সীমান্ত ঘেঁষা আগরতলা বিমানবন্দর সমপ্রসারণে বাংলাদেশের কাছে জমি চেয়ে ভারতের অনুরোধ খতিয়ে দেখছে ঢাকা। এক বছর আগে আসা ওই প্রস্তাব প্রশ্নে এখনো সরকার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি। তবে প্রস্তাবটির বিষয়ে ঢাকা ‘নেতিবাচক’ নয় এমনটি আভাস দিয়েছেন কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, সরকারের নীতি-নির্ধারণী মহলের বেশির ভাগের মত হচ্ছে- প্রস্তাবটির বিভিন্ন দিক আরো ভালোভাবে খতিয়ে দেখা এবং আরও সময় নেয়া। নীতি নির্ধারকরা চাইছেন সংশ্লিষ্টরা নিঃশব্দে প্রস্তাবটির ভূ-রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক দিক খতিয়ে দেখুক। দিল্লির তরফে অবশ্য দ্বিপক্ষীয় নানা ফোরামে বিষয়টি নিয়মিতভাবে উত্থাপন করা হচ্ছে। এ নিয়ে ঢাকার মতামত পাওয়ার চেষ্টাও রয়েছে প্রতিবেশী দেশটির। বাংলাদেশের বিদেশনীতি বাস্তবায়নের সঙ্গে যুক্ত দায়িত্বশীল প্রতিনিধিরা মানবজমিনের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক আলাপে প্রস্তাবটির নানামুখি জটিলতা এবং এ নিয়ে এক ধরণের অস্বস্তি থাকার কথা স্বীকার করছেন।বলেন, ‘আমাদের মধ্যে এ নিয়ে এক দফা আলোচনা হয়েছে। সেখানে বেশ কিছু বিষয় এসেছে।

 যার মধ্যে প্রবলভাবে এসেছে- ঘনিষ্ট প্রতিবেশী এবং দুর্দিনের বন্ধু ভারতের ওই প্রস্তাবটি একবাক্যে উড়িয়ে না দেয়া। আবার দেশের স্বার্বভৌমত্বের সঙ্গে সংঘর্ষিক কোন কিছু যাতে না আসে সেটিও নিশ্চিত করা। একই সঙ্গে প্রস্তাবটির বিষয়ে বাংলাদেশ ইতিবাচক হলে এর রাজনৈতিক এবং কূটনৈতিক প্রতিক্রিয়া কী হয়- সে বিষয়ে সরকার তথা রাষ্ট্রকে ভাবতে হচ্ছে।’ দিল্লির প্রস্তাব বিষয়ে প্রাথমিক আলোচনায় বেশ কিছু প্রশ্ন এসেছে জানিয়ে দায়িত্বশীল এক প্রতিনিধি বলেন, প্রথমত একটি দেশের বিমানবন্দরের রানওয়ে সমপ্রসারণের মত স্পর্শকাতর এবং স্থায়ী কাঠামো নির্মাণে অন্য দেশের জমির ব্যবহারের প্রস্তাব কতটা যুক্তিসঙ্গত? এ প্রশ্ন আসছে সঙ্গত কারণেই। তাছাড়া নিজেদের বিশাল জমি থাকার পরও কেন এমন প্রস্তাব? দ্বিতীয় বিষয় হচ্ছে- এর সঙ্গে উভয়ের নিরাপত্তার প্রশ্ন জড়িত।  বন্ধুত্বের খাতিরে যদি বাংলাদেশ জমি ব্যবহারের অনুমতি দিয়েও দেয়, তাহলে ওই জমির উপর কার কতটা নিয়ন্ত্রণ থাকবে, সেটি ই-বা নির্ধারিত হবে কিভাবে? নিরাপত্তার প্রশ্নটিও রয়েছে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে এমন নানা বিষয় বিবেচনায় নেয়ার প্রয়োজন রয়েছে বলেও মতামত আসে। ওই প্রতিনিধি বলেন, যুক্তি-তর্ক, আলোচনা-পর্যালোচনায় অনেক কিছুই এসেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য না হয়েও ফ্রান্সের সঙ্গে সুইজারল্যান্ডের (জেনেভা) বিমানবন্দর ভাগাভাগির বিষয়টি ইতিবাচক উদাহরণ হিসাবে সামনে আনছেন কেউ কেউ। তাদের মতে, ‘বন্ধুত্বে’র মত ভারতের সঙ্গে ‘বিমানবন্দরের সুবিধা’র ভাগাভাগি হতে পারে। রানওয়ের বাতি ও কিছু স্থাপনার জন্য কয়েক একর জমি ব্যবহার করতে চায় ভারত। এখন এটি ভাড়া, বন্ধক নাকী বিনিময় হবে সেটি বিবেচনার করা যেতে পারে। সীমান্ত লাগোয়া বাংলাদেশের ব্রাম্মণবাড়িয়া, কুমিল্লাসহ ওই অঞ্চলের লোকজন আগরতলা থেকে সরাসরি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট ধরতে পারেন- এ নিয়ে ভারতের সঙ্গে স্পেশাল অ্যারেঞ্জমেন্টও হতে পারে। নানা যুক্তি, পাল্টাযুক্তি রয়েছে জানিয়ে সরকারের পররাষ্ট্রনীতি-কৌশল বাস্তবায়নকারী প্রতিনিধিরা বলছেন, ‘সুচিন্তা’ আর ‘সদিচ্ছা’য় অনেক কিছুই সম্ভব। বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ক্ষেত্রেও এটা জরুরি। তবে বিবেচ্য বিষয় হচ্ছে- এমন স্পর্শকাতর বিষয়ে বাংলাদেশ এখনই দিল্লির সঙ্গে ‘আলোচনা’য় যাওয়ার রাজনৈতিক ঝুকি নেবে কি না?
উল্লেখ্য, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জমান খান কামাল বুধবার থেকে দিল্লি সফর শুরু করেছেন। সেই সফরে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ’র সঙ্গে তার গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হওয়ার সূচি রয়েছে। ওই সফরকে সামনে রেখে গত সপ্তাহে ঢাকায় বিভিন্ন কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে আগরতলা বিমানবন্দর সমপ্রসারণে বাংলাদেশের কাছে ভারতের জমি চাওয়ার খবর চাউর হয়। খবরে প্রকাশ- কলকাতা ও গুয়াহাটি থেকে আগরতলা বিমানবন্দরে আকাশযানগুলোর উড্ডয়ন ও অবতরণের জন্য বাংলাদেশের আকাশসীমা ব্যবহারের প্রয়োজন হয় ভারতের। তাছাড়া রানওয়েটিও বাড়ানো জরুরি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট ওঠানামার জন্য, ফলে সেটিও  বাংলাদেশ সীমান্তের দিকেই বাড়াতে চায় ভারত। দিল্লি সর্বপ্রথম বাংলাদেশি কর্মকর্তাদের কাছে বিমানবন্দরটি সমপ্রসারণের প্রস্তাব করে, যা নিয়ে গত বছরের জুলাইতে ভারতের তৎকালীন স্বরাষ্ট্র ও বর্তমান প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের বাংলাদেশ সফরকালে আলোচনাও হয়। পরে ওই প্রস্তাবের বিস্তারিত লিখিত আকারে পাঠায় দিল্লি। প্রকাশিত রিপোর্টে পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হককে উদ্বৃত করে বলা হয় সচিব বলেছেন, দিল্লি ওই প্রস্তাব বিবেচনার সঙ্গে অনেকগুলো মন্ত্রণালয় যুক্ত। তারা এ ব্যাপারে ‘ইতিবাচক মনোভাব’ নিয়েই আলোচনা করছেন।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn