ইমাদ উদ দীন:

মৌলভীবাজার-২ আসনে ফ্যাক্টর সুলতান-শাহীন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এমন আলোচনা সর্বত্র। সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ। ডাকসুর সাবেক ভিপি। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের এক সময়কার সাংগঠনিক সম্পাদক। এ আসনের সাবেক এমপি। অন্যজন এমএম শাহীন। তিনিও সাবেক এমপি। জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি। দু’জনের নিয়তিই এক। দু’জনই আজ নিজ দলছাড়া। তবে দলীয় আদর্শকে বুকে লালন করে এগিয়ে চলছেন তারা। মৌলভীবাজার-২ আসনটি জেলার মধ্যে অন্যতম রাজনৈতিক সচেতন এলাকা। কিন্তু বিধি বাম। দীর্ঘ প্রায় একযুগ ঝিমিয়ে আছে কুলাউড়ার রাজনীতি। দলীয় রাজনীতির এমন বেহালদশা কাটাতে অনেকেই হাল ধরার চেষ্টা করছেন। কিন্তু কিছুতেই যেন তা পূরণ হচ্ছে না। কুলাউড়া ও কমলগঞ্জ উপজেলার আংশিক এলাকা নিয়ে গঠিত আসনটির রাজনীতিতে চলছে চরম নেতৃত্ব সংকট। এমন অবস্থায় বড় দু’টি দলের নেতাকর্মীরা হতাশ। দক্ষ, যোগ্য নেতৃত্বশূন্যতায় অনেকটা অভিভাবকহীন নেতা-কর্মীরা। বর্তমানে যারা আওয়ামী লীগ কিংবা বিএনপির কাণ্ডারি হিসেবে আছেন তাদের কর্মকাণ্ড নিয়ে রয়েছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। তাই নির্বাচনী আলাপ হলেই আলোচনা জমে উঠে নেতা আর নেতৃত্ব নিয়ে। গ্রাম থেকে শহর। সবখানে সমান গুরুত্বে আলোচনা দুই নেতাকে নিয়ে। যারা নিজেদের যোগ্যতা আর স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যে মন জয় করেছেন সর্বমহলের। তারা সংসদ সদস্য থাকাকালে যেমন হয়েছে এলাকার উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন। তেমনি স্থানীয় জনগণ সুখ- দুঃখে তাদের কাছে পেয়েছেন। কিন্তু এই দুই সাবেক সংসদ সদস্য রাজনীতিতে থাকলেও এখন নানা কারণে দলীয় রাজনীতির বাইরে। তারা দলীয় রাজনীতিতে সক্রিয় না থাকায় নিজ নিজ নেতাকর্মীরাও নিষ্ক্রিয়। আর নিজেদের ব্যক্তি ইমেজে আকৃষ্ট শুভাকাঙ্ক্ষীরাও চলমান রাজনীতিতে তাদের দেখা না পেয়ে চরম হতাশ। এই দু’নেতা জাতীয় রাজনীতিতে উপেক্ষিত থাকায় নেতৃত্বশূন্য হয়ে পড়েছে কুলাউড়ার রাজনীতি। একসময় কুলাউড়াসহ  দেশের জাতীয় রাজনীতিতে বলিষ্ঠ নেতৃত্বদানকারী সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ এবং সাবেক জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি এমএম শাহীন বর্তমান দলীয় ও স্থানীয় রাজনীতিতে এখন অনেকটাই নিষ্প্রভ। আদর্শিক ভাবে তারা রাজনীতি না ছাড়লেও রয়েছেন দলীয় রাজনীতির বাইরে। এই দুই সাবেক এমপি ছাড়াও স্থানীয় রাজনীতিতে একই অবস্থা আরেক সাবেক এমপি ও জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা নওয়াব আলী আব্বাছ খানেরও। মৌলভীবাজার-২ আসন থেকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হয়ে তিনবারের নির্বাচিত সাবেক এই এমপি বর্তমানে অনেকটাই রাজনীতির অন্তরালে। এখন পর্যন্ত তার নিজ জেলায় জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) কমিটিও করা হয়নি। অথচ পারিবারিক ঐতিহ্য এবং একাধিকবার এমপি হওয়াতে পুরো জেলায় তার গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। কিন্তু তারপরও তার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের নিষ্ক্রিয়তা হতাশ করেছে তার অনুসারী ভক্ত ও সমর্থকদের। চা-বাগান অধ্যুষিত এলাকা হওয়ায় ভোটের মাঠে বরাবরই এ আসনে এগিয়ে থাকে আওয়ামী লীগ। ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নেয়ায় এমএম শাহীনও নির্বাচনে দাঁড়াননি। তবে পরবর্তীতে ভক্ত ও ভোটারদের অনুরোধে তিনি জেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেন। ওই নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে অল্প ভোটের ব্যবধানে তিনি পরাজিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন সাবেক এমপি ও জেলা পরিষদ প্রশাসক বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ আওয়ামী লীগ নেতা মো. আজিজুর রহমান। সে সময় থেকে এমএম শাহীন মাঠে রয়েছেন। আর সুলতান মনসুরের এলাকাকে ঘিরেই তার স্বপ্ন। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে দলীয় কোনো প্রভাবশালী নেতাকে প্রার্থী মনোনয়ন না দেয়ায় সাবেক উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান এমপি আব্দুল মতিন দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে জয়ী হন। ডাকসু’র সাবেক ভিপি ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ ১৯৯৬ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মৌলভীবাজার-২ আসনে অংশ নিয়ে বিপুল ভোটে জয়ী হন। তার নেতৃত্বে কুলাউড়াসহ পুরো সিলেট অঞ্চলে দলীয় কর্মকাণ্ড ও নিজ এলাকার উন্নয়ন কাজ এগিয়ে নেন। ২০০১ সালের নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী এমএম শাহীনের কাছে পরাজিত হন সুলতান  মোহাম্মদ মনসুর। আওয়ামী লীগের একাধিক নেতাকর্মী সূত্রে জানা যায়, দলীয় রাজনীতি থেকে ছিটকে যাওয়ার পর কুলাউড়ার দলীয় রাজনীতিতে তার কোনো হস্তক্ষেপ নেই। তিনি যখন দলীয় পদে ছিলেন তখন কুলাউড়া আওয়ামী লীগে দলীয় কোন্দল প্রকাশ্যে ছিল না। বর্তমানে কুলাউড়া আওয়ামী লীগে দলীয় কোন্দল প্রকাশ্যে। নানা কারণে জেলাজুড়ে আলোচিত আরেক নেতা জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি এমএম শাহীন। নব্বই দশকের পর যুক্তরাষ্ট্র থেকে এসে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত হয়ে স্থানীয় বিএনপিকে বেশ সুসংগঠিত করেছিলেন তিনি। ২০০১ সালে চারদলীয় জোটের গ্যাঁড়াকলে পড়ে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা সুলতান মোহাম্মদ মনসুরকে পরাজিত করে চমক সৃষ্টি করেন। কিন্তু সে সময় দলীয় সিদ্ধান্ত না মানায় দল থেকে বাদ পড়েন তিনি। আর সংস্কারপন্থি অজুহাতে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত হন তিনি। দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে আবারো তিনি এই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়ে জাতীয় পার্টির প্রার্থী নওয়াব আলী আব্বাছের কাছে পরাজিত হন। ২০১৪ সালের নির্বাচনে অংশ না নিলেও ২০১৫ সালের ৫ই জানুয়ারি কেন্দ্রীয় বিএনপি ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে নিজ নেতাকর্মীদের নিয়ে কুলাউড়ায় কালো পতাকা মিছিল দিয়ে আবারো ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি করেন এমএম শাহীন। ওই মিছিলে পুলিশ ব্যাপক লাঠিচার্জ ও ধরপাকড় চালায়। এ ঘটনায় তিনিসহ বেশ কয়েকজন  নেতাকর্মী মামলার আসামি হয়ে জেলও খাটেন। ২০টি চা-বাগান, অর্ধশতাধিক রাবার বাগান আর দেশের সবচেয়ে বড় হাকালুকি হাওর অধ্যুষিত এই সংসদীয় আসন। আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন- ডাকসুর সাবেক ভিপি ও সাবেক এমপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ, সাবেক এমপি ও ঠিকানা গ্রুপের চেয়ারম্যান এমএম শাহীন, সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট নওয়াব আলী আব্বাছ খান, বর্তমান এমপি আব্দুল মতিন, পুলিশের সাবেক এআইজি ও আওয়ামী লীগ নেতা সৈয়দ বজলুল করিম (বিপিএম), জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট আবেদ রাজা, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, কুলাউড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ একেএম শফি আহমদ সলমান, কুলাউড়া উপজেলা চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা আ.স.ম কামরুল ইসলাম, জেলা আওয়ামী লীগ সদস্য আতাউর রহমান শামীম, বিএমএ’র সিলেট জেলা শাখার সভাপতি, আওয়ামী লীগ নেতা অধ্যাপক ডা. রুকন উদ্দিন আহমদ, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা ডা. মিফতাহুল ইসলাম সুইট, কুলাউড়া উপজেলা জাতীয় পার্টি (এরশাদ) সাধারণ সম্পাদক এএসএম সিদ্দিক আহমদ লোকমান।-মানবজমিন

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn