বার্তা ডেক্সঃঃইউরোপের অন্যান্য দেশের মতো যুক্তরাজ্যেও করোনা ভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ আঘাত হেনেছে। এর আগে মহামারী পরিস্থিতির মধ্যে দীর্ঘ পাঁচ মাস বন্ধ থাকার পর গত আগস্টের শুরুতে খুলে দেওয়া হয়েছিল যুক্তরাজ্যে সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এরপর ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে শুরু করেছিল জনজীবন। কিন্তু চলতি সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে আবার দেশটিতে বাড়তে থাকে করোনার প্রভাব। এখন প্রতিদিনই তিন হাজারের বেশি মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন এই রোগে। এ কারণেই জরুরি পদক্ষেপ হিসেবে কাল বৃহস্পতিবার থেকে রাত ১০টার পর সব পাব, বার ও রেস্টুরেন্ট বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে ব্রিটিশ সরকার। একই সঙ্গে অন্যান্য ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানও রাত ১০টার পর বন্ধ রাখার জন্য বলা হয়েছে।

গত মঙ্গলবার স্থানীয় সময় রাত ৮টায় ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া এক ভাষণে নতুন করে এই কারফিউয়ের ঘোষণা দেন। এর আগে এদিন সকালে মন্ত্রীদের সঙ্গে বিশেষ বৈঠকও করে কোবরা মিটিংয়ে যোগ দেন জনসন। সেই মিটিংয়েই মূলত এই কারফিউ জারির সিদ্ধান্ত হয়। কারফিউ ছাড়াও যুক্তরাজ্যে করোনা ভাইরাসের ৪ মাত্রার সতর্কতা জারি করা হয়েছে। এর অর্থ হলো- করোনার সংক্রমণ দ্রুত বাড়ছে। বিশেষ করে ইংল্যান্ড, নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড, স্কটল্যান্ড ও ওয়েলসের প্রধান মেডিক্যাল কর্মকর্তারা অ্যালার্ট লেভেল তিন থেকে চারে উন্নীত করেছেন। এর অর্থ উচ্চমাত্রায় করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ জন্য সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে জনসাধারণকে প্রয়োজনে বাধ্য করতে হবে। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর নতুন ঘোষণায় যেসব ব্যাপারে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে, সেগুলো হলো- সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার ওপর গুরুত্ব দিয়ে আবশ্যিকভাবে মাস্ক ব্যবহার, নিয়ম ভঙ্গ করলে জরিমানা আদায়, ছয়জনের বেশি একসঙ্গে চলাফেরা না করা, সম্ভব হলে ঘরে থেকে কাজ করা এবং বিয়ের অনুষ্ঠানে ৩০ জনের স্থলে ১৫ জনে নামিয়ে আনা। সরকারের বিজ্ঞানবিষয়ক উপদেষ্টারা দ্বিতীয় লকডাউন দেওয়ার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। সোমবার ব্রিটিশ সরকারের বিজ্ঞানবিষয়ক উপদেষ্টা স্যার প্যাট্রিক ভ্যালান্স হুশিয়ার করেন যে, আসছে অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে যুক্তরাজ্যে প্রতিদিন ৫০ হাজারের বেশি মানুষ করোনা আক্রান্ত হতে পারেন। কিন্তু এর বিরোধিতা করেছেন অর্থমন্ত্রী চ্যান্সেলর ঋষি সুনাক। তার নেতৃত্বে মন্ত্রীরা বলেছেন, দ্বিতীয় লকডাউন দেওয়া হলে অর্থনীতির অপূরণীয় ক্ষতি হবে।

মেইল অনলাইন এক খবরে বলেছে, দ্বিতীয় দফায় লকডাউন দেওয়া হবে কিনা তা নিয়ে মন্ত্রীদের সঙ্গে বিতর্ক হয়েছে জনসনের। দ্বিতীয় দফায় লকডাউন দিলে অর্থনীতি একেবারে বসে যাবে বলে মনে করছেন মন্ত্রীরা। ফলে প্রধানমন্ত্রী জনসন ঘোষণা দিয়েছেন, তিনি নতুন লিগ্যাল ডিউটি তৈরি করছেন। নতুন নিয়মের অধীনে কারও দেহে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হলে তিনি বাড়ির ভেতরেই থাকবেন। যদি বাড়ি থেকে বের হন, তা হলে তাকে জরিমানা করা হবে। এর অধীনে কম আয়ের প্রায় ৪০ লাখ মানুষ, যারা ঘরে বসে কাজ করতে পারেন না, তাদের বাধ্যতামূলক সেলফ আইসোলেশনে পাঠানো হবে। এ ক্ষেত্রে এসব মানুষকে ৫০০ পাউন্ড পর্যন্ত সহায়তা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। আবার যদি কেউ সরকারি নির্দেশ লঙ্ঘন করে তা হলে তাকে শুরুতে এক হাজার পাউন্ড জরিমানা করা হবে। তার পরও যদি তিনি একই ঘটনা ঘটান, তা হলে জরিমানার পরিমাণ বেড়ে দাঁড়াবে ১০ হাজার পাউন্ড।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn