বার্তা ডেস্ক :: সম্প্রতি ক্যাসিনো-জুয়া, নারী কেলেঙ্কারিসহ নানা ইস্যুতে সমালোচিত হচ্ছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) সদস্যরা। তবে সেবার বিনিময়ে টাকা গ্রহণ, দীর্ঘদিন থানার ওসি থেকে আধিপত্য বিস্তার নিয়েও বিব্রত সংস্থাটি। ক্যাসিনোকাণ্ডে প্রাথমিকভাবে কয়েকজনকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত ও বদলি করা হয়েছে। তবে এসব বিষয় নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো মন্তব্য করতে চাচ্ছেন না আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত এ বাহিনীর সদস্যরা। গত ১৮ সেপ্টেম্বর রাজধানীর মতিঝিলের ইয়ংমেনস ক্লাব থেকে নারী-পুরুষসহ ১৪২ জনকে আটক এবং ২৪ লাখ ২৯ হাজার টাকা জব্দ করে র‌্যাব। অথচ ক্লাবটিতে দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে চলছিল ক্যাসিনো। মতিঝিল থানা থেকে যার দূরত্ব সর্বোচ্চ ১০০ গজ। অভিযানের পর মতিঝিল থানা পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। ঢাকার ক্রীড়া ক্লাবগুলোতে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরুর চারদিন পর মতিঝিলের চারটি ক্লাবে অভিযান চালায় মতিঝিল থানা পুলিশ। বন্ধ করে দেয় আরামবাগ ক্রীড়া সংঘ, দিলকুশা স্পোর্টিং ক্লাব, ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিং ক্লাব ও মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব। নাকের ডগায় বছরের পর বছর ক্যাসিনো চললেও কেন এত দেরিতে অভিযান, এ প্রশ্নের উত্তর মিলছে না।

এ বিষয়ে মতিঝিলের স্থানীয়দের অনেকে বলছেন, জুয়ার একটা অংশ নিয়মিত যেত মতিঝিল থানা পুলিশের কয়েকজন কর্মকর্তার পকেটে। তবে এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি মতিঝিল থানা পুলিশের ওসি (সদ্য বদলিকৃত) ওমর ফারুক। জানতে চাইলে মতিঝিলের উপ-কমিশনার (ডিসি) আনোয়ার হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমাদের কাছে খবর আসামাত্র অভিযানে যাই। কতদিন ধরে চলছে, কারা এর সঙ্গে জড়িত- এসব বিষয় তদন্ত করে দেখব।’ মতিঝিল পুলিশ ‘না জানার ভান’ করলেও তার চেয়েও বড় অপরাধ করেছে পুলিশের দুই কর্মকর্তা। ১৮ সেপ্টেম্বর রাতে একদিকে যখন মতিঝিল ও গুলিস্তানের ক্লাবগুলোতে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান চালাচ্ছিল র‍্যাব, একই সময়ে সেগুনবাগিচার একটি ভবন থেকে ক্যাসিনো পরিচালনাকারী ১৩ নেপালি নাগরিককে পালাতে সাহায্য করে পুলিশের ওই দুই সদস্য। গণমাধ্যমে এ-সংক্রান্ত ফুটেজ ভাইরাল হওয়ার পর পুলিশের নজরে আসে বিষয়টি। ভাইরাল ভিডিওটি নিয়ে জঙ্গিবিষয়ক এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলামকে প্রশ্ন করেন সাংবাদিকরা। ২৪ সেপ্টেম্বর তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, “পুলিশের পাশাপাশি অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজে নিয়োজিত সদস্য ও বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার সদস্যরাও ওয়াকিটকি ব্যবহার করেন। পালাতে সহায়তাকারীরা পুলিশ কি-না, নিশ্চিত না হয়ে ‘পুলিশ সদস্য’ বলে প্রচার না করার অনুরোধ করছি।”

তিনি আরও বলেছিলেন, ‘নেপালিদের আত্মগোপনের বিষয়টি নিয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা সংস্থার বিভিন্ন টিম কাজ শুরু করছে। সিসিটিভির ছবি পরীক্ষা করে ওয়াকিটকি হাতে থাকা ওই ব্যক্তির পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা অব্যাহত আছে।’ ওই ঘটনার দুদিন পর তদন্ত করে পুলিশ জানতে পারে, নেপালিদের পালাতে সহায়তা করা দুজনের একজন রমনা থানার কনস্টেবল দীপঙ্কর চাকমা এবং অন্যজন ডিএমপির প্রতিরক্ষা বিভাগের এএসআই গোলাম হোসেন মিঠু। তৎক্ষণাৎ তাদের সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। তবে এ বিষয়ে পুলিশের কোনো সদস্য মুখ না খুললেও ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্র্যাব) নেতাদের সঙ্গে এক অনুষ্ঠানে মনিরুল ইসলাম বরখাস্তের বিষয়টি জানান। পুলিশের বিষয়ে আর কোনো মন্তব্য করেননি তিনি। এখানেই সমালোচনার শেষ নয়। ২৩ সেপ্টেম্বর তেজগাঁও-গুলশান লিংক রোডের অভিজাত ফু-ওয়াং ক্লাবে অভিযান চালায় পুলিশ। সঙ্গে ছিলেন ঢাকা জেলার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবদুল্লাহ আল মামুন। দীর্ঘ দেড় ঘণ্টা অভিযান চালিয়ে ক্লাব ও বারে ক্যাসিনো কিংবা অবৈধ কিছু পায়নি পুলিশ। কোনো ফলাফল ছাড়াই শেষ হয় তাদের অভিযান। এর দুদিন পর ২৫ সেপ্টেম্বর একই ক্লাবে ফের অভিযান চালায় র‍্যাব। রাতভর অভিযান চালিয়ে জব্দ করা হয় বিপুল পরিমাণ অবৈধ মাদক। র‍্যাবের হিসাব অনুযায়ী, ক্লাবটি থেকে ১০ হাজার ক্যান বিদেশি বিয়ার, দুই হাজার বোতল বিদেশি মদ এবং বিপুল পরিমাণ সিগারেট জব্দ করা হয়। এগুলোর অধিকাংশই অনুমোদনহীন। সাধারণত নির্দিষ্ট কিছু ব্র্যান্ডের মদ আনার অনুমোদন থাকে। জব্দ করা মদ সেই তালিকায় নেই।

এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের ঊর্ধ্বতন দুজনকে ফোন দেয়া হলে তারা কিছু বলতে রাজি হননি। ‘পুলিশ পেল না, র‍্যাব কীভাবে পেল?’ একই প্রশ্ন র‍্যাবকে করা হলে র‍্যাবের লিগ্যাল ও মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক সারোয়ার বিন কাশেম বলেন, ‘পুলিশের অভিযানের পর তারা এগুলো ক্লাবে তুলতে পারে।’ এদিকে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে গ্রেফতারের পর তাকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নেয় র‍্যাব। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, খালেদ ক্যাসিনোর টাকা ভাগ পেত ডিএমপির এমন কয়েকজন সদস্যের নাম বলেছেন। ডিএমপি সদর দফতরের অতিরিক্ত ডিআইজি সমমর্যাদার এক কর্মকর্তার কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ক্যাসিনো ইস্যুতে পুলিশ কোনো মন্তব্য করতে পারবে না। যদি কিছু বলতে হয় তাহলে ডিএমপি কমিশনার বলবেন।’ একই কথা বলেছেন পুলিশ সদর দফতরের পুলিশ সুপার সমমর্যাদার এক কর্মকর্তা। ক্যাসিনো ও জুয়ার ইস্যুতে পুলিশ আপাতত ‘কোনো মন্তব্য করবে না’ বলে জানান তিনি। সৌজন্যে : জাগোনিউজ২৪

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn