১৩ শিক্ষকের মধ্যে সুুপার সহ একই দিনে ৬ শিক্ষক অনুপস্থিত থাকায় সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের বাদাঘাট রহমানিয়া আওয়ামী দাখিল মাদ্রাসার কয়েক শতাধিক বিক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থী শনিবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে সকল শ্রেণী কক্ষ অফিস কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দিলেন।’ একই সাথে দুর্নীতিবাজ সুপার ও অনপুস্থিত অন্যান্য শিক্ষকদের অপসারণ ও শাস্তির দাবি নিশ্চিত না হওয়া পর্য্যন্ত শ্রেণী কক্ষে অনিদ্রিষ্টকালের জন্য না ফেরার ঘোষণা দিয়ে মাদ্রাসা চত্বরেই বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছেন পাঠদান থেকে বঞ্চিত শিক্ষার্থীরা। ’
মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের সুত্রে জানা যায়, তাহিরপুরে ১৯৭৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় বাদাঘাট রহমানিয়া আওয়ামী দাখিল মাদরাসাটি। বর্তমানে মাদ্রাসায় প্রায় ৭ শতাধিক শিক্ষার্থী প্রথম থেকে দশম শ্রেণী পর্য্যন্ত লেখাপড়া করে আসছেন।  মাদরাসায় ১৩ শিক্ষকের মধ্যে  সুপার মো. মহিউদ্দিন, সহকারি সুপার মো.তাজুল ইসলাম, সহকারি শিক্ষক আবদুল লতিফ, আবদুল কাদির, মো. আবদুল্লাহ্ ও আশেক মোস্তফা গত কয়েকদিন ধরেই মাদ্রাসায় অনুপস্থিত রয়েছেন। এদিকে শনিবার সকালে শিক্ষার্থীরা মাদ্রাসায় আসলে বেলা সাড়ে ১২ পর্য্যন্ত সুপার সহ ওই ৬ শিক্ষক অনুপস্থিত থাকায় প্রথম থেকে দশম শ্রেণীতে পড়–য়া কয়েক শতাধিক শিক্ষার্থীরা টানা কয়েকদিনের পাঠ গ্রহন করা থেকে বঞ্চিত হয়ে বিক্ষুদ্ধ হয়ে উঠেন । এক পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা একজোঠ হয়ে সকল শ্রেণী কক্ষ ও অফিস কক্ষে তালা ঝুঁলিয়ে দিয়ে মাদ্রাসা চত্বরেই অভিযুক্ত সুপার সহ অনুপস্থিত সকল শিক্ষকদের শাস্তি ও অপসারণের দাবিতে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন।’
মাদ্রাসার সপ্তম শ্রেণীর শিক্ষার্থী লিপা আক্তার জানান, প্রায় ৫ থেকে ৬ কিলোমিটার পায়ে হেঁেটে গুটিলা গ্রাম থেকে মাদ্রাসায় পাঠ গ্রহন করতে আসি কিন্তু প্রতিদিন ১থেকে২টা বিষয়ে পাঠদান করান শিক্ষকরা, এরপর বাকী সময় অহেতুক বসে বসে বিরক্তবোধ করছি আমরা সকল শিক্ষার্থীগণ।’
অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থী জাহাঙ্গীর আলম জানান, পরিচালানা কমিটির সভাপতির নিকট থেকে সুপার আগাম বিদ্যুৎ বিলের ১০ হাজার টাকা আনার পরও বকেয়া বিল পরিশোধ না করে নিজের পারিবারীক কাজে ওই অর্থ ব্যয় করে ফেলায় গত ১৫ পুর্বে পল্লী বিদ্যুৎ কতৃপক্ষ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়ায় প্রতিটি শ্রেণী কক্ষের শিক্ষার্থীরা প্রচন্ড গরমে কষ্ট করছেন । অন্যান্য শিক্ষার্থীরা জানান, গত দেড় বছর ধরে সুপারের অনিয়ম দুর্নীতির কারনে ৩০ মেধাবী শিক্ষার্থী বৃওির টাকা থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছেন পাশাপাশী চলতি বছর এখনো পর্য্যন্ত ৪৯ জন শিক্ষার্থী উপবৃক্তির সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। ’
নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী মো. জয়নাল আবেদীন বলেন, বছরের প্রায় সাত মাস পেরিয়ে যাচ্ছে অতচ মাদ্রাসায় কোন দিন ১থেকে ২টা বিষয়ের অধিক বিষয়ে পাঠদান করান না শিক্ষকরা , যদি শিক্ষকগণ মাদ্রাসায় আসেনও তাহলে হয় অফিস কক্ষে বসে গল্প গুজব করেন না বাজারে চলে যান চা পান করতে আর দোকানে দোকানে বসে আড্ডা দিতে অতচ প্রতিদিন ৮টি বিষয়ে পাঠদানের কথা রয়েছে সকল শ্রেণীতে। ’
মাদ্রাসার দশম শ্রেণীর আরেক শিক্ষার্থী নাঈম আহমেদ অভিযোগ করে বললেন, গত দেড় বছর ধরে মাদ্রাসায় শিক্ষকেরা তথ্য প্রযুক্তি, ইসলামের ইতিহাস, আকাঈদ, বাংলাদেশ বিশ^ পরিচয় ও ক্যারিয়ার শিক্ষা বিষয়ে কোন রকম কোন শ্রেণীতেই পাঠদান করাননি,এছাড়াও বিনাকারনে মাদ্রাসায় অনুপস্থিত থেকে পারিবারীক ও ব্যাক্তিগত কাজে অধিকাংশ শিক্ষকগণ ব্যস্ত থাকছেন দিনের পর দিন, মাসের পর মাস  ধর্ ে। একারনে আমরা এ মাদ্রাসায় পড়–য়া প্রায় ৭ শতাধিক শিক্ষার্থী নিয়মিত পাঠগ্রহন করা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি ফলৈ ফি -বছর মাদ্রাসার পিএসসি, জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল নি¤œমুখী হচ্ছে।’
তাহিরপুরের বাদাঘাট রহমানিয়া আওয়ামী দাখিল মাদ্রাসার সুপার মো. মহিউদ্দিনের নিকট তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ ও মাদ্রাসার শ্রেণী কক্ষ সহ অফিস কক্ষে তালা ঝুঁলিয়ে দেয়ার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে  তিনি শনিবার বলেন, আমি গত মঙ্গলবার পর্য্যন্ত মাদ্রাসায় ছিলাম এরপর পারিবারীক কাজে ব্যস্ত থাকায় এ ক’দিন মাদ্রাসায় আসতে পারছিনা, বিষয়টি আমি শিক্ষার্থীদের জানিয়েছি আর অন্য শিক্ষকরা কেন মাদ্রাসায় আসেননি তাও আমি জানিনা।’ বিদ্যুৎ বিল ও বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতির প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বারবার প্রসঙ্গ এড়িয়ে যাবার এক পর্যায়ে বললেন, বিদ্যুৎ বিলের টাকাটা আমি ব্যাক্তিগত কাজে খরচ করে ফেলায় সময়মতো জমা দিতে পারিনি।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn