বিয়ানীবাজার উপজেলার কুড়ারবাজার ইউনিয়নের দেউলগ্রামে সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফের পুত্র সারোয়ার আহমদকে কাজের মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগে শনিবার রাতে র‌্যাব-০৯ গ্রেফতার করে। রবিবার রাত ২টার দিকে গ্রেফতারকৃত যুক্তরাজ্য প্রবাসী সারোয়ার আহমদকে বিয়ানীবাজার থানায় হস্তান্তর করে র‌্যাব-০৯। সংবাদ সম্মেলনে সারোয়ারের স্ত্রী তামান্না সুলতান দাবি করেন, তার স্বামী সারোয়ার আহমদ নির্দোষ। তাকে ফাঁসানো হয়েছে। তিনি স্বামীর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত করার দাবি জানান। তামান্না বলেন, আমাদের সম্ভ্রান্ত পরিবারের যারাই চরিত্রহরণ করেছে তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানাচ্ছি। আমি সারোয়ারের স্ত্রী হিসাবে বলছি, দীর্ঘ আড়াই বছরে তার মধ্যে চারিত্রিক কোন স্খলন দেখিনী। এ ঘটনাটি সাজানো। এ বিষয়ে কুড়ারবাজার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ অবহিত রয়েছেন। আমার স্বামীকে ফাঁসাতে কোন একটি মহল এরকম ঘটনা সাজিয়েছে। তিনি ভিকটিম কাজের মেয়ের পরিবার ও তার এলাকায় তাদের অবস্থান জানার জন্য সাংবাদিক ও তদন্তকারি কর্মকর্তাদের আহবান জানান। তিনি বলেন, এ পরিবারের লোকজন কি রকম প্রকৃতির তা আপনারা তদন্ত করলে জানতে পারবেন। আমরা সরল বিশ্বাসে তাদের আশ্রয় দেয়ার কারণে আজ ভূক্তভোগী।
লিখিত বক্তব্য পাঠকালে সারোয়ার আহমদের মাতা মিনা বেগম এবং চাচী ফাতিমা বেগম উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত কুড়ারবাজার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু তাহের বলেন, গত বৃহস্পতিবার সারোয়ারের বাড়িতে তার কাজের মেয়ে ও তার মায়ের অবস্থা নির্যাতনের পর খুব খারাপ একটি সংবাদ পেয়ে আমি যাই। গিয়ে দেখি সবকিছু স্বাভাবিক। মেয়েটি পাক ঘরে কাজ করছে। তাকে সবার সামনে ও আড়ালে নিয়ে জিজ্ঞেস করি। তাকে সম্পূর্ণ অভয় দিয়ে আমার কাছে সব খুলে বলার জন্য বলারও পর মেয়েটি হাসিমুখে বলেছে- এ বাড়িতে তার প্রতি সবাই আন্তরিক, কোন ধরনের নির্যাতন করা হয়নি। তবে কানাইঘাটে চাচাতো ভাই (জমির উদ্দিনের পুত্র) তাকের কয়েকবার ধর্ষণ করেছে। এর আমি চলে আসি।

সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্য নিম্নে তুলে ধরা হলো-
‘আমি তামান্না সুলতানা বিয়ানীবাজার উপজেলার কুড়ারবাজার ইউনিয়নের দেউল গ্রামের যুক্তরাজ্য প্রবাসী সরোয়ার আহমদের স্ত্রী ও কুড়ারবাজার ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মরহুম আব্দুল লতিফ সাহেবের পুত্র বধু। বিগত আড়াই বৎসর আগে আমাদের বিবাহ সম্পন্ন হয়েছে। আমার স্বামী বিবাহের পর ৬ মাসের জন্য যুক্তরাজ্য চলে যান। এরপর আবার দেশে এসে আমার সাথে বসবাস করে আসছেন। আমাদের ১০ মাসের দুটি জমজ সন্তান রয়েছে। আমার স্বামী অত্যন্ত ভালো মানুষ। তিনি আমার দুটি জমজ সন্তানকে দেখাশুনা করার কারণে দীর্ঘ দেড় বছর থেকে আমার সাথে অবস্থান করছেন। স্ত্রী হিসেবে তাহার চারিত্রিক দিক আমার চেয়ে বেশি কেউ জানার কথা নয়। আমার সাথে আমার শাশুড়ীও বসবাস করছেন। আমি আমার স্বামী ও শাশুড়ি একই ছাদের নিচে বসবাস করে আসছি। আমার স্বামী অত্যন্ত সৎ নিষ্টাবান ও ভালো চরিত্রের অধিকারী। বিবাহের পর থেকে এ পর্যন্ত তাহার কোন খারাপ দিক আমার চোঁখে ধরা পড়েনি।
প্রিয় ভাইয়েরা/
দু’টি সন্তান, শাশুড়ি, স্বামী ও আত্মীয় স্বজনের সেবা যত্ম আমার একার পক্ষে করা সম্ভব না হওয়ায় আমার স্বামী কাজের লোক খুজতে থাকেন। এক পর্যায়ে আমার স্বামীর ঘরে পূর্বে কাজ করেছেন মাথিউরা এলাকায় বসবাস করেন এক মহিলা কানাইঘাট এলাকা থেকে ইমাম উদ্দিন ও তার স্ত্রীকে এবং ১০ বছরের এক পুত্র সন্তানকে নিয়ে আসেন। তারা আমাদের বাড়ীতে বসবাস শুরু করেন। আমার স্বামী সরোয়ার আহমদ উক্ত ইমাম উদ্দিনকে চানাচুরে ব্যবসা ধরিয়ে দেন এবং তার স্ত্রীকে আমার ঘরের কাজের জন্য রাখেন। কয়েকদিন যেতে না যেতেই ইমাম উদ্দিন আমার স্বামীকে জানায়, তাহার আরো ১৫ বছরের একটি মেয়ে বাড়ীতে রয়েছে। তাকে এখানে এনে দিলে মেয়েটি আমাদের ঘরের কাজ করবে এবং তার স্ত্রী অন্যের বাড়ীতে কাজ করতে পারবে।
আমার স্বামী বিষয়টি আমি ও আমার শাশুড়ীকে জানালে আমরা আমাদের ঘরে এনে দেওয়ার জন্য বলি। আজ থেকে দেড় মাস পূর্বে মেয়ের বাবা কানাইনঘাট গিয়ে তাহার মেয়ে হারফানা বেগমকে নিয়ে আমাদের বাড়িতে আসেন। আমরা মেয়েটিকে কাজের জন্য আমাদের ঘরে রাখি। মেয়েটি অল্প সময়ের মধ্যে আমার সাথে মিশে যায় এবং তার জীবনে ঘটে যাওয়া অনেক ঘটনা খুলে বলে। মেয়েটি আমাকে জানায়, তাহার বড় ভাই একটি মেয়েকে ধর্ষণ করে হত্যা করে। এরপর পুলিশ তদন্তে আসলে সে সমস্ত ঘটনা পুলিশকে খুলে বলে। তার স্বীকারোক্তিতে পুলিশ তার ভাইকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। এরপর থেকে পরিবারের লোকজন মেয়েটির উপর ক্ষেপে যায়। মেয়েটি জানায়, পরিবারের সকলে অনেকবার তাকে হত্যা করার পায়তারা করে। এরই এক পর্যায়ে মেয়েটিকে তার বড় ভাইয়ের কাছে রেখে মেয়ের মা বাবাও এক ভাই মাথিউরায় চলে আসেন। মেয়েটি বাড়িতে থাকার ‘কয়েক দিন পরই চাচা সামসুদ্দিনের ছেলে জমির উদ্দিন কৌশলে একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে ডেকে নিয়ে যায়। সেখানে উপজেলার ছোটফৌজ গ্রামের মুজির উদ্দিন ও নারাইনপুর গ্রামের আজির উদ্দিনকে নিয়ে জমির তার ওপর পালাক্রমে যৌন নির্যাতন চালায়। পরে তারা আরও বেশ কয়েক দিন তার ওপর পাশবিক নির্যাতন চালায়।’
আমি মেয়েটির কথা শুনে বিস্মিত হই এবং আতংকের মধ্যে থাকি। বিষয়টি আমি আমার স্বামীর সাথে শেয়ার করি এবং মেয়েটিকে সহযোগিতা করার জন্য অনুরোধ করি। আমার স্বামী মেয়েটির বাবা-মা ও তার এলাকার একজন ইউপি সদস্য মোস্তাক আহমদকে সাথে নিয়ে তাকে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা করান এবং মামলার প্রস্তুুতি নেন। এ সময় ওই মেয়ের এলাকার একজন ইউপি সদস্য মোস্তাক আহমদ মেয়েটিকে তার কাছে রেখে দেন। মেয়েটি আমাকে জানায়, মেম্বার তার সাথে খারাপ কাজ করেছে। এ খবর মেয়েটি তার পিতাকে জানালে তার পিতাও মেয়েটিকে মারধর করেছে। মেয়েটি এও বলেছে, মেম্বার যা করেছে তা আমাদের ভালোর জন্য করেছে। তোমার ভাইকে সে বের করে দিবে। তাই তার সাথে যা করার তুমি করবে। মেয়েটি এর প্রতিবাদ করায় তাকে দা দিয়ে হত্যার প্রচেষ্টা করে পিতা। তার গলা তা দিয়ে কাটার ও চেষ্টা করে। এ সময় তার ওড়না কেটে যায়। যাহা মেয়েটি আমাকে দেখায়। আমি সবাইকে ঘটনাটি বলি। ঘটনা আমার স্বামী জানলে তিনি ফোনে এ নিয়ে কানাইঘাট এলাকার মেম্বারের সাথে দেন দরবার করেন এবং বলেন, একজন অসহায় মেয়ের সাথে এ রকম আচরণ ঠিক হয়নি। এতে কানাইঘাট এলাকার সাবেক মেম্বার আমার স্বামীর উপর ক্ষিপ্ত হয়ে দেখে নেয়ার হুমকী দেন।
এরই মধ্যে আমি, আমার শাশুড়ি ও আমার স্বামী সকলে মিলে তাদেরকে বাড়ি থেকে বিদায় করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেই এবং তাদেরকে আমাদের বাড়ি ছেড়ে দেওয়ার জন্য বলি। গত বৃহস্পতিবার আমাদের অগোচরে মেয়েটিকে আমাদের কাছে রেখে তার মা বাবা পালিয়ে যান। রাতে মাথিউরা ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য সেলিম আহমদ আমাদের ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের কাছে ফোনে বলেন, মেয়েটির মাকে নাকি আমার স্বামী মারধর করে রক্তাক্ত জখম করেছে। তাকে তার জিম্মায় রাখা হয়েছে। চেয়ারম্যান এ খবর শুনে মাথিউরা ইউনিয়নের ওই মেম্বারের বাড়িতে গিয়ে মহিলার সাথে দেখা করেন এবং এর কোন সত্যতা না পেয়ে আমাদের সাথে যোগাযোগ করেন। আমরা মেয়ের ব্যাপারে চেয়ারম্যানকে অবগত করি এবং মেয়েকে তার মায়ের কাছে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করি। চেয়ারম্যান মেয়েটিকে তার মায়ের কাছে ২১/০৫/২০১৭ইং রোববার সকালে পৌছে দেওয়ার জন্য দিন তারিখ নির্ধারণ করেন। এদিকে হুমকীর কয়েক দিনের মাথায় ওই কানাইঘাটের সাবেক ওই ইউপি সদস্য মোস্তাক আহমদ মেয়ের বাবা মা কে তার নিয়ন্ত্রনে নিয়ে যায়। তারা আমার স্বামীকে নানা ভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে।
২১/০৫/০১৭ইং রোবাবার মেয়েটিকে তার পরিবারের কাছে পৌছে দেওয়ার আগে শনিবার গভীর রাতে র‌্যাব পরিচয় দিয়ে আমাদের বাড়ীতে এসে কয়েকজন লোক ডাকাডাকি শুরু করেন। আমার স্বামী ঘুম থেকে উঠে দরজা খুলে দিলে তারা আমার স্বামীকে আটক করেন। এ সময় তারা ঘুমন্ত অবস্থায় আমার শাশুড়ির কাছ থেকে মেয়েটিকে তুলে নেন। এ সময় র‌্যাব মেয়েটিকে এবং আমাকে নানা বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। আমার স্বামী নাকি মেয়েটিকে ধর্ষণ করেছেন এ রকম তথ্য পেয়ে আমার স্বামীকে গ্রেফতার করতে তারা এসেছেন বলে জানায়। এ সময় আমার স্বামী অত্যন্ত ভালো চরিত্রের লোক বলে র‌্যাবকে জানাই। মেয়েটিও এ সময় আমার স্বামীর বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ করেনি। র‌্যাবের সাথে সিলেট থেকে যমুনা টেলিভিশনের সাংবাদিকরাও ছিলেন।
আমি ধারণা করছি, কানাইঘাট এলাকার সাবেক ইউপি সদস্য মোস্তাক আহমদ নিজের ও তার সহযোগিদের অপকর্ম ঢাকতে আমার স্বামীকে পরিকল্পিত ভাবে র‌্যাব দিয়ে গ্রেফতার করিয়েছেন। আমার স্বামী ধর্ষণের মতো কোন ঘটনার সাথে জড়িত নয়। আমি জানতে পেরেছি র‌্যাব আমার স্বামীকে ব্যাপক মারধর করে মিথ্যা তথ্য আদায়ের চেষ্টা করেছে। আমার স্বামীর শরিরে মারাত্মক আঘাতে চিহ্ন রয়েছে।
প্রিয় ভাইয়েরা,
আমার ঘরের কাজের মেয়ে আমার বাড়ীতে থাকা অবস্থায় তাহার নিজ এলাকায় ধর্ষণের স্বীকার হয়েছে বলে আমাকে পরিবারের সকলকে জানায়। যাহা ওই দিন র‌্যাবকেও জানায়। ইউপি সদস্য মোস্তাক আহমদও তার সাথে ওই কাজ করেছেন বলে জানায়। আমার স্বামীর সাথে থানা হাজতে দেখা করতে গেলে তিনি র‌্যাবের নির্যাতনের চিহ্ন দেখিয়ে বলেন, আমার কাছ থেকে স্বীকারোক্তি আদায় করতে র‌্যাব আমাকে নির্যাতন করেছে। কিছু না পেয়ে মেয়েটি ও তাকে মুখোমুখি করেছে। মেয়ে আমার স্বামীর বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ তখন করেনি। কিন্তু থানায় দেওয়া এজহারে মেয়ের নিজ এলাকা ও ইউপি সদস্য কর্তৃক ধর্ষণের ঘটনা উল্লেখ না করে আমার স্বামীকে ধর্ষণের মতো জগণ্য অপরাধে জড়িয়ে এজহার দায়ের করেছে। যাহা আমার ও আমার স্বামী ও দু’টি সন্তানের জীবন নষ্ট করে দেয়ার পায়তারা মাত্র। আপনারা নিশ্চয়ই বিভিন্ন পত্রিকায় দেখেছেন, মেয়েটি তার ধর্ষণের ঘটনা কানাইঘাট ঘটেছে বলে জবান বন্দি দিয়েছে। কিন্তুু থানায় দায়ের করা এজহারে না নেই। শুধু আমার স্বামীকে আসামী করা হয়েছে। আমার স্বামীর বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দায়েরের তীব্র নিন্দা জানিয়েছি।
আমি জানতে পেরেছি, মেয়েটিকে দিয়ে আমার স্বামীর বিরুদ্ধে আদালতেও জবানবন্দি রেকর্ডের পায়তারা চলছে। আমি প্রশাসনের প্রতি আহবান জানাবো একটি পরিবারকে ফাঁসানোর পায়তারা থেকে আমাদেরকে বাাঁচান এবং প্রকৃত দোষিদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসুন। আমি আপনাদের মাধ্যমে বিষয়টির সুষ্ট তদন্ত করার জন্য প্রশাসনের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছি এবং আমার স্বামীর মুক্তি দাবী করছি। পাশাপাশি আমার স্বামীকে ফাঁসাতে যারা নেপথ্যে কাজ করেছেন তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য আপনাদের মাধ্যমে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার প্রতি অনুরোধ করছি।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn