বিয়ে ২৯ জুলাই, ফিরবেন কি তানিমা?
পুরো নাম হাসনা বেগম, ডাকনাম তানিমা। মায়াভরা হাসিমুখ। বয়স মাত্র ২২। পরিবারের সবার ছোট। আগামী ২৯ জুলাই তানিমার বিয়ে, বর ব্রিটিশ যুবক লেস্টার। মা-বাবার পছন্দেই হচ্ছিল এই বিয়ে। এরই মধ্যে তানিমার শাড়িসহ বিয়ের সব কেনাকাটাও শেষ হয়েছে। বিয়ে অনুষ্ঠানের হল বুকিংসহ সব কিছু রোজার আগেই শেষ। কিন্তু শাড়ি পরে বিয়ের পিঁড়িতে কী বসতে পারবেন তানিমা? লন্ডনের স্থানীয় সাংবাদিক মুনজের আহমেদ চৌধুরী তার ফেসবুকে এসব তথ্য জানান। প্রশ্নটা এজন্যই যে, মঙ্গলবার রাতে লন্ডনের যে গ্রেনফেল টাওয়ারে আগুন লাগে, সেখানে ১৭ তলার ১৪৪ নম্বর ফ্ল্যাটে বাবা কমরু মিয়া (৯০), দুই ভাই ও মায়ের সঙ্গে থাকতেন তানিমা।
অগ্নিকাণ্ডের ২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও এই পরিবারটির কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। কমরু মিয়ারদের বাড়ি মৌলভীবাজারের একাটুনা ইউনিয়নের বিরইনবাদ গ্রামে। আগুনে এখন পর্যন্ত ভবনের ১২ জন নিহত হয়েছেন। এ সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। আহত শতাধিক ব্যক্তিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। ভবনে আটকে পড়া কমরু মিয়ার মেয়ে হাসনা বেগম তানিমা চেলসিতে তাদের আত্মীয় আব্দুর রহিমকে রাত আড়াইটার দিকে ফোন করে বাঁচানোর আকুতি জানান। তিনি জানান, আগুন লাগার পর রাতে তার চাচাতো বোনের সঙ্গে তার টেলিফোনে কথা হয়েছিল। তখন সে বাঁচার আকুতি জানাচ্ছিলেন।তিনি বলেন, ‘রাত আড়াইটার দিকে তানিমার সঙ্গে শেষ কথা হয়। তার আকুতি এখনো আমার কানে ভাসছে। সে বলছিল- আমরা সবাই এখন বাথরুমে, আমাদের বের হওয়ার কোনো উপায় নেই, দোয়া করেন আমাদের যেন কষ্টে মৃত্যু না হয়।’
আব্দুর রহিম বলেন, ‘আগামী ২৯ জুলাই তানিমার বিয়ের দিন ঠিক ছিল। এ নিয়ে ব্যাপক প্রস্তুতি ছিল আমাদের। বিয়ের পর বাংলাদেশেও তাদের যাওয়ার কথা ছিল।’ কমরু মিয়ার বড় ছেলে আব্দুল হাকিম তার স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে এনফিল্ডে আলাদা বাসায় থাকেন। অন্য দুই ছেলে আব্দুল হামিদ, আব্দুল হানিফ ও মেয়ে তানিমা বাবা-মার সঙ্গে থাকেন। তাদের কারো মোবাইল ফোনেই রাত আড়াইটার পর থেকে আর যোগাযোগ করা যাচ্ছে না বলে জানান আব্দুর রহিম। তিনি আরো বলেন, ‘রাত সোয়া ১টার দিকে তানিমার ফোনে আগুন লাগার খবর পাই। গাড়ি নিয়ে ২০ মিনিটের মধ্যে যাই গ্রেনফেল টাওয়ারের সামনে, তখন সেখানে আগুন জ্বলছিল। হাকিমও ততক্ষণে চলে আসে। হবুবর লেস্টারও আসে। এরপর রাত আড়াইটা পর্যন্ত তানিমার সঙ্গে কথা হয়। এরপর থেকে তারসহ অন্যদের ফোন বন্ধ পাচ্ছি।’