সরকারী শিশু পরিবার থেকে লাল বেনারসী পরে স্বামীর ঘরে গেলো বিপাশা আক্তার মুন্নি। জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের আয়োজনে শুক্রবার নগরীর রায়নগরস্থ সরকারী শিশু পরিবারে (বালিকা) বিপাশার বিয়ের অনুষ্টান সম্পন্ন হয়। অনুষ্ঠানে সিলেটের জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, রাজনীতিবীদ, ব্যবসায়ী, সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ সহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন। জানা যায়, বিপাশা আক্তার মুন্নি ১০ বছর বয়সে পুলিশ উদ্ধার করে এই শিশু পরিবারে নিয়ে এসেছিলো মুন্নিকে। বাবার নাম জামাল, এই তথ্য ছাড়া আর কিছুই জানতেন না মুন্নি। সিলেট সমাজসেবা অধিদপ্তর পরিচালিত শিশু সদনে (সেফ হোম) আরও প্রায় ১০ বছর কেটেছে মুন্নির। শৈশব-কৈশোর পেরিয়ে তরুণী হয়ে ওঠা মুন্নির বিয়ের আয়োজন করে শিশু পরিবার কর্তৃপক্ষ। বিয়ে উপলক্ষে রায়নগর শিশু পরিবারে ছিলো উৎসবের আমেজ। পুরো শিশু সদনকে সাজানো হয়েছিল বিয়ের সাজে। প্রবেশদ্বারে সজ্জিত বিয়ের গেইট, ভবনজুড়ে আলোকসজ্জা- কিছুরই কমতি ছিলোনা। গত এক সপ্তাহ ধরেই চলছিলো বিয়ের আমন্ত্রণপত্র বিলি। বিপাশার বর সুনামগঞ্জের দিরাইয়ের রাজনগরের আব্দুল লতিফ (২৭)। পেশায় তিনি একজন রংমিস্ত্রি।

বৃহস্পতিবার রাতে ছিলো মুন্নির গায়ে হলুদ। এতে শিশু সদনের ভেতরেই নির্মিত হয়েছে গায়ে হলুদের বর্ণিল মঞ্চ মঞ্চ, স্পিকারে বাজছে গান। বোনের বিয়ের আনন্দে মাতোয়ারা শিশু পরিবারের প্রতিটি সদস্য। শাড়ি পড়ে ফুলের মালা গলায় দিয়ে উৎসবে মেতেছে শিশুরা আর কিশোরীরা ব্যস্ত কনের গায়ে হলুদ মাখাতে। উচ্ছ্বসিত কনে বিপাশা আক্তার মুন্নি বলেন, এত আয়োজন করে আমার বিয়ে হবে তা কখনো ভাবিনি। নতুন পরিবারে গেলেও সবচেয়ে বেশি মনে পড়বে এই শিশুপরিবারের প্রতিটি মেয়ে আর শিক্ষিকাদের। শিশুপরিবারের সহকারী শিক্ষিকা মিনার বেগম বলেন, মুন্নি যখন এখানে আসে তখন সে বালিকা। সব সময়ই খুব শান্ত মেজাজের সে। তাকে প্রাতিষ্ঠানিক কোন শিক্ষা দিতে না পাড়লেও অকে আমরা প্রাথমিক শিক্ষা দিয়েছি। ধর্মীয় শিক্ষা, সামাজিকতা এমনকি সেলাই কাজও শিখানো হয়েছে তাকে। বিয়ের মাধ্যমে মুন্নিকে একটি স্থায়ী ঠিকানা দিতে পেরেছি। এটাই আমাদের সবচেয়ে বড় পাওয়া। নতুন জীবনে সে সুখে থাকবে এই দোয়া করি।

জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক নিবাশ রঞ্জন দাশ বলেন, শিশু পরিবারের নিয়ম অনুযায়ী প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় পর বিয়ে দেওয়া হয়। আমরা কোন কমতি রাখিনি মুন্নির বিয়ের আয়োজনে। বিয়েতে অতিথি থাকবেন সিলেট মহানগর পুলিশ কমিশনার, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ সরকারি ও বেসরকারি কর্মকর্তারা। সকলের সহযোগিতায় আমরা এ আয়োজন করতে পেরেছি। সবার আর্শিবাদে আশা করি মুন্নি তার নতুন জীবনে ভাল থাকবে।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn