথা কোন সময় মাথায় অনিনি। তিনি আরো বলেন, তাছাড়া মিডিয়াতে এসছে আমি চট্টগ্রাম কলেজে পড়েছি এটা সত্য নয়। আমি পড়েছি ছুলেমা-সিরাজ মহিলা মাদ্রাসায়। কোন সময় ছাত্রী সংস্থার সাথে জড়িত ছিলাম না। কম বয়সে বিয়ে হয়েছে সংসার আর স্বামীর সাথে আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম।
২৫ বছর ধরে আওয়ামী পরিবারের সাথে থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে থাকার পরেও কেন বাবার পরিচয় মূখ্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে এমন প্রশ্নও রাখেন রিজিয়া নদভী। তিনি বলেন, আমার বিয়ে হয়েছে একটি মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের কাছে। বিয়ের পর থেকে আমি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী হয়ে গড়ে উঠেছি। এর আগে রাজনীতি বুঝতাম না। রিজিয়া নদভীকে নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ার পর তিনি ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েও নিজের পদ পাওয়ার ব্যাখ্যা দেন। ওই স্ট্যাটাসে রিজিয়া লিখেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী তথা বর্তমান সরকারের ধারাবাহিকতায় সাফল্য ধরে রাখার মানসে ও সাতকানিয়া-লোহাগাড়ায় মহিলা ও দরিদ্র মেহেনতি মানুষের সার্বিক সহযোগিতায় আমি, আমার স্বামী দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছি। নৌকার প্রতি গণ মানুষের ভালবাসা সৃষ্টিতে সুবিধাবঞ্চিত, দরিদ্র, মেহেনতি, খেটে খাওয়া নারী পুরুষের সেবা করে যাচ্ছি।
বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেসা মুজিব আমাদের অনুকরণীয় অনুসরণীয়। বঙ্গবন্ধুকে যিনি নেপথ্যে থেকে সবোর্চ্চ সহযোগিতা করেছিলেন। স্বামী বঙ্গবন্ধুর সব আন্দোলন সংগ্রামে, সন্তানদের লালন পালন করে শিক্ষিত করে গড়ে তুলে এবং বঙ্গবন্ধুকে অনুপ্রেরণা ও শক্তি দিয়ে তার সফলতার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছিলেন এই বঙ্গমাতা নারী। বাঙালি জাতির সব ইতিহাসে জগত বিখ্যাত রাজনীতিবিদ বঙ্গবন্ধুর নামের পাশে ওনার নাম উচ্চারিত হওয়া উচিত।
জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাদের সামনে জীবন্ত মডেল। আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হাত ধরেই সাতকানিয়া-লোহাগাড়াকে একটি আদর্শ, উন্নত জনপদে পরিণত করতে চাই।যখন আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে নৌকার বিজয়কে এগিয়ে নিতে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে প্রতিটি নেতা কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়া দরকার তখন নিজেদের মধ্য কাদাছোঁড়াছুড়ি কতটুকু যুক্তিযুক্ত তা আজ নৌকাপ্রেমী সাধারণ মানুষের প্রশ্ন।
সুতরাং আমি ও আমার স্বামী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও বর্তমান সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্প বাস্তবায়ন করে সাতকানিয়া লোহাগড়ার গনমানুষের অধিকার আদায়ে, বঙ্গবন্ধু তনয়া মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে সমাজকে পরিবর্তনের দিকে ধাবিত করলে এই মিথ্যা, বানোয়াট ভূয়া সংবাদটি প্রকাশ করে মান ক্ষুন্ন করার চেষ্টা করেছে। যা অতীতেও নানা অপ্রচার চালিয়ে সফল হতে পারেনি ইনশাল্লাহ্।
সংবাদে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০০২-০৪ সাল পর্যন্ত ইসলামী ছাত্রী সংস্থার চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সভাপতি ছিলাম। বড় বিচিত্র তথ্য এটি কেননা নবম শ্রেণিতেই আমার বিবাহ হয়েছিলো পরবর্তিতে সংসার সামলিয়ে গৃহবধূ থাকা অবস্থায় পড়াশোনা শেষ করি রাজনীতি করার সুযোগ হয়নি তখন। তাছাড়া আমার মামা মুক্তিযোদ্ধা মরহুম হাবিবুল্লাহ চৌধুরী একজন মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, দক্ষিণ জেলা কৃষক লীগের প্রতিষ্ঠাতাও বাঁশখালি আওয়ামী লীগের ৪/৫ বারের নির্বাচিত সভাপতি ছিলেন সেই সাথে আমার শ্বশুরবাড়ী একটি আওয়ামী পরিবার, আমার ভাসুর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম আবু জিয়া মুহাম্মাদ শামসুদ্দিন চৌধুরী মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও অবিভক্ত সাতকানিয়া-লোহাগাড়ার যুবলীগের ফাউন্ডার সভাপতি ও সাতকানিয়া থানা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ছিলেন। সেই সাথে বিভিন্ন রকম কাল্পনিক তথ্য দিয়ে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ নামক সংগঠনের নেত্রী হিসাবে গণমাধ্যমে উপস্থাপন করে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে ঘোলা জলে মাছ শিকার করার চেষ্টা করা হচ্ছে। যার কোন এক বিন্দু সত্যতা নেই। ডাক্তারের ছেলে যেমন ডাক্তার হয় না তেমনি রাজনীতি ও উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়ার বিষয় নয়। রাজনীতি করা গণতান্ত্রিক অধিকার, প্রত্যেকের নিজস্ব চিন্তা-চেতনা, জ্ঞান-গবেষণা, যুক্তি-বিবেচনার মাধ্যমে যে কোন রাজনৈতিক আদর্শকে গ্রহণ করার অধিকার আছে।স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় আমার জন্ম হয়নি, সুতরাং এই বিষয়ে আমাকে জড়িয়ে কোন বানোয়াট সংবাদ প্রকাশ করে আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করার চেষ্টা নাগরিক অধিকার খর্ব করারই শামিল। আমার কোন বক্তব্য না নিয়ে মিথ্যা বিভ্রান্তিমূলক সংবাদটি প্রকাশ করায় আমি তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।