ঢাকাসহ ১১টি মহানগরের কমিটি ভেঙে দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। প্রায় সব মহানগর কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ। এরই মধ্যে কয়েকটি মহানগরের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে কথাও বলেছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। শিগগিরই ঢাকার দুই শাখার নেতাদের সঙ্গেও কথা বলবেন তিনি। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, ঢাকার দুই শাখায় এবার অপেক্ষাকৃত তরুণ নেতাদের দিয়ে কমিটি গঠন করা হবে। এ ছাড়া ঢাকায় তৃণমূল পর্যায়ে কেন্দ্র ও মহল্লাভিত্তিক কমিটি করার চিন্তাভাবনাও রয়েছে। বিগত দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কেন্দ্র ভিত্তিক একটি তালিকা প্রণয়ন করা হয়। ওই তালিকা ধরেই ঢাকা মহানগরের দুই শাখার ওয়ার্ড ও থানা পর্যায়ের কমিটি করার আভাস দিয়েছেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, ঢাকা মহানগর উত্তর শাখায় যুবদলের বর্তমান সভাপতি সাইফুল আলম নীরব ও সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর নেতৃত্বে নতুন কমিটি হতে পারে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের গত নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়ালও গুরুত্বপূর্ণ পদ পেতে পারেন। তিনি বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টুর ছেলে। আবার দক্ষিণ শাখায় সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন। তিনি সর্বশেষ দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী ছিলেন। তার বাবা মরহুম সাদেক হোসেন খোকা বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের মেয়র ছিলেন। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখার সহসভাপতি নবীউল্লাহ নবীও গুরুত্বপূর্ণ পদে আসতে পারেন। দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক তানভীর আহমেদ রবীণও শীর্ষ নেতৃত্বে আসার আলোচনায় রয়েছেন। এ ছাড়া মহানগর বিএনপির দুই শাখায় স্বেচ্ছাসেবক দল ও যুবদলের আরও কয়েকজন তরুণ নেতাকে গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়ে আসা হতে পারে বলে জানা গেছে।

এ ব্যাপারে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সাংগঠনিক পুনর্গঠন একটি চলমান প্রক্রিয়া। যখন যেখানে প্রয়োজন সেখানেই পুনর্গঠন করা হচ্ছে। চলমান করোনাভাইরাসের কারণে আমাদের সাংগঠনিক পুনর্গঠন প্রক্রিয়া বেশ কিছুদিন স্থগিত ছিল। এখন আবার শুরু হয়েছে। ঢাকা মহানগরসহ সারা দেশে বিএনপির সাংগঠনিক জেলাগুলো পর্যায়ক্রমে পুনর্গঠন করা হবে। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, বিগত সিটি করপোরেশন নির্বাচন করতে গিয়ে আমাদের কিছু অভিজ্ঞতা হয়েছে। ভোট কেন্দ্রভিত্তিক কমিটি করতে গিয়ে আমরা অনেক কিছুই শিখেছি। ঢাকা মহানগর কমিটি করতে গেলে ওই অভিজ্ঞতাকেও কাজে লাগানো যেতে পারে। এ নিয়ে আমরা একটি প্রতিবেদনও তৈরি করেছি। তা আমাদের হাইকমান্ডের কাছেও আছে। ঢাকা মহানগর বিএনপি পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে ওই প্রতিবেদন কাজে লাগবে।

বিএনপির নীতিনির্ধারকরা বলছেন, বিগত দেড় দশক থেকে ঢাকা মহানগর কমিটির নেতৃত্বে যারা এসেছেন, তারা প্রত্যেকে নিজের অনুসারী সৃষ্টি করেছেন। ‘মাই ম্যান’ ও ‘ভাইপন্থি’ রাজনীতি এখনো বহাল রয়েছে। ব্যক্তিকেন্দ্রিক বা বলয়ের রাজনীতি ভাঙতে চাচ্ছে বিএনপি। দলটি চাচ্ছে, ‘নো মাই ম্যান’। সবাইকে বিএনপিপন্থি হতে হবে। মহল্লা, ওয়ার্ড ও থানা পর্যায়ে বিগত সময়ে আন্দোলন কর্মসূচিতে মাঠে থাকা নেতা-কর্মীদের নেতৃত্বে নিয়ে আসতে হবে। সন্ত্রাস, মাদক বা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের কাউকেই দলে ঠাঁই দেওয়া হবে না। মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের চাপ রয়েছে, তৃণমূলের প্রতিটি কমিটি যেন কাউন্সিল বা নির্বাচিত হয়, কোনো ‘পকেট কমিটি’ যেন না হয়। ঢাকা মহানগরের মাঠ পর্যায়ের নেতারা বলেন, উড়ে এসে জুড়ে বসা, আর্থিক অবস্থান বিবেচনা, কারও সঙ্গে সুসম্পর্ক, সাময়িক রাজনৈতিক কর্মকান্ড নেতৃত্ব নির্বাচনের ক্ষেত্রে বিবেচনায় আসলে দল ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তৃণমূল থেকে যাকে নেতা নির্বাচন করা হবে দলের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে তাকেই যেন নেতা মনোনীত করা হয়। এতে দল শক্তিশালী হবে।-পূর্বপশ্চিমবিডি

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn