যে কারণে জামায়াতের ব্যাপারে হার্ডলাইনে পুলিশ
২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর রায়ের পর দেশজুড়ে তান্ডব চালিয়েছিল জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীরা। এ ছাড়া একই বছর পেট্রোল বোমা সন্ত্রাসের ঘটনায় বিএনপির সঙ্গে অভিযুক্ত জামায়াত। ওই সময় পেট্রোল বোমা হামলা করে দেশে ভীতিকর অবস্থা তৈরি করা হয়েছিল। তবে কিছু দিন ধরেই মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত জামায়াতের প্রকাশ্য কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি নেই। নিকট ভবিষ্যতে তারা কোনো ধরনের প্রকাশ্য দলীয় কর্মকাণ্ডের ঘোষণাও দেয়নি। দলীয় নেতা-কর্মীদের গ্রেফতারের প্রতিবাদে মাঝমধ্যে রাজপথে ঝটিকা মিছিল করছে সংগঠনটি। এমন বাস্তবতায় হঠাৎ গত সোমবার রাতে উত্তরার একটি বাসা থেকে দলটির আমির মকবুল আহমাদ ও নায়েবে আমির মিয়া গোলাম পরওয়ার এবং সেক্রেটারি জেনারেলসহ ৯ জনকে গ্রেফতারের পর আবার আলোচনায় জামায়াত।
অভিযানের সঙ্গে সংশ্নিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, জামায়াত প্রকাশ্যে কোনো কর্মসূচি না দিলেও ভেতরে ভেতরে দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করার ছক কষছিল। চট্টগ্রামের জামায়াত নেতা সাবেক এমপি শাহজাহান চৌধুরী গত ৩ অক্টোবর দলটির আমির মকবুল আহমাদকে ৩৫ পৃষ্ঠার একটি চিঠি লেখেন। ওই চিঠি উত্তরার বাসা থেকে জব্দ করা হয়। সেখানে বলা হয়, ‘জামায়াতের সারা দেশের নেতা-কর্মীরা ঝিমিয়ে পড়েছে। তাদের উজ্জীবিত করা দরকার।’ রাজপথে কর্মসূচি দিয়ে রাস্তায় নামতে আমিরের দিকনির্দেশনা চাওয়া হয়েছে চিঠিতে। এ ছাড়া সাংগঠনিকভাবে দলটির নানা ধরনের দুর্বলতা ও আগামীর পরিকল্পনার ব্যাপারে বিশদ বর্ণনা রয়েছে শাহজাহান চৌধুরীর চিঠিতে।
পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, অতীত অভিজ্ঞতা থেকে তারা মনে করছেন, জামায়াত গোপনে সংগঠিত হয়ে আবার রাজপথে নৈরাজ্য সৃষ্টি করে দেশকে অস্থিতিশীল করতে চায়। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ডিসি (উত্তর) শেখ নাজমুল আলম বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জামায়াত নেতারা দাবি করেছেন, তাদের সাংগঠনিক কোন্দল ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে উত্তরায় সভা করছিলেন। তবে তথ্য রয়েছে, সেখানে তারা রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্র করছিলেন। জামায়াতের যেসব নেতা উত্তরায় জড়ো হন, তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা ও গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে। ফৌজদারি মামলার আসামিরা একত্রিত হয়ে একসঙ্গে বৈঠক করতে পারে না।
পুলিশের দায়িত্বশীল একাধিক কর্মকর্তা জানান, প্রধান বিচারপতি ও রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে জামায়াত কোনো নতুন ষড়যন্ত্র করছিল কি-না, তাও তাদের কাছে জানতে চাওয়া হয়। তবে এ ইস্যুতে ষড়যন্ত্রের কথা অস্বীকার করেন তারা। সম্প্রতি দেশে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে বলে স্বীকার করেন জামায়াত নেতারা। পুলিশের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, জামায়াতের আমিরসহ অন্য কেন্দ্রীয় নেতাদের জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ বেশ কিছু প্রশ্ন করে। সাঈদীর রায়ের পর দেশজুড়ে তাণ্ডবের দায় জামায়াত নেবে কি-না, জানতে চাওয়া হলে মকবুল আহমাদ বলেন, জামায়াতের যারা ওই রায়কে কেন্দ্র করে অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করেছিল, এর দায় তাদের ব্যক্তিগত। এর দায়-দায়িত্ব সংগঠন হিসেবে জামায়াত নেবে না। তবে রায়কে ঘিরে ধ্বংসাত্মক পরিস্থিতির পরিণতি জামায়াত বহন করছে।
পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, গ্রেফতারকৃত জামায়াত নেতাদের কাছ থেকে জব্দ মোবাইল ফোনে সিমকার্ড ছিল না। তাহলে কীভাবে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা করেন তারা- এমন প্রশ্নে জামায়াত নেতারা জানান, গ্রেফতার এড়াতে তারা মোবাইল সিমকার্ড ব্যবহার করেন না। যেখানে ‘ওয়াই-ফাই’ জোন আছে, সেখানে গিয়ে কেবল তারা পরস্পরের মধ্যে কথা বলেন। ডিবির একজন কর্মকর্তা জানান, জামায়াতের আমির মকবুল আহমাদের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত ৫টি মামলার গ্রেফতারি পরোয়ানার তথ্য পেয়েছে পুলিশ। তার মধ্যে রমনা থানার মামলা দুটি। কীভাবে এতদিন গ্রেফতার এড়িয়ে চলছিলেন- এমন প্রশ্নে মকবুল বলেন, তিনি দীর্ঘ দিন রাজধানীর আফতাবনগরে ছেলের বাসায় ছিলেন।
উত্তরায় অভিযানের পরপরই জামায়াতের বিবৃতিতে বলা হয়, দলীয় কর্মসূচি পরিচালনায় তারা দেশের আইন, সংবিধান ও প্রচলিত নিয়ম অনুসরণ করে চলে। দলের আমিরের নেতৃত্বে একটি ঘরোয়া বৈঠক চলার সময় সেখান থেকে নেতাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ছাড়া জামায়াতে ইসলামীর ওয়েবসাইটে এক বিবৃতিতে দলটির অন্যতম নায়েবে আমির মুজিবুর রহমান বলেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর জামায়াতে ইসলামীকে তার ভাষায় নেতৃত্বশূন্য করতে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তারই ধারাবাহিকতায় জামায়াত নেতাদের গ্রেফতার করা হয়েছে।