রওশন হক–ভোটাররা আপাত দৃষ্টিতে যদি মনে করে থাকেন যে তারা তাদের পছন্দনীয় প্রেসিডেন্ট প্রার্থীকে ভোট দিচ্ছেন আসলে তা ঠিক নয়। তারা ভোট দেন প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর প্রতি প্রতিশ্রুত ইলেক্টোরাল কলেজের সদস্যদেরকে। ইলেক্টোরাল কলেজ পদ্ধতি সত্যিকারার্থেই একটি জটিল প্রক্রিয়া। যা সাধারণ ভোটারদের নিকট দুর্বোধ্য। আমেরিকার জনগন নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মঙ্গলবারে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য ভোট দেন। ডিসেম্বর মাসের দ্বিতীয় বুধবারের পরের সোমবার প্রতিটি রাজ্যের রাজধানীতে ইলেক্টরগণ মিলিত হয়ে প্রেসিডেন্ট এবং ভাইস প্রেসিডেন্টকে ভোট দেন। সেখান থেকে তাদের প্রদানকৃত ভোট সীলগালা করে সিনেটের প্রেসিডেন্টের নিকট পাঠানো হয়। তার মানে এই ডিসেম্বরের ১৪ তারিখ ইলেক্টরগণ ভোট দিবেন।

২০২১ সালের ৬ জানুয়ারী ইউএস সিনেট ও কংগ্রেসের উভয় হাউজের সম্মিলিত অধিবেশনে ৫০টি রাজ্যের ইলেক্টোরাল ভোট গণনা করে বিজয়ী প্রেসিডেন্ট এবং ভাইস প্রেসিডেন্টের নাম ঘোষণা করা হবে। মোট ইলেক্টোরাল ভোট ৫৩৮-এর মধ্যে যিনি অর্ধেকের চেয়ে একটি ভোট বেশী অর্থাৎ ২৭০টি ভোট পাবেন তিনিই নিরঙ্কুশ সংখ্যা গরিষ্ঠতায় প্রেসিডেন্ট হবেন। কখনো কোন প্রার্থী নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলে সেক্ষেত্রে প্রতি রাজ্য থেকে একজন করে হাউজ অব রিপ্রেজেনটেটিভ শীর্ষ তিন প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর মধ্যে একজনকে নির্বাচিত করবেন এবং এক্ষেত্রেও সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজ্যের সমর্থন প্রয়োজন। বলা হয় কোনো ক্যাম্পাস নেই। প্রাতিষ্ঠানিক ভবন নেই। নেই কোনো শিক্ষার্থী ও শিক্ষক। তারপরও এর নাম ইলেক্টোরাল কলেজ। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিশ্বের একমাত্র ও অভিনব পদ্ধতি এটি। প্রেসিডেন্ট নির্বাচন বরাবরই ইলেক্টোরাল কলেজ গ্যাড়াকলে আটকে আছে। অনেকটা শাখের করাতের মতো দু’দিকে কাটে। এই কলেজের কারণে ২০১৬ সালে ৩০ লাখ পপুলার ভোট পেয়েও ট্রাম্পের কাছে হেরে যান হিলারী ক্লিনটন।

২০০০ সালের নির্বাচনে জর্জ বুশের চেয়ে ৫ লাখ পপুলার ভোট বেশী পেয়েও আলগোর ইলেক্টোরাল ভোটে হেরে যাওয়ায় প্রেসিডেন্ট হতে পারেননি। প্রায় সোয়া দুশ’ বছর যাবত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এই পদ্ধতি চলে আসছে। এ নিয়ে অনেক বিতর্কও হচ্ছে। কারো কারো মতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য এটি একটি বাজে পদ্ধতি। এই পদ্ধতির কারণে অনেক ভোটারই ভোট প্রয়োগে উৎসাহ হারিয়ে ফেলেন। আমেরিকার স্থপতি ও প্রথম প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটন তৎকালীন আমেরিকার মাত্র ১৩টি ছোট-বড়, দুর্বল ও শক্তিশালী রাজ্যের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার জন্য ইলেক্টোরাল কলেজ পদ্ধতি বেছে নিতে বাধ্য হন। লেখক: কলামিস্ট।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn