বার্তা ডেস্ক:: সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন রয়েছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ। এদিকে মৃত্যুর পর এরশাদের কবরস্থান কোথায় হবে তা নিয়ে দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে দলে। বুধবার বিকালে জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য ও এমপিদের টানা তিন ঘণ্টার বৈঠকের পরও এরশাদের কবরস্থান কোথায় হবে তা নিয়ে কোনো সমাধান হয়নি সভায় সভাপতিত্ব করেন জাপার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের। এতে জাপার ৩৮ জন প্রেসিডিয়াম সদস্য ও এমপি উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক সূত্রে জানা যায়, সভায় শুরুতেই জিএম কাদের এরশাদের কথা বলতেই আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। একপর্যায়ে হাউমাউ করে কেঁদে ফেলেন। সভায় উপস্থিত অধিকাংশ নেতা এরশাদের কবরস্থান নিজস্ব কেনা জায়গায় পাবলিক প্লেসে করার পক্ষে মত দেন। তবে কয়েকজন প্রেসিডিয়াম সদস্য দাবি করেন, এরশাদ সেনানিবাস অথবা আসাদগেটের বিপরীতে সংসদ প্রাঙ্গণে তার কবরের কথা বলেছেন। কয়েক নেতা এর বিরোধিতা করে বলেন, এরশাদ দেশের সতের কোটি মানুষের নেতা। তার কবরস্থান যদি সেনানিবাসে হয় তাহলে সাধারণ মানুষ তার কবরস্থান জিয়ারত করতে যেতে পারবে না।

সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন এম এ সাত্তার, সাহিদুর রহমান টেপা, শেখ মুহাম্মাদ সিরাজুল ইসলাম, সুনীল শুভ রায়, হাজি সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন, এটিইউ তাজ রহমান, আজম খান প্রমুখ। সভা শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, এরশাদের শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে। তিনি মূলত মাইলিড প্লাস্টিক সিনডম রোগে আক্রান্ত। যৌথ সভায় সর্বসম্মতভাবে সিদ্ধান্ত হয়েছে, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুসারে পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেয়া হবে। এরশাদ বর্তমানে সিএমএইচে চিকিৎসা নিচ্ছেন। চিকিৎসকদের রিপোর্ট পর্যালোচনা করে উপস্থিত সদস্যরা আশাবাদ ব্যক্ত করেন, পার্টি চেয়ারম্যান দ্রুত আরোগ্য লাভ করবেন। জি.এম. কাদের জানিয়েছেন, এখন কথা বলতে না পারলেও চোখ মেলে তাকাচ্ছেন বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ। হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের ফুসফুস, কিডনির অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে বলে জানান দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।

প্রসঙ্গত, ১৯৮৩ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ছিলেন হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ। রাষ্ট্রপতি হিসেবে তার দেশ পরিচালনাকে অনেকেই সামরিক একনায়তন্ত্রের সাথে তুলনা করেন। তিনি জাতীয় পার্টি নামক রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করেন যা পরবর্তীতে বেশ কিছু উপদলে বিভক্ত হয়। ১৯৮৩ সালে নির্বাচিত সরকারের অধীনে সেনাপ্রধানের দায়িত্ব পালনকালে তিনি রাষ্ট্রক্ষমতা গ্রহণ করেন এবং সামরিক শাসন জারীর মাধ্যমে দেশ শাসন করেন। দেশে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা পুন:প্রবর্তনের উদ্দেশ্য ঘোষণা করে তিনি ১৯৮৬ সালে সংসদীয় সাধারণ নির্বাচন দেন। এই নির্বাচনে তিনি স্বপ্রতিষ্ঠিত জাতীয় পার্টির ভোটপ্রার্থী হিসাবে অংশ গ্রহণ করেন এবং পরে পাঁছ বছরের জন্য বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। ১৯৯০ সালে গণবিক্ষোভের চাপে তিনি পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। ক্ষমতা হারানোর পর এরশাদ গ্রেফতার হন এবং ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না-আসা পর্যন্ত কারারূদ্ধ থাকেন।

১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনে তিনি কারাগার থেকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন এবং রংপুরের পাঁচটি আসন থেকে নির্বাচিত হন। বিএনপি সরকার তার বিরুদ্ধে কয়েকটি দুর্নীতি মামলা দায়ের করে। তার মধ্যে কয়েকটিতে তিনি দোষী সাব্যস্ত হন এবং সাজাপ্রাপ্ত হন। ১৯৯৬ সালের সাধারণ নির্বাচনেও তিনি পাঁচটি আসন থেকে নির্বাচিত হন। ছয় বছর অবরুদ্ধ থাকার পর ৯ জানুয়ারি ১৯৯৭ সালে তিনি জামিনে মুক্তি পান। তার প্রতিষ্ঠিত জাতীয় পার্টি ২০০০ সালে তিনভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে, যার মধ্যে মূল ধারার তিনি চেয়ারম্যান। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারীর জাতীয় নির্বাচনে তার সংসদে প্রধান বিরোধী দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রংপুর-৩ আসন হতে তিনি জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn