মিটিংয়ে আছি, বাবার লাশ আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলামে দিন
![](http://sunamganjbarta.com/wp-content/uploads/2017/07/a-107.jpg)
মোহাম্মদ সাহেদের ফেসবুক স্ট্যাটাসে থেকে-
মিটিংয়ে আছি, বাবার লাশ আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলামে দিন’ বাবার মৃত্যুর সংবাদ শুনে সন্তানের বক্তব্য
সোমবার রাত ১০টায় তিনি তার ফেসবুকে লেখেন- একটি সত্য ঘটনা, সবাইকে পড়ার অনুরোধ রইলো। লোকটির নাম হামিদ সরকার, তিনি পেশায় একজন সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন। তার বাড়ি ছিল জামালপুরে। আমার সাথে তার পরিচয় সূত্রটা পরেই বলছি। আমি যখন উত্তরায় রিজেন্ট হাসপাতালের প্রথম শাখা তৈরি করি, তখন উত্তরা পশ্চিম থানার তৎকালীন ওসি এবং মসজিদের ইমাম সাহেব আমার কাছে আসেন। বললেন যে, একজন লোক অনেকদিন ধরে মসজিদের বাইরে পড়ে আছে। অনেকে ভিক্ষুক ভেবে তাকে দু-চার টাকা ভিক্ষা দিয়ে যাচ্ছেন। ইমাম সাহেব তার জন্য প্রেরিত খাবার থেকে কিছু অংশ লোকটিকে দিয়ে আসছেন প্রতিদিন। হঠাৎ লোকটি অসুস্থ হয়ে পড়ায় তারা আমার স্বরনাপন্ন হয়েছেন। এমতাবস্থায় আমি লোকটিকে আমার হাসপাতালে নিয়ে এসে চিকিৎসার ব্যবস্থা করি এবং দায়িত্বরত ডাক্তার ও অন্যান্য সকল কর্মকর্তা/কর্মচারীকে অবগত করি যে, এই লোকটির চিকিৎসার সকল দায়ভার আমার ও এর চিকিৎসায় যেন কোনো ত্রুটি না হয়।
হামিদ সরকার নামক লোকটির সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে আমি রীতিমত অবাক হলাম। তিনি একজন অবসরপ্রাপ্ত জোনাল সেটেলম্যান্ট অফিসার। তার তিন ছেলের মধ্যে তিন জনই বিত্তশালী। উত্তরা তিন নম্বর সেক্টরে তার নিজস্ব বাড়ি আছে যা ছেলেদের নামে দিয়েছেন। তার বড় ছেলে ডাক্তার। নিজস্ব ফ্ল্যাটে স্ত্রী, শালী এবং শ্বাশুড়ী নিয়ে থাকেন, অথচ বৃদ্ধ বাবার জায়গা নেই। মেঝ ছেলে ব্যবসায়ী, তারও নিজস্ব বিশাল ফ্ল্যাট আছে। যেখানে প্রায়ই বাইরের ব্যবসায়িক অতিথীদের নিয়ে পার্টি হয়। অথচ বাবা না খেয়ে রাস্তায় পড়ে থাকে। ছোট ছেলেও অবস্থাসম্পন্ন। কিন্তু স্ত্রীর সন্তুষ্টির জন্য বাবাকে নিজের ফ্ল্যাটে রাখতে পারে না। সকল সন্তান স্বাবলম্বী হওয়া সত্ত্বেও বাবার স্থান হয়েছে শেষে মসজিদের বারান্দায়। সেখান থেকে আমার হাসপাতালে।
প্রসঙ্গত, আমার হাসপাতালে আগত রুগীর ক্ষেত্রে রক্তের প্রয়োজন হলে আমি রক্ত দেবার চেষ্টা করি। সেদিনও হামিদ সরকার নামক অসুস্থ লোকটিকে আমি রক্ত দিয়েছিলাম। আশ্চর্য হলো, তিনি পনের দিন আমার হাসপাতালে ছিলেন, অথচ কোন একটা ছেলে পনের মিনিটের জন্যও তার খোঁজ নেয়নি। দুঃখজনক হলো, সর্বোচ্চ চেষ্টার পরেও পনের দিন পরে আরো একটা কার্ডিয়াক অ্যাটাকে তিনি মারা যান। তার মৃত্যুর পরে আমি তার বড় ছেলেকে ফোন করি। তিনি আমাকে প্রতিউত্তরে জানান যে, তিনি জরুরী মিটিং এ আছেন এবং লাশটি যেন আঞ্জুমান মফিদুল ইসলাম এ দিয়ে দেয়া হয়। পরে কোন আত্মীয় স্বজনের কাছ থেকে সাড়া না পেয়ে আমি নিজ উদ্যোগে স্থানীয়ভাবে তার লাশ যথাযথ মর্যাদায় দাফন করি।
লেখাটি আমি কোন প্রকার বাহবা নেয়ার জন্য লিখিনি। আজ আমি নিজেও একজন বাবা। সন্তানের একটু সুখের জন্য দিনরাত একাকার করছি। সেই সন্তান যদি কোনদিন এ ধরনের আচরণ করে তখন আমার কেমন লাগবে? শুধুমাত্র এই অনুভূতি থেকে লেখা।আমার মনে একটা প্রশ্ন, আমরা যারা বাবা মাকে অসম্মান, অবহেলা করি তারা কি একবারও ভেবে দেখিনা যে, একদিন ঐ জায়গাটাতে আমরা নিজেরা গিয়ে দাঁড়াব। আজ আমি আমার বাবা মায়ের সাথে যে আচরণ করছি, তা যদি সেদিন আমার সন্তান আমার সাথে করে তবে? আজ আমাদের বাবা মায়েরা সহ্য করছে। কাল আমরা কি সহ্য করতে পারব?