বার্তা ডেক্সঃঃ জনপ্রিয় লেখক হুমায়ূন আহমেদের ঘনিষ্ঠ সহচর ছিলেন প্রকাশনা সংস্থা অন্যপ্রকাশের প্রধান নির্বাহী মাজহারুল ইসলাম। হুমায়ূন আহমেদের জীবনের শেষদিন পর্যন্ত হাসপাতালে পাশে ছিলেন তিনি। মাজহারুল ইসলামের সাথে ব্যক্তিগত জীবনের-পাঠকদের জন্য স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো—
“এই মানুষটার সাথে আমাকে নিয়ে একটা কথা টুকটাক শোনা যায়। কথাটা বেশ অস্বস্তিকর। তার স্ত্রী আর আমি বিষয়টা নিয়ে চরম খুনসুটি আর হাসাহাসি করলেও আমাদের সাথে নতুন বন্ধুত্ব হওয়া কেউ কেউ একটু ইতং বিতং করে প্রসঙ্গটা তোলেন আর অপ্রস্তুত হয়ে বলেন ‘আহা! বাইরে থেকে কি ভুল ধারণা নিয়েই না ছিলাম!’ বলছিলাম আমার সবচাইতে কাছের প্রতিবেশী, হুমায়ূন আহমেদের পুত্রসম বন্ধু প্রকাশক মাজহারুল ইসলাম ভাইয়ের কথা। মাজহার ভাইয়ের স্ত্রী তানজিনা রহমান স্বর্না ভাবী আমার সবচেয়ে কাছের সহচর। দিনের মধ্যে ৩/৪ বার দেখা করে সারাদিনের প্যাঁচাল নিয়ে বকরবকর না করলে আমাদের পেটের ভাত হজম হয়না।

‘ছুটা বুয়াটা ইদানিং খুব ফাঁকিবাজি করছে’

‘ছাদের গাছ থেকে টমেটোগুলো কে চুরি করে নিলো!’

‘বাচ্চাগুলো জ্বালিয়ে মারছে’

‘ইশশশ কতদিন বেড়াতে যাইনা!’

এসব আলাপ আমাদের রোজকার ডালভাত।

এই করোনাবন্দী সময়ে আমাদের আরেকটি অভ্যাস হলো ছাদে একসাথে কিছুক্ষণ হাটাহাটি করা তারপর বিছানায় আধশোয়া হয়ে অনেকক্ষণ চুপ করে থেকে দীর্ঘশ্বাস ছাড়তে ছাড়তে বলা-

“ভাল্লাগে না…”

এই অসাধারণ মানুষটির স্বামীর সাথে নাকি আমার প্রেম!!

হ্যাঁ… তার সাথে আমার প্রেম।

আমার কিশোরীবেলায় প্রণয়ের সময় আমি যখন হুমায়ূন আহমেদএর সাথে ছেলেমানুষী রাগ করতাম তখন তিনি বড়ভাইয়ের মতো আমার ভুল ভাবনাগুলো ধরিয়ে দিয়ে আমাকে শান্ত করতেন। উনি আমার আরেক মায়ের গর্ভে জন্ম নেওয়া বড়ভাই- তার সাথে আমার ভাইয়ের মতো প্রেম।

হুমায়ূন আহমেদের প্রথম কেমোথেরাপি দেবার সময় নিউইয়র্কের মেমোরিয়াল স্লোন কেটারিং হাসপাতালে তোলা ছবি।

হুমায়ূন আহমেদের প্রথম কেমোথেরাপি দেবার সময় নিউইয়র্কের মেমোরিয়াল স্লোন কেটারিং হাসপাতালে তোলা ছবি।
কর্কট রোগের চিকিৎসা চলাকালীন সময় হুমায়ূন আহমেদএর আপন ভাইদের যে দায়িত্ব ছিল সেই দায়িত্ব তিনিই পালন করেছেন। কখনও বাজার করে আনা তো কখনও তার হুমায়ূন ভাইয়ের পছন্দের খাবারটা রান্না করে ফেলা যেন কেমোথেরাপির পর তিনি একটু খেতে পারেন। প্রায়ই রাতের বেলা একবছরের নিনিতকে কোলে নিয়ে হেটে ঘুম পাড়াতেন যাতে করে আমি একটু বিশ্রাম পাই। হাসপাতালে হুমায়ূনের বিছানার পাশে একরাত আমি জাগি তো আরেক রাত তিনি জাগেন, আমার মতো করেই হুমায়ূন আহমেদএর পা টিপে তাকে ঘুম পাড়িয়ে দেন। রক্তের সম্পর্ক না থেকেও তিনি হুমায়ূন আহমেদএর ছোটভাই। আমি ওনাকে দেবরের মতো ভালোবাসি। নিনিত, নিষাদ আর আমার ছোট্ট পরিবারটি ছাড়া তাদের পরিবারের কোনো উৎসবই পূর্ণ হয়না! তাদের সব আনন্দের ভাগ যেন আমাদের না দিলেই নয়! তাদের ছেলেদু’টিও বড়ভাইয়ের মতই আগলে রেখেছে আমার নিনিত-নিষাদকে। নিনিত, নিষাদ আর আমি- আমরা ৩ জনই তাদের পরিবারের সব্বাইকে অনেক অনেক ভালোবাসি… প্রিয় মাজহার ভাই আপনার জন্মদিনে অনেক শুভকামনা। যে স্নেহ আর সম্মানে আপনি আমাদের জড়িয়ে রেখেছেন তা শতগুণ হয়ে আপনার পরিবারের ঘিরে রাখুক…”পূর্বপশ্চিমবিডি
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn