রাজনগরে কলেজছাত্রী শাম্মী আখতার (১৮) হত্যার রহস্য বেরিয়ে এসেছে। পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার শাম্মী আক্তারের প্রেমিক আলকুমের বর্ণনায় উঠে এসেছে কিভাবে করা হয়েছিল হত্যার পরিকল্পনা ও কিভাবে ঘটানো হয়েছিল হত্যাকাণ্ড। উঠে এসেছে এক লন্ডনপ্রবাসী প্রেমিকের নামও। শনিবার সন্ধ্যা রাতে মৌলভীবাজারের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে হত্যার সবকিছুই জানিয়েছে আলকুম।

সূত্রে জানা যায়, টেংরা ইউনিয়নের কাছারি করিমপুর গ্রামের হারুন মিয়ার মেয়ে তারাপাশা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের এইচএসসি ২য় বর্ষের ছাত্রী শাম্মী আখতারের (১৮) প্রেমের সম্পর্ক ছিল ওই এলাকার গনি মিয়ার ছেলে আলকুম মিয়া (২৩), তমজির আলীর ছেলে বরকত হোসেন সুমন (ওরফে বক্কর) (২৫), মকবুল মিয়ার ছেলে মো. দীপু মিয়া, মুন্সিবাজার ইউনিয়নের সুনাটিকি গ্রামের ছকা মিয়ার ছেলে মাজহার মিয়া (২৫) ও একই এলাকার লন্ডনপ্রবাসী আছহাবের সঙ্গে। মাজহারের সঙ্গে ছিল গভীর সম্পর্ক। প্রেমিক দীপুর মাধ্যমেই প্রবাসী আছহাবের সঙ্গে সম্পর্ক হয় শাম্মীর। লন্ডনপ্রবাসী আছহাবের সঙ্গে সম্পর্ক হওয়ায় শাম্মীর সঙ্গে রাগারাগি হয় মাজহারের। দেড় মাস আগে লন্ডনপ্রবাসী আছহাব দেশে এলে মাজহারের সঙ্গে সম্পর্ক বন্ধ করে দেয় শাম্মী আখতার। আছহাব দেশে এসে শাম্মী আখতারকে জামা-কাপড় ও একটি আইফোন গিফট দেয়। এ কারণে শাম্মী তার পুরনো প্রেমিকদের তেমন পাত্তাই দিচ্ছিল না। বুধবার ওই এলাকার ওয়াপদা বাঁধে বসে মাজহার পরিকল্পনা করে শাম্মী আক্তারকে মেরে ফেলার। ওই পরিকল্পনায় তার সঙ্গে অংশ নেয় লোকমান ও বরকত। গত ১৮ই মে দুপুর ২টায় মাজহার শাম্মী আখতারকে ফোন দিয়ে বলে তার সঙ্গে কাজ আছে, রাতে সে সখন মিসড্‌কল  দেয় তখন সে যেন ঘর থেকে বের হয়ে আসে। কথা অনুযায়ী বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার সময় মাজহার শাম্মী আখতারকে মিসড্‌কল দিলে সে বেরিয়ে আসে। হত্যায় অংশ নেয়া বরকত আগে থেকেই মছকন মিয়ার আকাশি গাছের বাগানের দক্ষিণের পাশের পতিত জমিতে ছিল। পরে মাজহার ও শাম্মী সেখানে যায়। এরপর ঘটনাস্থলে যায় আলকুম। বরকত একটি সাদা পাউডারের প্যাকেট মাজহারের হাতে দেয়। ওই পাউডার মাজহার শাম্মী আখতারকে খাইয়ে দেয়। এতে শাম্মী আখতার সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলে। মাজহার তার টি-শার্ট খুলে শাম্মীর মুখ চেপে ধরে হত্যা করে।
আলকুমের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে হত্যার বিস্তারিত বর্ণনা দেয়া হলেও তাকে ধর্ষণ করা হয়েছে কিনা তা জানা যায়নি। হত্যার সময় ধর্ষণ করা হয়েছিল কিনা ময়নাতদন্তের আবেদনে জানতে চেয়েছে পুলিশ। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট ছাড়া এ বিষয়ে কিছু বলা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন রাজনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শ্যামল বণিক। এদিকে বরকত, দীপু ও মাজহারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেছে রাজনগর থানা পুলিশ।
এদিকে শাম্মী আখতার তার বান্ধবীকে দেয়া হোয়াটস্‌আপ চ্যাটের মাধ্যমে জানিয়ে ছিল ‘আলকুম আমারে (আমাকে) মারি লাইব (মেরে ফেলবে)’। ওই চ্যাটের সূত্রে লাশ উদ্ধারের সময়ই আলকুমকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। এর আগে শাম্মী আখতারের পিতা হারুন মিয়ার কথার ভিত্তিতে প্রথমে বরকত হোসেন সুমনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে মো. দীপু মিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তার বক্তব্যে অসংলগ্নতা পাওয়ায় তাদের আটক করা হয়। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে আলকুম হত্যার ঘটনা স্বীকার করে। পরে তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে হত্যার পরিকল্পনাকারী মো. মাজহার মিয়াকে রাতেই পুলিশ তার বাড়ি থেকে আটক করে। শনিবার রাতে পুলিশ হত্যার কাজে ব্যবহৃত মাজহারের টি-শার্ট উদ্ধার করে রাজনগর থানা পুলিশ।
রাজনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শ্যামল বণিক বলেন, আলকুমের দেয়া আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতেই উঠে এসেছে মূল পরিকল্পনাকারী ছিল মাজহার। বাকিদের ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে। রিমান্ড মঞ্জুর হলে তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে আসা হবে।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn