ওয়েছ খছরু : সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে হুমকির ঘটনায় ক্ষোভ বিরাজ করছে নগর ভবনে। বিষয়টি নিয়ে শনিবার রাতেই জরুরি বৈঠক করেছেন কাউন্সিলররা। তারা গতকাল দুপুরে নগর ভবনে কলম বিরতি কর্মসূচি পালন করেন। এ কর্মসূচিতে কাউন্সিলর , কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা দাবি করেছে- এ হুমকিতে শুধু মেয়র নয়, কাউন্সিলরসহ সিটি করপোরেশনের সব কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়েছে। এদিকে- মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে হুমকিদাতাকে খুঁজে বের করতে কাজ শুরু করেছে পুলিশ। ‘শাহীন পাগলা’ নামে ঢাকায় অবস্থানরত এক ব্যক্তির সন্ধান পাওয়া গেছে। ইতিমধ্যে মোবাইল ফোনে তার সঙ্গে কথা বলেছে পুলিশ। মোবাইলের সুইচ অন থাকায় মিডিয়া কর্মীরাও তার সঙ্গে কথা বলেছেন।

তবে- ও প্রান্ত থেকে অসংলগ্ন কথাবার্তা শোনা যায়। সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী দক্ষিণ কোরিয়ায় সফরে ছিলেন। গত বৃহস্পতিবার তিনি সিলেটে ফিরেন। তিনি দক্ষিণ কোরিয়ায় অবস্থানকালে সিলেটে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ হয়। সমাবেশে অনুপস্থিত থাকলেও সমাবেশকে ঘিরে প্রচারণায় মেয়র আরিফের অংশ গ্রহণ ছিল। তার পক্ষ থেকে বিভাগীয় সমাবেশকে স্বাগত ও সফলতা কামনা করে বিলবোর্ড সাঁটানো হয়। ব্যানার ও ফেস্টুনের আয়োজন করা হয়।

তবে- সমাবেশের দিন কে বা কারা আরিফুল হক চৌধুরীর ব্যানার ও ফেস্টুন সরিয়ে ফেলে। বিষয়টি নিয়ে বিএনপির ভেতরেও চাপা ক্ষোভ দেখা দেয়। এ ঘটনাকে ন্যক্কারজনক বলেও সিলেট বিএনপির শীর্ষ নেতৃবৃন্দ মন্তব্য করেন। এদিকে- দক্ষিণ কোরিয়া সফর শেষে গত বৃহস্পতিবার সিলেট ফিরেন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। ওই দিন রাতে তিনি সার্কিট হাউজে সিলেটে সফররত আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে দেখা করেন। এ সময় তিনি সিলেট বিমানবন্দর সড়কসহ নানা দুর্ভোগের বিষয়টি মন্ত্রীকে অবহিত করেন। এদিকে- শনিবার সকালে একটি গ্রামীণ ফোন নাম্বার ও একটি বাংলা লিংক নাম্বার থেকে ফোন করে মেয়র আরিফকে হুমকি দেয়া হয়। এ হুমকির ঘটনায় দুপুরে মেয়রের পক্ষে জনসংযোগ কর্মকর্তা শাহাব উদ্দিন শিহাব কোতোয়ালি থানায় জিডি করেন। জিডি করার পর পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করছে। গতকাল কোতোয়ালি থানার ওসি সেলিম মিয়া জানিয়েছেন- মেয়রকে হুমকি দেয়ার বিষয়টি তদন্ত করছে পুলিশ। শাহীন পাগলা নামের একজন ওই মোবাইল নম্বরটি রিসিভ করেছে। সে ঢাকা থেকে কথা বলছে। পুলিশ ঘটনার তদন্তের মাধ্যমে এর শেষ দেখতে চায় বলে জানান ওসি। এজন্য পুলিশ কাজ করছে বলে জানান। আরিফুল হক চৌধুরীকে মোবাইল নম্বরের হুমকিদাতার সেই নম্বরটি গতকাল পর্যন্ত সুইচ অন ছিল। সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে ফোন রিসিভ করা হয়।

এ সময় অপরপ্রান্ত থেকে শাহীন বলে পরিচয় দেয়া হয়। নিজেকে মাজার ভক্ত দরবেশ বলে পরিচয় দেয় শাহীন নামের ওই ব্যক্তি। মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে হুমকির ঘটনায় শনিবার রাতে নগরীর কুমারপাড়াস্থ মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর ব্যক্তিগত কার্যালয়ে সিসিকের কাউন্সিলরদের এক জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। প্যানেল মেয়র (১) তৌফিক বকস লিপনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় সিটি মেয়রকে হুমকি প্রদানের নিন্দা জানিয়ে হুমকিদাতাকে দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানান কাউন্সিলররা। কাউন্সিলররা বলেন, নগরবাসীর ভোটে নির্বাচিত মেয়রকে হুমকি প্রদান কার্যত নগরবাসীকেই হুমকি। একে হালকাভাবে নেয়ার কোনো সুযোগ নেই। হুমকির ঘটনায় থানায় সাধারণ ডায়েরি করার পরও পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় কাউন্সিলররা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন- এই ঘটনায় মেয়রসহ কাউন্সিলররা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। আমাদের ধারণা, এই হুমকির পেছনে বড় ধরনের এই গোষ্ঠি কাজ করছে। সিলেটের চলমান উন্নয়নকে রুখতেই তারা এ ষড়যন্ত্র করছে। তারা অবিলম্বে মেয়রের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিতেরও দাবি জানান। রাতের বৈঠকে সিদ্ধান্ত নিয়ে গতকাল দুপুরে সিলেট সিটি করপোরেশনের সকল কাউন্সিলর, কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দের উদ্যোগে নগর ভবনে ১ ঘণ্টার কলম বিরতি কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। রোববার দুপুর ২টা থেকে ৩টা পর্যন্ত নগর ভবন প্রাঙ্গণে এ কর্মসূচি পালন করা হয়।

এতে উপস্থিত ছিলেন সিলেট সিটি করপোরেশনের ২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর বিক্রম কর সম্রাট, ৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল কালাম আজাদ লায়েক, ৫নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর রেজওয়ান আহমদ, ৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফরহাদ চৌধুরী শামীম, ৮নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ইলিয়াসুর রহমান ইলিয়াস, ১০নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর তারেক উদ্দিন তাজ, ১১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর রকিবুল ইসলাম ঝলক, ১৫নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ছয়ফুল আমিন বাকের, ১৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর রাশেদ আহমদ, ১৯নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর এসএম শওকত আমীন তৌহিদ, ২৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোস্তাক আহমদ, ২৫নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর তাকবিরুল ইসলাম পিন্টু, ২৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র-১ তৌফিক বকস লিপন, ২৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. আজম খান, সংরক্ষিত আসনের ও প্যানেল মেয়র-২ এডভোকেট রোকসানা বেগম শাহনাজ, সংরক্ষিত আসনের বেগম সালমা সুলতানা, সংরক্ষিত আসনের কুলসুমা বেগম পপি, সংরক্ষিত আসনের মাসুদা সুলতানা, সংরক্ষিত আসনের শাহানা বেগম সানু, সংরক্ষিত আসনের নাজনিন আক্তার কণা, সংরক্ষিত আসনের রেবেকা বেগম লাকি, সিলেট সিটি করপোরেশনের সচিব মোহাম্মদ বদরুল হক, প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান, নির্বাহী প্রকৌশলী আলী আকবর, নির্বাহী প্রকৌশলী রুহুল আলম, হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা আ ন ম মনসুফ, প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. হানিফুর রহমান প্রমুখ।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn