মৌলভীবাজার: বড়লেখা উপজেলার দক্ষিণভাগ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আজির উদ্দিনের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ এনে মামলা করেছেন এক নারী (২৪)। সম্প্রতি ওই নারী বাদী হয়ে মৌলভীবাজার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে চেয়ারম্যান আজির উদ্দিনকে প্রধান আসামি করে মামলা করেন। মামলায় আসামি করা হয়েছে আরো একজনকে। এদিকে, ঘটনাটি জানাজানি হবার পর থেকে জেলা জুড়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও বইছে সমালোচনার ঝড়। এতে বিব্রত স্থানীয় ইউনিয়ন আ’লীগের নেতা-কর্মীরাও।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩ সালে উপজেলার দক্ষিণভাগ ইউনিয়নের কাশেমনগরের (গুচ্ছগ্রাম) জনৈক এক ব্যক্তি ও তার স্ত্রীর (মামলার বাদী নারী) মধ্যে দাম্পত্য কলহ দেখা দেয়। এ ঘটনার জন্য নারীর পিতা তাকে সঙ্গে নিয়ে বিচার চাইতে ইউ.পি চেয়ারম্যান আজির উদ্দিনের কার্যালয়ে যান। সেখানে ওই নারীর দিকে নজর পড়ে ইউপি চেয়ারম্যান আজির উদ্দিনের। এরপর বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে একই বছরের এপ্রিল মাসে স্বামীর সংসার থেকে ওই নারীকে কৌশলে ছাড়িয়ে আনেন এই চেয়ারম্যান।

২০১৬ সালের জানুয়ারি মাসে এফিডেভিটের মাধ্যমে ওই নারীকে বিয়ে করেন আজির উদ্দিন। প্রথম স্ত্রীর অনুমতি নিয়ে মোহরানাসহ রেজিস্ট্রার নিকাহনামা সম্পাদনের আশ্বাস দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু বিয়ের পরই টালবাহানা শুরু করেন আজির। ওই নারীর ইচ্ছার বিরুদ্ধেও তাকে ধর্ষণ করেন তিনি। এতে ওই নারী গর্ভবতী হয়ে পড়লে বাচ্চা নষ্ট করার জন্য চেয়ারম্যান চাপ সৃষ্টি করেন। গর্ভের বাচ্চা নষ্ট না করায় তার ওপর চলে নির্যাতন।

এ ঘটনার বিচার চাইতে নারীটি গিয়েছিলেন থানায়। কিন্তু থানা কোনো সহযোগিতা না করায় শেষ পর্যন্ত আদালতে গিয়ে তিনি মামলা দায়ের করেন। বর্তমানে মামলাটি জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তদন্তাধীন রয়েছে বলে জানা গেছে। নির্যাতনের শিকার নারী বলেন, “ইউপি চেয়ারম্যান আজির উদ্দিন বিয়ের ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে আমাকে একাধিকবার ধর্ষণ করেছেন। তিনি প্রভাবশালী, তাই তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে কিছু করার সাহস ছিল না আমার।” তিনি অভিযোগ করেন, “আদালতে মামলা করার পর থেকে চেয়ারম্যান আজির উদ্দিন এবং তার লোকজন উন্মাদ হয়ে গেছে। তারা আমাকে হত্যা করার জন্য খুঁজছে। আমি এখন নিরাপত্তাহীনতায় আছি।”

সম্প্রতি দক্ষিণভাগ এলাকা ঘুরে জানা গেছে, ওই নারীর ১ম স্বামী জনৈক ব্যক্তির সঙ্গে তালাকের পর ২০১৬ সালের জানুয়ারি মাসে এফিডেভিটের মাধ্যমে দক্ষিণভাগ দক্ষিণ ইউপির চেয়ারম্যান আজির উদ্দিন তাকে বিয়ে করেন। যদিও এই বিয়েতে ইউপি চেয়ারম্যান আজির উদ্দিন তার প্রথম স্ত্রীর অনুমতি নেননি বলে অভিযোগ আছে। এদিকে, বিয়ের কয়েক মাসের মধ্যে ওই নারী আবার ২য় স্বামী আজির উদ্দিনের অনুমতি ব্যতিত একই ইউনিয়নের ইউপি সদস্য আজিজুল ইসলামকে বিয়ে করে সংসার শুরু করেন। এই বিয়ের প্রায় ২ মাসের মধ্যে ইউপি সদস্য আজিজুলের সঙ্গে তার তালাক হয়।

এমন ঘটনায় ক্ষুব্ধ ও বিব্রত স্থানীয়রা। ইউনিয়নের বাসিন্দা যুবলীগ নেতা নজরুল ইসলাম ডেল, আবুল কালাম ও মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আফতাব উদ্দিন বলেন, এই ঘটনায় এলাকাবাসী রীতিমতো লজ্জিত। আমাদের অন্য দলের মানুষ খোঁচা (লজ্জা) দেয়। চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মামলার পর উনার পক্ষে দক্ষিণভাগ বাজারে মানববন্ধন করা হয়েছিল। ওইদিন সন্ধ্যায় ওই নারীর পক্ষে মানববন্ধন নিয়ে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছিল। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়।

বিয়ের বিষয়ে ইউপি সদস্য আজিজুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “বিষয়টি সত্য নয়। তবে আপনাদের কাছে যদি প্রমাণ থাকে, তাহলে লিখেন।” মামলার ব্যাপারে অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যান আজির উদ্দিন বলেন, “এসব আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। মেয়েটিকে আমি বিয়ে করেছি ঠিকই, তবে বিয়ের কয়েক মাসের মধ্যে সে ইউনিয়ন পরিষদের আরেক সদস্যকে বিয়ে করে। পরে ওই ইউপি সদস্যের সঙ্গেও তার তালাক হয়েছিল। এই ঘটনাগুলিকে পুঁজি করে আমার নির্বাচনকালীন প্রতিপক্ষ আমাকে ফাঁসাতে মেয়েটিকে ব্যবহার করে এই মামলাটি করিয়েছে। সুষ্ঠু তদন্ত হলে প্রকৃত সত্যটি বের হয়ে আসবে। সত্যের জয় হবে।”

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn