বার্তা ডেস্ক  : বড় ধরনের দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের প্রথম ড্রিমলাইনার আকাশবীণা। মঙ্গলবার দোহা থেকে সিলেট হয়ে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের সময় এ অবস্থার মুখে পড়ে উড়োজাহাজটি। পাইলটদের লগবই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। লগবই-এ (পাতা-এম ২২১৬৮৩) উল্লেখ করা হয়েছে, বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজটি (বিজি-২২৬) শাহজালালে অবতরণের সময় পাইলট অস্বাভাবিক (অ্যাভনরমাল ল্যান্ডিং) অবতরণ করেছেন। যার মাত্রা (সেন্ট্রাল অব গ্রেভেটি) ছিল সিজি +২.২। বিমানটি প্রস্তুতকারী কোম্পানি যুক্তরাষ্ট্রের বোয়িংয়ের হিসাব অনুযায়ী এই ক্ষেত্রে স্বাভাবিক মাত্রা সিজি +১.২। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এ ধরনের অ্যাবনরমাল ল্যান্ডিংয়ের কারণে যে কোনো উড়োজাহাজের ল্যান্ডিং গিয়ার ভেঙে যেতে পারে। বিমানটি রানওয়ে থেকে ছিটকে বাইরে আছড়ে পড়তে পারে। এমনকি উড়োজাহাজটি ক্র্যাশও করতে পারে। লগবই সূত্রে আরও জানা গেছে, এত বড় ঘটনার পরও পাইলট পুরো বিষয়টি নিয়ে ঠাণ্ডা মাথায় এগিয়ে গেছেন। নিয়ম অনুযায়ী এ ধরনের ঘটনায় পাইলটকে ককপিট থেকে নামার আগে পুরো ঘটনাটি লগবইয়ে এন্ট্রি করতে হবে। বিমানের প্রকৌশল শাখার সংশ্লিষ্ট ইঞ্জিনিয়ারকে জানাতে হবে। একই সঙ্গে সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের এফওআই (ফ্লাইট অপারেশন ইন্সপেক্টর) শাখাকে অবহিত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে উড়োজাহাজটি পরবর্তী ফ্লাইটের আগের ল্যান্ডিং গিয়ারসহ এ সংক্রান্ত সব ধরনের পার্টস ঠিক আছে কি না, তা তদন্ত করে দেখার পরই শুধু পরবর্তী ফ্লাইট অপারেশনের অনুমতি দেয়া হয়।

কিন্তু রহস্যজনক তথ্য হচ্ছে- এত বড় ঘটনার পরও ওই ফ্লাইটের পাইলটরা পুরো বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন। লগবইয়েও তারা এটি এন্ট্রি করেননি। জানা গেছে, পরবর্তী ফ্লাইটের পাইলট ও অপারেশন ক্রুরা ককপিটে উঠেই জানতে পারেন উড়োজাহাজটির অ্যাবনরমাল ল্যান্ডিং হয়েছে। এরপর তারা মনিটর তল্লাশি করে পুরো ঘটনার সত্যতা পান। এরপরই তারা বিষয়টি লগবইয়ে এন্ট্রি করেন। বিমানের পরিচালক (প্রকৌশল অ্যান্ড ম্যাটেরিয়াল মেনেজমেন্ট) গ্রুপ ক্যাপ্টেন (অব.) সাজ্জাদুর রহিম অস্বাভাবিক ল্যান্ডিংয়ের সত্যতা স্বীকার করে যুগান্তরকে বলেন, ভাগ্য ভালো বিমানটির কোনো ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। তিনি বলেন, এ ঘটনা জানার পর প্রকৌশল বিভাগ থেকে উড়োজাহাজটির ল্যান্ডিং গিয়ারসহ সব ধরনের স্পেয়ার পার্টস পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হয়েছে। নিরীক্ষায় সবকিছু ঠিক আছে বলে তিনি জেনেছেন। তিনি বলেন, কেন এবং কী পরিস্থিতিতে পাইলট এই অস্বাভাবিক অবতরণ করেছেন সেটা তদন্ত করে দেখা হবে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিভিল এভিয়েশনের একজন ফ্লাইট অপারেশন ইঞ্জিনিয়ার যুগান্তরকে বলেন, একটি ফ্লাইটে অস্বাভাবিক ল্যান্ডিং হতেই পারে। এ জন্য পরিবেশ পরিস্থিতি বিবেচনা করে দেখা হবে। তারা এফডিএম (ফ্লাইট ডাটা মনিটর) থেকে ৫ হাজার ফুট উচ্চতার পর কীভাবে উড়োজাহাজটি অবতরণ করেছে তার তথ্য বের করে দেখবেন। এ ছাড়া ওই সময়ের আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ করা হবে। যদি তদন্তে পাইলটের গাফিলতি পাওয়া যায় তাহলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বিমানকে চিঠি দেবেন বলেও জানান।

বিমানবহরে যুক্ত হচ্ছে তৃতীয় ড্রিমলাইনার ‘গাঙচিল’ : এদিকে আজ বিমানবহরে যুক্ত হওয়া বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তির ৩য় বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার ‘গাঙচিল’-এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিকাল সাড়ে ৫টায় বিজি-০২৭ ফ্লাইটে আবুধাবি যাওয়ার মধ্য দিয়ে ড্রিমলাইনার ‘গাঙচিল’ বাণিজ্যিক যাত্রা শুরু করবে। বিমানের জনসংযোগ শাখা সূত্রে জানা গেছে, গত ২৫ জুলাই দেশে আসে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ৩য় বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার ‘গাঙচিল’। কোনো রকম যাত্রাবিরতি ছাড়াই সিয়াটল থেকে সরাসরি ঢাকায় এসে অবতরণ করে গাঙচিল। এর মধ্য দিয়ে বিমানবহরে উড়োজাহাজের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫টি। টানা ১৬ ঘণ্টা উড়তে সক্ষম এই ড্রিমলাইনার চালাতে অন্যান্য বিমানের তুলনায় ২০ শতাংশ কম জ্বালানি লাগবে। গাঙচিলের আসন সংখ্যা ২৭১টি, এর মধ্যে বিজনেস ক্লাস ২৪টি এবং ২৪৭টি ইকোনমি ক্লাস। বিজনেস ক্লাসের ২৪টি আসন ১৮০ ডিগ্রি পর্যন্ত রিক্লাইন্ড সুবিধা এবং সম্পূর্ণ ফ্ল্যাটবেড হওয়ায় যাত্রীরা আরামদায়ক ও স্বাচ্ছন্দ্যের সঙ্গে ভ্রমণ করতে পারবেন। জনসংযোগ শাখার ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার তাহেরা খন্দকার স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে এই উড়োজাহাজের প্রতিটি আসনের সামনে প্যানাসনিক এলইডি এস-মনিটর রয়েছে। একই সঙ্গে ড্রিমলাইনারের ইন-ফ্লাইট এন্টারটেইনমেন্ট সিস্টেমে (আইএফই) থাকবে ১০০টির বেশি ক্লাসিক থেকে ব্লকবাস্টার চলচ্চিত্র। অত্যাধুনিক বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৪৩ হাজার ফুট ওপর দিয়ে উড়ে যাওয়ার সময়ও ওয়াই-ফাই সুবিধা পাবেন যাত্রীরা। বিমানে ওয়াই-ফাইয়ের মাধ্যমে প্রত্যেক যাত্রী ১৫ মিনিটের জন্য বিনা মূল্যে ১০ মেগাবাইট ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারবেন।

উল্লেখ্য, বিমানবহরে যুক্ত হওয়া ১০টি বোয়িং উড়োজাহাজের সবকটির নাম বাছাই করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এগুলো হল : পালকি, অরুণ আলো, আকাশ প্রদীপ, রাঙা প্রভাত, মেঘদূত, ময়ূরপঙ্খি, আকাশবীণা, হংসবলাকা, গাঙচিল ও রাজহংস।

 

 

 

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn