ম্যানচেস্টারে মুসলিমরা আতঙ্কে, ঘৃণাপ্রসূত অপরাধ বাড়ছে
ম্যানচেস্টার হামলার পর ‘হেট ক্রাইম’ বা ঘৃণাপ্রসূত অপরাধ বৃদ্ধি পেয়েছে দ্বিগুণ হারে। এর মধ্যে রয়েছে বোমা হামলার হুমকি। জাতিগত বিদ্রুপ। দেয়ালে চিকা মারা। সোমবার দিবাগত রাতের পর গ্রেটার ম্যানচেস্টার পুলিশের কাছে এসব অপরাধের বিষয়ে রিপোর্ট আসছে। এ জন্য আতঙ্কে আছেন মুসলিমরা। তাদের ভয়, ম্যানচেস্টার হামলার প্রতিশোধ হিসেবে তারা শিকারে পরিণত হতে পারেন। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি। সূত্রগুলো বলেছে, সোমবার এমন অপরাধের সংখ্যা ছিল ২৮। কিন্তু বুধবার তা দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৫৬। ম্যানচেস্টারের চিফ কনস্টেবল ইয়ান হপকিনস বলেছেন, তার বাহিনী এ পরিস্থিতির দিকে নজরদারি করছে। তা সত্ত্বেও আতঙ্কে আছেন মুসলিমরা। তাদের অনেক নেতা দাবি করেছেন এমন সব অপরাধ ঘটছে যা রিপোর্ট করা হয় নি। মানুষজন কথা বলতে শঙ্কিত। সোমবার রাতের বোমা হামলার সঙ্গে এর সরাসরি কোন সম্পর্ক দেখছেন না ইয়ান হপকিনস। ওই হামলায় কমপক্ষে ২২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে ৭টি শিশু। ইয়ান হপকিনস বলেন, সোমবার রাতে বোমা হামলার পর থেকে ঘৃণাপ্রসূত ঘটনা বৃদ্ধি দুঃখের সঙ্গে আমরা লক্ষ্য করছি। সোমবার এমন ঘটনা ছিল ২৮টি। এটা জাতীয় পর্যায়ের গড়। তবে বুধবার তা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ৫৬টি। এসব ঘটনার মধ্যে একটি স্কুলে বোমা হামলার হুমকি দেয়া হয়েছে। ওই স্কুলের কিছু শিক্ষার্থীকে জিজ্ঞাসা করা হয় তারা মুসলিম কিনা। এরপরই ওই হুমকি দেয়া হয়। একজন শিক্ষার্থীকে ধাতব দন্ড হাতে নিয়ে এক ব্যক্তি নির্যাতন করেছে এবং তাকে জাতিগতভাবে অপমান করেছেন। ব্যাংকের একজনকে সন্ত্রাসী বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এমন আখ্যা দিয়েছেন ব্যাংকে একাউন্ট খুলতে যাওয়া একজন ব্যক্তি। ওই ব্যক্তি ব্যাংকের ওই কর্মকর্তাকে ম্যানচেস্টার অ্যারিনাতে বোমা হামলার জন্য দায়ী করেছেন। সুপারমার্কেটে একজনকে বলতে শোনা গেছে ‘তোমরা গত রাতে যা করেছো তার জন্য তোমাদের লজ্জিত হওয়া উচিত’। সুপারমার্কেটেই এক নারীকে বলা হয়েছে, তার নেকাব পরা উচিত নয়। উত্তর ম্যানচেস্টারে বিভিন্ন স্থাপনার গায়ে দেখা গেছে দেয়াল লিখন। তাতে বর্ণবাদি লেখা চোখে পড়েছে। উল্লেখ্য, লিবিয়ান বংশোদ্ভূত বৃটিশ নাগরিক সালমান আবেদি (২২) সোমবার দিবাগত রাতে অ্যারিনা কনসার্ট হলে বোমা হামলা চালিয়ে হত্যা করে কমপক্ষে ২২ জনকে। এতে আহত হয়েছেন অনেকে। এখনও হাসপাতালে রয়েছেন ৬৬ জন। তার মধ্যে ২৩ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। আশঙ্কা দেখা দিয়েছে, ওই ঘটনার পর মুসলিমদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমুলক হামলা বৃদ্ধি পেতে পারে। যদিও ইয়ান হপকিনস বলেছেন, ওই হত্যাযজ্ঞের পর ম্যানচেস্টার ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। তিনি বলেছেন, আমরা সবার ধৈর্য্য দেখেছি। গ্রেটার ম্যানচেস্টারের জন্য আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধভাবে দাঁড়াতে হবে। এটাই এখন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বিশেষ করে ঘৃণা প্রসূত কোন ঘটনা ঘটলে তার বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে। আমি দেখেছি সব ধর্ম ও সব উপাসনালয় থেকে ব্যক্তিগত বার্তা দেয়া হয়েছে। তারা যে সমর্থন দিয়েছেন তার জন্য ধন্যবাদ। ওইসব মানুষ দেখিয়ে দিয়েছেন ঘৃণার কোন স্থান নেই। ঘৃণা সহ্য করা হবে না। ম্যানচেস্টার মেট্রোপলিটান ইউনিভার্সিটির মুসলিম নেতা মোহাম্মদ উল্লাহ বলেছেন, প্রধান কনস্টেবল হপকিনস যে সংখ্যা উল্লেখ করেছেন তাতে তিনি বিস্মিত হন নি। হপকিনসতো উল্লেখ করেছেন রিপোর্টেড সংখ্যা। কিন্তু এর বাইরে আতঙ্কে কথা বলতে সাহস পাচ্ছে না অনেকে