বার্তা ডেস্ক:: শুষ্ক মৌসুমে একফসলী বোরো ধান চাষাবাদে মহাব্যস্থ সময় পাড় করলেও বর্ষায় কিং কর্তব্য বিমুখ হয়ে অর্ধহারে,অনাহারে,অভাব-অনটনকে সঙ্গী করে কষ্টের জীবন পার করছে হাওর পাড়ের দরিদ্র পরিবার গুলো। বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা না থাকায় জন্যে এই অনুন্নত অবহেলিত হাওরবাসীর কণ্ঠে কেবলেই শুধু বাচাঁর আকুতি। হাওর বেষ্টিত সুনামগঞ্জের ১১টি উপজেলার প্রত্যান্ত এলাকার দীপ সাদৃশ্য গ্রামের জনসাধরণ বর্ষায় ৬মাস বেকার থাকে। যে দিকে চোখ যায় সে দিকেই পানি থৈ থৈ করছে। ফলে কোন কাজের ব্যবস্থা নেই। সরকারের সু-নজর না থাকায় এই মানব সম্পদ এখন সমাজের ভোজা হচ্ছে দিন দিন। বর্ষায় জেলার

তাহিরপুর,জামালগঞ্জ,ধর্মপাশা,মধ্যনগর,দিরাই,শাল্লা,বিশ্বাম্ভরপুরসহ হাওর পাড়ের ৮০ভাগেই মানুষেই পানি বন্ধী। এসময়ে কোন কাজ না থাকায় বেকার থাকে হাজার হাজার মানুষ। আর গ্রাম গুলোর সাথে সড়ক পথের যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় স্কুল,কলেজ ও সরকারী অফিস আদালতে যেতে হাওরবাসীকে পড়তে হয় নানান বিড়াম্বনায়। শুষ্ক মৌসুমে চাষাবাদে মহাব্যস্থ সময় পাড় করে আর ভরা বর্ষার সময় কাজের ব্যবস্থা না থাকায় ঘরে বসেই সময় পাড় করতে হয়। এসময় তারা কেরাম,ঘাফলাসহ বিভিন্ন খেলা,দোকানে বসে চা খেয়ে ও সিডিতে ছবি দেখে,তাস খেলা,গল্প করে সময় পার করে দেয়। বিকালের পর থেকেই ভাসমান দীপ সাদৃশ্য গ্রাম গুলোর ছোট ছোট বাজারে ও আশে পাশে খোলা জায়গায় বসে জমজমাট আড্ডা বসিয়ে থাকে। গভীর রাত পর্যন্ত চায়ের দোকানে বাংলা সিনেমা,ভারতীয় সিনেমা দেখার হিরিক পড়ে যায়।

হাওর পাড়ের বাসীন্দা শফিকুল ইসলামসহ অনেকেই বলেন,যোগাযোগ ব্যবস্থার উপর নির্ভর করে হাওর পাড়ের মানুষ মানব সম্পদে পরিণত হতে পারত। কিন্তু সরকারের সু-নজর না থাকায় এই মানব সম্পদ এখন সমাজের ভোজা হচ্ছে দিন দিন। হাওর পাড়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা,মিল-কলখারকানা থাকলে হাজার হাজার মানুষ বেকার থাকত না। বর্ষায় কিছু লোকজন আছে তারা ডিঙ্গি নৌকা,বড় ইঞ্জিন চালিত নৌকা তৈরি করে দূর-দূরান্ত যাত্রী পরিবহন। কেউ কেউ এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে যাওয়ার জন্য ডিঙ্গি নৌকা দিয়ে ফেরি পারাপার করে জীবিকা নির্বাহ করে কোন রকমভাবে। হাওর পাড়েরর কৃষক সাদ্দাম হোসেন,সাদেক,মিজানসহ অনেকেই জানান-কৃষি কাজ করে এখন আমরা ক্ষতিগ্রস্থ কারণ ধানের সঠিক মূল্য আমরা পাই না। আর বর্ষায় অনেকেই কারেন্ট জাল,কোনা জাল,বেড়জাল নিয়ে হাওরে নেমে পড়ে মাছ ধরতে। কিন্তু এখন মাছ নেই তাই বেকার থাকতে হয়। আর প্রভাবশালী ইজারাদাররা জলমহল নিয়ে নিজেদের রাম রাজত্ব কায়েম করেছে।

ফলে বিশাল হাওর পাড়ের খেটে খাওয়া মানুষ গুলো নিরাপত্তাহীনতা,ক্ষুদা,দারিদ্রতা,রোগ শোক, যোগাযোগ, অশিক্ষা, গোড়ামী আর অবহেলায় এ ভাবেই যুগ যুগ ধরে মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। এসব পরিস্থিতির শিকার হয়ে অনেকেই এলাকা ছেড়ে চলে গেছে অন্যত্র। আর এভাবেই চলছে সুনামগঞ্জ জেলার হাওরাঞ্চলবাসীর জীবন যুদ্ধ। তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান করুনা সিন্দু চৌধুরী বাবুল বলেন, হাওর উন্নয়নে সরকার হাওরবাসীর যোগাযোগ ব্যবস্থা,মিল-কলখারকানা,বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজসহ আর্থসামাজিক উন্নয়নে কাজ করছে। আমার উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে হাওরবাসীর জন্য যা করার যায় তাই করব। আর হাওরাঞ্চলের বিশাল নারী গোষ্টীকে হস্ত শিল্পে পারদর্শী,আধুনিক ও উন্নত প্রশিক্ষনের মাধ্যমে হাঁস ও মরগি লালন-পালনের সঙ্গে যুক্ত করা হয়ে বেকার নারী সমাজ স্বাবলম্বী হওয়ার পাশা পাশি দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারত। তাই বর্তমান সরকার হাওরবাসীর দিকে সু-দৃষ্টি দেবার দাবী জানান।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn