রাত হলেই ফেসবুক লাইভে হাজির হচ্ছে অর্ধনগ্ন পোশাকে তরুণী, যুবতী এমনকি মধ্যবয়সী দেশি-বিদেশি নারীরা। আবেদনময়ী ভঙ্গিতে শরীরের নানা অঙ্গ দেখাতে ব্যস্ত তারা। তাদের আচরণের প্রতিক্রিয়ায় দর্শকরা কী বলছেন, তার উত্তরও দিচ্ছেন। এভাবেই জনপ্রিয় এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়াচ্ছে যৌনতা। ফলাফল সামাজিক অবক্ষয়। জানা গেছে, এসব ভিডিও ভাইরাল করে অনেকে বাণিজ্যিক সুবিধা নিচ্ছেন। ফেসবুক লাইভে কথা বলার পর তা ছড়িয়ে যাচ্ছে ইউটিউবে। ব্যাপক প্রচার হচ্ছে এসব ভিডিও। দর্শক যতো বেশি আয়ের পরিমাণও ততো বেশি। নানা নামে ফেসবুক পেজ খুলে কম টাকায় পতিতা ভাড়া করে লাইভ করানো হচ্ছে। তাতে ওই ফেসবুক পেজের লাইক এবং দর্শক সংখ্যা বাড়ছে। সেখান থেকে আয় হচ্ছে অর্থ। দর্শকদের বিভিন্ন মন্তব্যে দেখা যাচ্ছে, লাইভে আসা এসব নারীকে উদ্দেশ করে কেউ অশালীন ভাষায় মন্তব্য করছেন। কেউ উত্তেজিত হচ্ছেন। আবার কেউ ঠাণ্ডা মাথায় চালিয়ে যাচ্ছেন রোমান্টিক আড্ডা।

তবে যেসব আইডি থেকে কমেন্টগুলো করা হয় তার অধিকাংশই ছদ্মনামে। আকাশের ফুল, তারার জ্যোতি, অচিন পাখি, অস্থায়ী ঠিকানা ইত্যাদি নামে এসব আইডি চালানো হচ্ছে। যেসব সেক্স গার্ল বা নারী এসব লাইভে অংশ নিচ্ছেন তাদের আইডিগুলোরও বেশিরভাগ ছদ্মনামে। যৌনতা সব সময়ই আকর্ষণীয় বিষয়। বিশেষজ্ঞদের মতে নির্জনতায় গেলে অনেক শুদ্ধ মানুষও ঝুঁকে পড়েন অশ্লীল কার্যকলাপে। এ কারণে ফেসবুক লাইভে এ ধরনের কর্মকাণ্ডের ফলে যুবসমাজ শারীরিক ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে সামাজিক অবক্ষয় বাড়বে বলে মনে করেন সমাজবিজ্ঞানীরা। অনুসন্ধানে জানা গেছে, এসব লাইভ ভিডিও যারা দেখেন, তাদের অধিকাংশই তরুণ ও স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রী। বাসায় পরিবারের সদস্যদের নজরের বাইরে গিয়ে তারা ইন্টারনেটে এসব কনটেন্ট উপভোগ করেন। প্রযুক্তির এমন খারাপ প্রভাব থেকে সমাজ রক্ষার উপায় কী জানতে চাইলে প্রযুক্তিবিদ ও বেসিস-এর সভাপতি মোস্তফা জব্বার বলেন, ফেসবুক বা প্রযুক্তিকে পর্ণোগ্রাফির জন্য দায়ী না করে প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।

তিনি বলেন, আমাদের অভিভাবকরা সন্তানদের ধরে, বেঁধে এসব নিয়ন্ত্রণ করতে চান। এটা ঠিক নয়। প্রযুক্তির মাধ্যমে অনেক শিক্ষণীয় বিষয় আছে। তাই আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য ভালো মন্দের পার্থক্যটুকু বুঝতে হবে। মোস্তফা জব্বার বলেন, প্রথমত সরকার চাইলে এসব নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। দ্বিতীয়ত, পরিবারের কর্তাব্যক্তিরা ডিজিটাল ডিভাইস দিয়েও অনৈতিক কর্মকাণ্ড ঠেকাতে পারবেন। অপ্রাপ্ত বয়স্ক কিশোর-কিশোরীদের কঠোর হাতে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা না করে বরং ইন্টারনেটের খারাপ দিকগুলোর বিষয়ে সচেতন করাও জরুরি বলে মনে করেন এ প্রযুক্তিবিদ।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn